পিকিং এবং ভারতীয় উপমহাদেশে সংঘর্ষ
ওয়াই মালিনকিন
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের ব্যাপারে উত্তেজনা ঘোরালো হয়ে ডিসেম্বরের গোড়ায় এক নাটকীয় সংঘর্ষে পরিণত হলো। এই ঘটনাবলির প্রধান কারণ হলো পূর্ব পাকিস্তানের জনসমষ্টির ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক নির্যাতন ও নিষ্ঠুর দমনপীড়ন। এদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ভারতে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়।
মানবিক মূলনীতি দ্বারা চালিত হয়ে এবং পাকিস্তানের জনগণের শান্তি ও হিত কামনা করে সোভিয়েত সরকার একাধিকবার প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও পাকিস্তানি সরকারের কাছে পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি সম্পর্কে উৎকণ্ঠার মনোভাব প্রকাশ করেছেন। সোভিয়েত পক্ষ এই দৃঢ় প্রত্যয় প্রকাশ করেছে যে, রাজনৈতিক মীমাংসার একটি বাস্তবোচিত উপায় রয়েছে। সেটি হলো দমনপীড়ন পরিহার করা। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর মাসে আইন সভাগুলোর নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের সর্বসম্মত সমর্থনপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের নেতাদের মুক্তি দেওয়া, পূর্ব পাকিস্তানিদের ইচ্ছার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ মীমাংসায় পৌছাবার জন্য অবিলম্বে সরকার ও জনগণের প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা পুনরায় শুরু করা এবং যেসব শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যাবর্তনের উপযোগী অবস্থা সুনিশ্চিত করা। সামরিক সংঘর্ষের ঠিক আগেই সোভিয়েত নেতৃবৃন্দ ইয়াহিয়া খানকে জানিয়েছিলেন যে, ভারতের ওপর পাকিস্তানের সশস্ত্র আক্রমণকে সোভিয়েত ইউনিয়ন দৃঢ়ভাবে নিন্দা করবে।
তবুও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে বদ্ধপরিকর পাকিস্তানি নেতারা তাঁদের প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে সামরিক প্রস্তুতি বাড়িয়ে যেতে থাকলেন এবং সীমান্তের পরিস্থিতিকে যথাসাধ্য তাতিয়ে যেতে থাকলেন। জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল উ থান্ট-এর একটি রিপোর্টে বিবৃত কিছু কিছু ঘটনা থেকে দেখা যায়, পাকিস্তানই ভারতের বিরুদ্ধে সামরিক তৎপরতা শুরু করেছিল।
এই পরিস্থিতিতে, একেবারে সোভিয়েত সীমান্তের নিকটেই যে ঘটনা রূপ নিচ্ছিল ও তার নিরাপত্তার বিপদ সৃষ্টি করছিল, সোভিয়েত ইউনিয়ন তাতে উদাসীন থাকতে পারত না। ৬ ডিসেম্বর তারিখে সোভিয়েত পত্র-পত্রিকায় তাস-এর একটি বিবৃতি প্রকশিত হয়। এতে জোর দিয়ে বলা হয় যে, সোভিয়েত ইউনিয়ন অবিলম্বে রক্তপাত বন্ধ করার এবং পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও স্বার্থের ভিত্তিতে সেখানে রাজনৈতিক মীমাংসার দাবি জানাচ্ছে।
ন্যায়ের ভিত্তিতে এবং জাতিসংঘের সাহায্যে সংঘর্ষের রাজনৈতিক মীমাংসার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রচুর চেষ্টা করেছিল। নিরাপত্তা পরিষদে সোভিয়েত ও পোলিশ প্রতিনিধিগণ প্রস্তাব করেছিলেন যে, পরিষদ পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি সম্পর্কে এবং পূর্ব পাকিস্তানি শরণার্থীদের দশা সম্পর্কে নিউ ইয়র্কে উপস্থিত বাংলাদেশ জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের প্রতিনিধিদের বক্তব্য শ্রবণ করুক। কিন্তু আমেরিকার নেতৃত্বে এক দল দেশ সোভিয়েত প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এবং এইভাবে যে প্রকৃত কারণগুলো ভারতীয় উপমহাদেশে বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল, সেগুলোর সর্বাঙ্গীণ ও বিষয়গত বিচার-বিবেচনায় বাধা দিয়েছিল।
আমেরিকান প্রতিনিধির সঙ্গে একযোগে লোকায়ত্ত চীনের প্রতিনিধি নিরাপত্তা পরিষদে বাংলাদেশের মুখপাত্রদের আমন্ত্রণ করার বিরোধিতা করেছিলেন, তিনি অবজ্ঞাসূচকভাবে তাঁদের ‘বিদ্রোহী’ আখ্যা দেন। এইভাবে তিনি পুনরায় আমেরিকান প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন, আমেরিকান খসড়া প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন। সোভিয়েত প্রতিনিধি ওয়াই এ মালিকের মতে এই প্রস্তাবটি আলোচ্য সমস্যার প্রতি আমেরিকার একেবারেই একপেশে মনোভাবকে প্রতিষ্ঠিত করছে। এমনকি ব্রিটেন ও ফ্রান্স পর্যন্ত এই খসড়াকে সমর্থন করতে সাহস করেনি।
চীনা প্রতিনিধির এরূপ অবস্থানের একটি কারণ ছিল। জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের সমর্থনে মাওবাদীদের বাগাড়ম্বরপূর্ণ বিবৃতিসমূহ তাদের বাস্তব কাজের জাজ্বল্যমান পরিপন্থী হবার ঘটনা এটিই প্রথম ছিল না। পিকিংয়ের যে নেতারা নিজেদের লক্ষ্য ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে অগ্রসর হন, তাঁরা প্রায়শই মুক্তির জন্য সংগ্রামরত জনসাধারণের স্বার্থের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেন এবং এই জনসাধারণের শত্রুদের পক্ষাবলম্বন করেন। ১৯৬৫ সালে ইন্দোনেশিয়ায় রক্তাক্ত ঘটনাবলি চলাকালে এ রকমটিই ঘটেছিল। চীনা নেতারা পূর্ব পাকিস্তানের নিযুত নিযুত শরণার্থীদের শোকাবহ ভাগ্য সম্পর্কেও উদাসীন ছিলেন। জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের প্রতি সমর্থন, স্বাধীনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য সংগ্রামরত জনসাধারণের সঙ্গে সংহতি সম্পর্কে মাওবাদীদের চটকদার স্লোগানের আসল চেহারা এই।
বর্তমানে লোকায়ত্ত চীনের সরকার ও সমগ্র চীনা প্রচারযন্ত্র পরিস্থিতির জন্য ভারতকে দোষী করার চেষ্টা করছে। কেন চীন ভারত সরকারের প্রতি এত ভয়ঙ্কর আক্রমণ চালাচ্ছে এবং একই সময়ে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের পক্ষ সমর্থন করেছে? এই প্রশ্নের জবাব রয়েছে চীনা নেতাদের অনুসৃত পররাষ্ট্র নীতির নির্যাসের মধ্যে—যাঁরা ভিন্ন ভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে উত্তেজনা ঘোরালো করে তোলার জন্য কাজ করেন—এবং তাপ পারমাণবিক যুদ্ধসহ যে কোনো যুদ্ধে হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে এঁদের নির্মম ঔদাসীন্যের মধ্যে। পারমাণবিক যুদ্ধের হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে মাও সে-তুঙ প্রচণ্ড মানবদ্বেষী বক্তব্য রেখেছেন।
স্মরণ করা যেতে পারে যে, সেই ১৯৬৫ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কেও অবনতির সময়—যার ফলে কচ্ছের রান ও কাশ্মীরে সামরিক সংঘর্ষ ঘটেছিল—পিকিং এক নগ্ন প্ররোচনামূলক ভূমিকা পালন করেছিল। মাওবাদীরা তাসখন্দে ভারত-পাক আলোচনার তীব্র বিরোধিতা করেছিল। এই আলোচনার উদ্যোক্তা ও মধ্যস্থ ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। এ কথা সুবিধিত যে, চীনা কূটনীতিকদের বিরোধিতা সত্ত্বেও এই আলোচনা সাফল্যমণ্ডিত হয়েছিল এবং সেইসময় ভারতীয় উপমহাদেশে যুদ্ধের বিপদ দূরীভূত করতে সাহায্য করেছিল।
এ বছর নভেম্বর-ডিসেম্বরেও অর্থাৎ বর্তমান ভারত- পাকিস্তান সংঘর্ষের আগে ও পরে চীনা নেতারা একটি উসকানিমূলক অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। নভেম্বর মাসে ইয়াহিয়া খানের দূত ভুট্টোর নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদল পিকিংয়ে উপস্থিত হয়। বিমানবাহিনীর প্রধান সেনাপতি ও সেনানী মণ্ডলীর অন্যান্য সদস্যসহ প্রধানত পাকিস্তানি সামরিক নেতাদের নিয়ে এই প্রতিনিধিদলটি গঠিত ছিল। এবার আলাপ-আলোচনার বিষয়টি সবার কাছে পরিষ্কার ছিল। নভেম্বরের শেষদিকে ইরানি সংবাদপত্র এত্তেলাত লিখেছিল যে, পিকিংয়ের নেতারা পাকিস্তানের নেতাদের আশ্বাস দিয়েছেন যে, ভারতীয় উপমহাদেশে যুদ্ধ বাধলে চীন হাতপা গুটিয়ে থাকবে না।
বিদেশি পত্র-পত্রিকা সংবাদ দিয়েছে যে, ১৯৬৫ সালের পর থেকে পিকিং পাকিস্তানকে ২৫ কোটি ডলার মূল্যের সাহায্য, প্রধানত সামরিক উদ্দেশ্যে, দিয়েছে এবং ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর মাসে ইয়াহিয়া খানকে আরও ২০ কোটি ডলার দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। চীন পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক বিমানকে তার ভূখণ্ডের ওপর দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে উড়ে যেতে দিয়েছে। পাকিস্তানে মেশিনগান, স্বয়ংক্রিয় রাইফেল, মর্টার ও অন্যান্য ধরনের অস্ত্রের প্রধান জোগানদার চীন।
সংঘর্ষ শুরু হবার পর চীন ভারতকে সরাসরি এই হুমকি দিয়েছিল যে, এইসব ঘটনার পরিণাম শুভ নয়’। ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষকে কাজে লাগিয়ে মাওবাদীরা পুনরায় সোভিয়েতবিরোধী প্রচারের হট্টগোল তুলেছিল। এবার জাতিসংঘের মঞ্চ থেকেও বিকট সোভিয়েতবিরোধী আক্রমণ চালানো হয়৷
চীনের নেতাদের এই গাত্রদাহের কারণ কী? সিনহুয়া এজেন্সির ৫ ডিসেম্বর তারিখের সংবাদে প্রকাশ, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের কাছে প্রেরিত সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বোচ্চ সোভিয়েতের সভাপতিমণ্ডলীর সভাপতি এন ভি পদগোর্নিও সুবিদিত বাতাটি (এতে রাজনৈতিক মীমাংসা খুঁজে বের করার আবেদন জানানো হয়েছিল) এবং সোভিয়েত-ভারত শান্তি, মৈত্রী ও সহযোগিতার চুক্তিটিই মাওবাদীদের ক্রোধের কারণ।
পূর্ব পাকিস্তানের নিযুত নিযুত মানুষ যখন পাকিস্তানি সামরিক কর্তৃপক্ষের নৃশংস সন্ত্রাসের শিকার হয়েছিলেন, তখন তাঁদের ভাগ্য সম্পর্কে চীনা নেতারা উদাসীন ছিলেন। অথচ পিকিং ভারতের ওপর পূর্ব পাকিস্তানিদের ভুলিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বলে দোষারোপ করতে কসুর করেনি। এতে নতুন কিছুই নেই। তাঁরা এ কাজ করেছেন আগেও, যখন বিভিন্ন সময়ে তিব্বত ও সিনকিয়াংয়ের জনগণ দলে দলে স্বদেশ ছেড়ে ভারত বা সোভিয়েত ইউনিয়নে চলে গিয়েছিলেন, চীনা নাগরিকরা অনবরত ব্রিটিশ উপনিবেশ হংকংয়েও পালিয়ে যাচ্ছেন। একথা সত্যি, এ ব্যাপারে পিকিং ব্রিটিশ সরকারের কাছে কোনো দাবি জানায়নি। কিন্তু একথা সবার কাছে পরিষ্কার যে, পাকিস্তান ও চীন উভয় স্থানেই সুন্দর জীবন সেখানকার জনগণকে স্বদেশ ত্যাগে বাধ্য করেনি। মাওবাদীদের যুক্তি অনুসারে এটাই দাঁড়াচ্ছে যে, প্যালেস্টাইন উদ্বাস্তুরা জন্মভূমি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন ইসরাইলি আগ্রাসনকারীদের দ্বারা নয়—তাঁদের ‘ভুলিয়ে নিয়ে গেছে’ আরব দেশগুলো। কিন্তু কেউ এ ধারায় চিন্তা করেন না, কারণ ঘটনা সম্পূর্ণ বিপরীত।
লোকায়ত্ত চীনের নেতারা ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানিদের ইচ্ছাকে অস্বীকার করেছেন। একই সময়ে তাঁরা পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের কাজকে অনুমোদনের চোখে দেখেছেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে শুরু করে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে সাত কোটি জনসমষ্টির এবং মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে অঘোষিত যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছিল। আর এখন যখন জনগণের ইচ্ছার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশের জনগণতান্ত্রিক সরকার গঠিত হয়েছে, তখন মাওবাদীরা জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের বিরুদ্ধে কাদা ছুঁড়তে চেষ্টা করছে এবং পূর্ব পাকিস্তানে নবপ্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রশক্তিকে মাঞ্চুকুওর পুতুল রাষ্ট্রের সঙ্গে তুলনা করছে।
এটা খুবই স্পষ্ট যে, পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদী বৃহৎ শক্তিসুলভ পরিকল্পনা দ্বারা চালিত হয়ে পিকিং প্রতিক্রিয়াশীল রাজগুলোর সঙ্গে এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও জনগণের ইচ্ছা দমনের পদ্ধতির সঙ্গে আত্মীয়তা অনুভব করছে।
১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে: ‘চীনের মাওবাদী নেতৃত্বের কর্মনীতি এবং নিরাপত্তা পরিষদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে যোগসাজসে তার কলঙ্কজনক ভূমিকা দেখিয়ে দিচ্ছে আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের ভাবাদর্শ ও মূলনীতি থেকে সে কতদূর সরে গেছে।’
বহু দেশের কমিউনিস্ট ও ওয়ার্কার্স পার্টির পত্র-পত্রিকায় বলা হয়েছে যে, মাওবাদীদের সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদী অবস্থান সাড়ে সাত কোটি মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের জন্য সংগ্রাম সম্পর্কে বৃহৎ শক্তিসুলভ ঔদাসীন্য দেখিয়েছে এবং প্রলেতারীয় একনায়কত্বের আদর্শের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
ভারত-পাক সংঘর্ষ সম্পর্কে সোভিয়েত ইউনিয়নের অবস্থানের বৈশিষ্ট্য হলো সুসঙ্গত ও নীতিনিষ্ঠ মনোভাব। ৭ ডিসেম্বর পোলিশ ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স পার্টির ষষ্ঠ কংগ্রেসে প্রদত্ত ভাষণে সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এল আই ব্রেঝনেভ বলেছেন: ‘কয়েক দিন আগে এশিয়ার দুটি প্রতিবেশী দেশের মধ্যে যে সামরিক সংঘর্ষ বেঁধে গেছে, সে কথা জেনে এবং যেসব ঘটনা এই সংঘর্ষের উৎস—পূর্ব পাকিস্তানের জনসমষ্টির ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত অধিকারের ওপর রক্তাক্ত দমনপীড়ন, এক কোটি শরণার্থীর ট্রাজেডি—তার কথা জেনে শান্তি ও জাতিসমূহের মুক্তির সমর্থক অন্য সকলের মতোই আমরা অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছি। সোভিয়েত ইউনিয়ন এই রক্তপাত বন্ধের দৃঢ়ভাবে পক্ষপাতী; বাইরের শক্তিগুলোর কোনোরূপ হস্তক্ষেপ ছাড়া, জনসাধারণের ন্যায়সঙ্গত অধিকারকে যথোপযুক্ত বিবেচনার মধ্যে রেখে সেখানে উদ্ভূত সমস্যাদির শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক মীমাংসার দাবি করছে এবং সেই এলাকায় স্থায়ী ও ন্যায্য শান্তির সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির দাবি করছে।’
এপিএন
সূত্র: বাংলাদেশের সংগ্রাম ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা