You dont have javascript enabled! Please enable it!

দমনপীড়নের অবসানের জন্য সোভিয়েত শ্রমিকদের দাবি

পূর্ব পাকিস্তানের জাগরণের বিরুদ্ধে ঢালাও উৎপীড়নে সোভিয়েত জনগণ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষকে তাঁরা যুক্তির প্রতি কর্ণপাত করার এবং পূর্ব পাকিস্তানের দেশপ্রেমিকদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
মস্কো বৈদ্যুতিক যন্ত্রনির্মাণ কারখানা ‘ ডায়নামো’র শ্রমিকদের এক সভায় ফিটার আলেকজান্দার কারিশেভ বলেন, ‘আমরা পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি করছি, তাঁরা যেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের কণ্ঠস্বরে কর্ণপাত করে দেশে স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করেন, পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের আইনসঙ্গত স্বার্থকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়ে সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান অর্জনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।’
সভায় গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের কাজকে আমরা পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণের মৌলিক মানবিক অধিকারের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ বলে মনে করি।’ সভায় অংশগ্রহণকারীরা পূর্ব পাকিস্তানে ঢালাও উৎপীড়নের অবসান দাবি করেন এবং শরণার্থীদের যথাশীঘ্র সম্ভব স্বদেশে ফেরার মতো অবস্থা সৃষ্টি করতে বলেন।
মস্কোর লিখাচেভ অটো ওয়ার্কসে এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। ফিটার বোরিস কোরনেভ উপস্থিত সকলের মনোভাব প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা গভীর দুঃখের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা ও জননেতাদের ওপর নির্যাতনের খবর জেনেছি। আমরা জানতে পেরেছি যে সামরিক ট্রাইব্যুনাল আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমানের বিচারের আয়োজন করছেন। এই বিশিষ্ট প্রগতিশীল নেতা পাকিস্তানি জনগণ কর্তৃক আইনসঙ্গতভাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি যে আওয়ামী লীগের সভাপতি, গত বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সেই আওয়ামী লীগই দেশের জাতীয় পরিষদে এবং পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন দখল করেছিলেন।
তরুণ শ্রমিক ভিক্তর ফাদেয়েভ বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানের লক্ষ লক্ষ মানুষকে স্বদেশ ছেড়ে বিদেশে আশ্রয় গ্রহণ করতে হয়েছে।

সভায় বিভিন্ন বক্তা বলেন, ‘পূর্ব পাকিস্তানের শান্তিপ্রিয় জনসাধারণের ওপর ঢালাও উৎপীড়নের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ জানাই। দেশে উদ্ভূত সমস্যাবলি সমাধানের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন এবং সমস্ত শরণার্থী যাতে স্বগৃহে প্রত্যাবর্তন করতে পারেন, সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।’
সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্রেতা সমবায় সমিতিগুলোর কেন্দ্রীয় ইউনিয়ন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা ও জননেতাদের ওপরে নির্যাতন এবং সেখানকার জনসাধারণের বিরুদ্ধে ব্যাপক উৎপীড়ন সম্পর্কে এক বিবৃতি প্রচার করেছেন।
সোভিয়েত ইউনিয়নের সমবায় সমিতিগুলোর ৬ কোটি সদস্যের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ইউনিয়নের পর্ষদ পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের কাছে আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমানের লজ্জাজনক বিচার বন্ধ করার দাবি করেছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, সমবায় সমিতিগুলোর সদস্যরা পৃথিবীর মানুষের উদ্দেশে আহ্বান জানাচ্ছেন, তাঁরা যেন পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতা ও উচ্ছৃঙ্খলতার নিন্দা করেন এবং পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ও সমবায় সমিতিগুলোর সদস্যদের অধিকার রক্ষার সপক্ষে এগিয়ে আসেন।
মস্কোর তিউরুপ ময়দা কলের শত শত শ্রমিক- কর্মচারীর এক সভায় রিপেয়ার শপের শ্রমিক এ ভি দুর্দোভ বলেন, ‘আমরা সোভিয়েত জনগণ উদ্বেগের সঙ্গে পাকিস্তানের বিয়োগান্ত ঘটনাবলি লক্ষ করছি। সে দেশে পাইকারী পীড়ন, গণতন্ত্রের প্রাথমিক নীতিগুলো লঙ্ঘন পূর্ব পাকিস্তানের নিযুত নিযুত মানুষকে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। আমরা দাবি করছি, অবস্থা স্বাভাবিক করা হোক। পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল নেতাদের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন বন্ধ করা হোক।’
লেনিনগ্রাদের ক্রাসলেগভার্দেয়েস ফার্মের শ্রমিকদের এক সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত এক প্রস্তাবে বলা হয়েছে: ‘আমরা দাবি করছি যে, পাকিস্তান সরকার অবিলম্বে শান্তিপূর্ণ জনসমষ্টির ওপর দমনপীড়ন বন্ধ করুক, নিযুত নিযুত শরণার্থীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রয়োজনীয় অবস্থা সৃষ্টি করুক।’
শান্তিপূর্ণ জনসমষ্টির ওপর পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের নির্মম মনোভাবের বিরুদ্ধে, প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতাদের ওপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে ক্রুদ্ধ প্রতিবাদ জানান সমাজতান্ত্রিক শ্রমবীর দলনেতা ভি ভি পেদ্রোভ, ফিটার ভি এ বুকানোভ, ফার্মের কমসোমল কমিটির সদস্য আনাতোলি উমাস্কি, অ্যাসেম্বলি শপের ভি ভি বিস্ত্রোভা ও ইঞ্জিনিয়ার ভি এ মিখাইলোভা৷
ভোইকভ ঢালাই লোহা ফাউন্ড্রির প্রতিটি শপ, বিভাগ ও সার্ভিসের প্রতিনিধিদের এক সভায় পূর্ব পাকিস্তানে গণ- পীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয়। সভার উদ্বোধন করেন ট্রেড ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি এ বেস্পালোভ। ফিটার এস গুমেনি, টেকনিক্যাল রেটিং ব্যুরোর প্রধান আই পোরপেকিন, ইলেকট্রিক্যাল শপের শ্রমিক ও যুব কমিউনিস্ট লীগের কমিটির সদস্য জি জাইৎসেভা প্রমুখ বক্তারা পূর্ব পাকিস্তানের সন্ত্রাস ও দমনপীড়ন বন্ধ করার এবং উদ্ভূত সমস্যার রাজনৈতিক মীমাংসা অর্জনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
অক্টোবর বিপ্লবের নামানুসারে রাখা তাসখন্দ ডিজেল ইঞ্জিন ও গাড়ি মেরামত কারখানার এক বিরাট সভায় শ্রমিকরা পূর্ব পাকিস্তানে শান্তিপূর্ণ জনসমষ্টির ওপর পাইকারী দমনপীড়নে এবং দেশভক্তদের ওপর নির্যাতনে গভীর আশঙ্কা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
মিন্স্ক মোটর কারখানার শ্রমিকদের এক সভায় গৃহীত প্রস্তাবে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের কাছে বিভিন্ন দেশের জনগণের দাবিতে কর্ণপাত করতে এবং পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ইচ্ছা, অধিকার ও আইনসম্মত স্বার্থকে যথোপযুক্ত বিবেচনার মধ্যে রেখে সমস্যার রাজনৈতিক মীমাংসা অর্জনের জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
কুইবিশেভে চতুর্থ বিয়ারিং কারখানায় অনুষ্ঠিত এক বিরাট সভায় দমনপীড়ন বন্ধ করার জন্য এবং পাকিস্তানের প্রগতিশীল নেতাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করার জন্য পাকিস্তান সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়।
আলমা-আতা ফাউন্ড্রি ও মেশিন শপের এক সভায় শ্রমিকরা পাকিস্তানের ঘটনাবলি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। প্রস্তাবে আশা প্রকাশ করা হয়েছে যে, দেশে ন্যায়বিচার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ জরুরি ব্যবস্থাদি গ্রহণ করবেন।

সূত্র: বাংলাদেশের সংগ্রাম ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!