You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.28 | শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সম্মানে আয়োজিত ভোজসভায় সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধানমন্ত্রী এ এন কোসিগিন-এর ভাষণ থেকে - সংগ্রামের নোটবুক

১৯৭১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বরে মস্কোতে প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সম্মানে আয়োজিত ভোজসভায় সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধানমন্ত্রী এ এন কোসিগিন-এর ভাষণ থেকে

‘…এশিয়ায় শান্তি দৃঢ়তর করে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারত বিশ্বজুড়েও শান্তি দৃঢ়তর করছে। বিশ্ব রাজনীতি ও বিশ্ব অর্থনীতি উভয় ক্ষেত্রেই ঘটনাসমূহের মধ্যে আমাদের কালে পরস্পর-সম্পর্ক ও পরস্পর-নির্ভরতাকে—অতীতের সঙ্গে যার তুলনাই চলে না—নির্ধারণ করছে বহু উপাদান৷ একদিকে এ হলো সেই বৈপ্লবিক-কারিগরি বিপ্লবেরই ফল, যা বিশ্ব অর্থনৈতিক জীবনের আন্তর্জাতিকীকরণের প্রক্রিয়াকে অপরিমেয়ভাবে তীব্রতর করেছে। কিন্তু পৃথিবীতে যে সমস্ত শক্তি ভিন্ন ভিন্ন সমাজ-ব্যবস্থাসম্পন্ন রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থানের নীতিকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক সাধারণভাবে স্বীকৃত মানদণ্ডে পরিণত করার সপক্ষে এগিয়ে আসছে, তাদের সকলের শক্তি বৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান সংহতি এবং দৃঢ় সংসক্তিও কম তাৎপর্যপূর্ণ নয়।
পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাবলির সূত্রে ভারতীয় উপমহাদেশে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, তা সোভিয়েত সরকারকে উদ্বিগ্ন করছে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ঘটনাবলির ফলে উদ্ভূত প্রশ্নসমূহের জটিলতা আমরা পুরোপুরি বুঝতে পারছি। যে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ নিযুত নিযুত মানুষকে দেশ, জমি, জমি, সম্পত্তি ছেড়ে প্রতিবেশী ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছে, তাদের কাজকর্মের সাফাই গাওয়া অসম্ভব। পূর্ব পাকিস্তান থেকে জনগণের গণ-পলায়নের ব্যাখ্যা একটিই হতে পারে। সেটি হলো, সেখানে তাদের জন্য সৃষ্ট জীবনযাত্রার অসহনীয় অবস্থা।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঠেকানোই এখন কাজ। পরিস্থিতি সহজতর করার জন্য সর্বোপরি প্রয়োজন হলো এই যে, শরণার্থীদের স্বদেশে ফিরবার সুযোগ দিতে হবে। পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষকে তাদের এই মর্মে পূর্ণ গ্যারান্টি দিতে হবে যে, তাদের নির্যাতন করা হবে না এবং তারা পূর্ব পাকিস্তানে শান্তিতে বাস করার ও কাজ করার সুযোগ পাবেন। সব দেশের শান্তিকামী জনগণ, ভারত ও পাকিস্তানের সকল বন্ধু পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পূর্ব পাকিস্তানে এমন এক আশু রাজনৈতিক মীমাংসা প্রত্যাশা করেন, যা এখানকার জনসমষ্টির ন্যায়সঙ্গত স্বার্থকে বিবেচনার মধ্যে রাখবে। এখানকার স্বাভাবিক বিকাশকে সুরক্ষিত করবে এবং পাক-ভারত সম্পর্কের অধিকতর অবনতির বিপদ দূর করবে। আমরা স্থিরপ্রত্যয় যে, এরূপ দৃষ্টিভঙ্গি পাকিস্তানি জনগণের স্বার্থের সঙ্গে এবং এই অঞ্চলে শান্তির আদর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। এই সংকট মুহূর্তে উদ্ভূত উত্তেজনার উর্বর ক্ষেত্র নির্মূল করতে সর্বাপেক্ষা কার্যকরী ব্যবস্থাদি গ্রহণ করার জন্য আমরা প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের কাছে আবেদন রাখছি।
এই অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখার জন্য এবং সশস্ত্র সংঘর্ষ নিবারণ করার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন যথাসাধ্য করেছে ও করে চলেছে। আমাদের মনে হয়, শ্রীমতী প্রধানমন্ত্রী. আপনার সঙ্গে এই প্রশ্নে যে মত বিনিময় শুরু হয়েছে, তা থেকে দেখা যাচ্ছে, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারত এই অভীষ্ট সাধনের জন্য তাদের প্রয়াস সংহত করে চলবে।
এতে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে আরও এই কারণে যে, শান্তি ও প্রগতির জন্য সংগ্রামে ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের জনসাধারণের মধ্যে এরূপ সংহতি আগে আর কখনো ছিল না। আমাদের জনসাধারণের এই সংহতি এক বিরাট শক্তি। এই সংহতি বাড়বে ও দৃঢ়তর হবে এবং উন্নততর ভবিষ্যতের জন্য, পৃথিবীতে স্থায়ী শান্তির জন্য আমাদের জনসাধারণের অভিন্ন কামনাই এর গ্যারান্টি।’

সূত্র: বাংলাদেশের সংগ্রাম ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা