সোভিয়েত ইউনিয়নে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সফর উপলক্ষে
১৯৭১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর প্রচারিত সোভিয়েত- ভারত যুক্ত বিবৃতি থেকে
‘…এশিয়া পরিস্থিতির গতি-প্রকৃতির সেখানে বিদ্যমান উত্তেজনার ও সামরিক সংঘর্ষের ক্ষেত্রগুলোর আগ্রাসনের কার্যকলাপ বন্ধ ও রোধ করার এবং এশিয়া মহাদেশে শান্তির ভিত্তি সুদৃঢ় করার উপায় নিয়ে আলোচনার প্রতিই পক্ষদ্বয় তাদের প্রধান মনোযোগ নিবন্ধ করেছে।
পূর্ব পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ঘটনাবলির দরুন হিন্দুস্তান উপমহাদেশে যে গুরুতর পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, সে সম্পর্কে উভয় পক্ষই তাঁদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং ওই অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখার উদ্দেশ্যে তাঁদের প্রয়াস চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ়সংকল্প কথা ঘোষণা করেছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী গান্ধী সোভিয়েত পক্ষকে জানিয়েছেন যে, পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত ৯০ লক্ষাধিক শরণার্থী ভারতে গুরুতর সামাজিক ও রাজনৈতিক উত্তেজনার এবং অর্থনৈতিক চাপের সৃষ্টি করেছে। এর ফলে ভারতের সামাজিক-অর্থনৈতিক কর্মসূচী গুরুতরভাবে ব্যাহত হয়েছে।
সোভিয়েত পক্ষ পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত এই শরণার্থী প্রবাহের ফলে সৃষ্ট সমস্যার প্রতি ভারতের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির উচ্চ প্রশংসা করেছেন এবং ব্যাপকহারে শরণার্থী প্রবেশের ব্যাপারে বন্ধুভাবাপন্ন ভারতের সম্মুখে উপস্থিত অসুবিধাগুলোর বিষয়ে তাঁদের উপলব্ধির মনোভাব ব্যক্ত করেছেন।
ভারত সরকার পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে শরণার্থী প্রবাহ বন্ধ করার জন্য সকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে এবং যেসব শরণার্থী ইতোমধ্যেই ভারতে এসেছেন, তাঁরা অবিলম্বে নিজেদের দেশে যাতে ফিরে যান, তা সুনিশ্চিত করতে সম্পূর্ণ দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ বলে প্রধানমন্ত্রী যে বিবৃতি দিয়েছেন, সোভিয়েত পক্ষ তা বিবেচনার বিষয়ীভূত করেছেন।
পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাবলির ফলে উদ্ভূত শরণার্থী সমস্যা ও অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে সোভিয়েত পক্ষ তাঁদের সেই বক্তব্যেরই পুনর্ঘোষণা করছেন, যা ১৯৭১ সালের ২ এপ্রিলে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের কাছে সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বোচ্চ সোভিয়েতের সভাপতিমণ্ডলীর সভাপতি এন ভি পদগোর্নির আবেদনে বিবৃত হয়েছে।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর থেকে পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনা বিকাশের বিষয় খেয়ালে রেখে উভয় পক্ষই মনে করছেন, শান্তি বজায় রাখার স্বার্থেই পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ইচ্ছা, অলঙ্ঘনীয় অধিকার ও আইনসঙ্গত স্বার্থের প্রতি মর্যাদা দিয়ে সেখানে উদ্ভূত সমস্যাবলীর এক রাজনৈতিক মীমাংসায় উপনীত হওয়ার জন্য এবং শরণার্থীদের সম্মান ও মর্যাদা সুরক্ষিত থাকার মতো অবস্থায় তাদের দ্রুত ও নিরাপদে নিজেদের দেশে প্রত্যাবর্তনের জন্য জরুরি ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা প্রয়োজন।
ভারতীয় উপমহাদেশে সৃষ্ট পরিস্থিতির গুরুত্বের কথা বিবেচনার মধ্যে নিয়ে উভয় পক্ষই পরবর্তী সময়েও পারস্পরিক সংযোগ বজায় রেখে চলতে, এই সম্পর্কে উদ্ভূত বিষয়গুলো নিয়ে মত বিনিময় অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়েছেন।……
সূত্র: বাংলাদেশের সংগ্রাম ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা