You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.26 | ভারত-উপমহাদেশে শান্তি দরকার - এ মাসলেন্নিকোভ ও ভি শুরিগিন - সংগ্রামের নোটবুক

ভারত-উপমহাদেশে শান্তি দরকার
এ মাসলেন্নিকোভ ও ভি শুরিগিন
প্রাভদার সংবাদদাতা

সংবাদ সরবরাহ প্রতিষ্ঠানগুলো ইদানীং ভারত উপমহাদেশে ক্রমেই বেশি ভয়াবহ ঘটনাবিকাশের খবর দিচ্ছে। যেমন, বলা হচ্ছে যে, ভারত-পাক সীমান্তের উভয় দিকেই নিয়মিত সৈন্যদের বিরাট বিরাট বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এবং প্রতিদিনই উভয়পক্ষে গোলাগুলি বর্ষণ চলছে, তাতে ব্যবহৃত হচ্ছে ভারী গোলা ও মর্টার এবং তার ফলে বেশ কিছু মানুষ, এমনকি অসামরিক ব্যক্তিরাও হতাহত হচ্ছেন। পরিস্থিতির এতো অবনতি হয়েছে যে, পৃথিবীর এই অঞ্চলে শান্তিকে তা বিপন্ন করে তুলেছে।
পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক সংকটের প্রধান কারণ হলো—গত ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত প্রথম সাধারণ নির্বাচনের নির্বাচিত অসামরিক প্রতিনিধিত্বমূলক সংস্থার হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে পাকিস্তানি সামরিক কর্তৃপক্ষের অস্বীকৃতি। নির্বাচনের সময়ে এবং নির্বাচনের পরে গণ-বিক্ষোভের সময়েও পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ সুস্পষ্টভাবে দেখিয়েছেন যে, তাঁদের বিধিসম্মত অধিকার ও গণতান্ত্রিক আশা-আকাঙ্ক্ষাকে মর্যাদা দেওয়া হোক—এই তাঁরা চান। কিন্তু জনমতের প্রতি কর্ণপাত করার পরিবর্তে পাকিস্তানি সামরিক কর্তৃপক্ষ সশস্ত্র দমননীতি ও ব্যাপক উৎপীড়নের মধ্য দিয়ে সেই রাজনৈতিক সংকট থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজে বার করতে চেষ্টা করলেন।
অসামরিক ও নিরস্ত্র জনসাধারণের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া হলো সেনাবাহিনী, গোলন্দাজ বাহিনী ও ট্যাঙ্ক। প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণে জানা যায়, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে কোনো সুরক্ষিত এলাকায় ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়নি কিংবা ‘শত্রু’-অবরুদ্ধ কোনো দুর্গ দখল করতে হয়নি। কামানের ভারী ভারী গোলা বর্ষিত হয়েছে স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর, ট্যাঙ্কগুলো চলার পথে ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে চাষীর কুঁড়েঘর আর শহরের সাধারণ বাসিন্দাদের ঘর-বাড়ি। তাই এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই যে, লক্ষ লক্ষ পূর্ব পাকিস্তানিকে বাধ্য হয়ে তাঁদের ঘরবাড়ি ফেলে স্বদেশ থেকে পালিয়ে যেতে হয়েছে নিজেদের প্রাণ বাঁচাবার জন্য। যাঁরা দমননীতির সাফাই গাইবার চেষ্টা করেন, তাঁরা আজ যাই বলুন না কেন,সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে আসা শরণার্থীদের সংখ্যাই যথেষ্ট বাঙ্ময়। পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসীদের প্রতি সাতজনের মধ্যে একজন ভারতে পালিয়ে গেছেন। তাঁরা যদি তাঁদের নিজেদের দেশে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারতেন, তাহলে লক্ষ লক্ষ মানুষ নিশ্চয়ই বহু পুরুষের চেষ্টালব্ধ ঘরবাড়ি, জমিজমা ও সম্পত্তি ফেলে দিয়ে আরেক দেশে পালিয়ে যেতেন না।
পূর্ব পাকিস্তানের ভাগ্যে এই নিদারুণ ঘটনায় সোভিয়েত জনগণের গভীর সহানুভূতির জাগ্রত হয়েছে। পৃথিবীতে সর্বপ্রথম যে রাষ্ট্রগুলো পাকিস্তানের নেতাদের যুক্তির প্রতি কর্ণপাত করতে এবং অসামরিক জনসাধারণের বিরুদ্ধে উৎপীড়ন বন্ধ করতে আহ্বান জানিয়েছিল, সোভিয়েত ইউনিয়ন হলো তাদের অন্যতম।
সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বোচ্চ সোভিয়েতের সভাপতিমণ্ডলীর সভাপতি নিকোলাই পদগোর্নি গত ২ এপ্রিল ইয়াহিয়া খাঁর কাছে প্রেরিত বার্তায় বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট মহাশয়, সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বোচ্চ সোভিয়েতের সভাপতিমণ্ডলীর পক্ষ থেকে আপনাকে কিছু বলা আমাদের কর্তব্য বলে মনে করি। পূর্ব পাকিস্তানে রক্তপাত বন্ধ করার জন্য, সেখানকার মানুষের ওপর নিপীড়নের অবসান ঘটাবার জন্য এবং শান্তিপূর্ণ মীমাংসার উপায় উদ্ভাবনের জন্য অত্যন্ত জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আপনাকে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি।’
সোভিয়েত জনমত রাজনৈতিক সন্ত্রাস অভিযানের নিন্দা করেছে কঠোরভাবে এবং বিধিসম্মত উপায়ে নির্বাচিত জনগণের প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে, সর্বোপরি আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলার নিন্দা করেছে। সেইসঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতের সরকার ও জনগণের মানবতাবাদী অবস্থানের উচ্চ প্রশংসা করে, কারণ তাঁরা প্রায় ১ কোটি পূর্ব পাকিস্তানি শরণার্থীর আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছেন এবং তাদের খাদ্যদ্রব্য, কাপড়চোপড়,, চিকিৎসাগত সাহায্য প্রভৃতি জোগাবার বিরাট বোঝা বহন করছেন।
সোভিয়েত সংবাদপত্র ‘প্রাভদা’, ‘ইজভেস্তিয়া ও অন্যান্য সোভিয়েত পত্র-পত্রিকা একেবারে শুরু থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাবলি সম্পর্কে পাঠকদের অবহিত রেখেছেন। সোভিয়েত পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে অজস্র প্রবন্ধ ও ভাষ্য, রিপোর্তাজ ও প্রেরিত সংবাদ—তাতে পরিবেশিত হয়েছে স্বদেশ থেকে সাময়িকভাবে চলে-আসা লক্ষ লক্ষ পূর্ব পাকিস্তানিকে সাহায্য করার জন্য ভারতের সরকার, বিভিন্ন জনহিতব্রতী প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ মানুষের নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টার বিশদ বিবরণ।
এই সমস্যা ভারতের সামনে যেসব জটিলতা উপস্থিত করেছে, সে সম্পর্কে সোভিয়েত জনগণ সচেতন। তার ফলে পূর্ব পাকিস্তানি শরণার্থীদের দুর্দশা লাঘবের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন বৈষয়িক সাহায্য দিয়েছে। সোভিয়েত সংগঠনগুলো ভারতে খাদ্যদ্রব্য, কাপড়চোপড় ও ওষুধপত্র পাঠিয়েছে; এয়ারোফ্লোৎ-এর বিমান ভারতের আরো ভেতর দিকে শরণার্থীদের নিয়ে যাবার কাজে সাহায্য করেছে।
ভারতের এবং অন্য বহু দেশের নেতাদের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত না হয়ে পারা যায় না যে, পূর্ব পাকিস্তানি শরণার্থীদের সমস্যাটি আয়তন ও প্রকৃতি উভয় দিক দিয়েই এক আন্তর্জাতিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। ব্যাপারটা শুধু এই নয় যে, এইসব লক্ষ লক্ষ মানুষের—যারা ভারতীয় নয়—তাদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের কর্মসূচীগুলো পূরণ করার উদ্দেশ্যে নির্ধারিত বিরাট বৈষয়িক সম্পদকে ব্যবহার করতে হচ্ছে। পূর্ব পাকিস্তানি শরণার্থীদের ব্যাপক সংখ্যায় ভারতে আগমন এবং তাদের পেছনে পাকিস্তানি সেনা-ইউনিটগুলোর হানা দুটি রাষ্ট্রের মধ্যেকার সম্পর্কের ক্ষেত্রে অবশ্যম্ভাবীরূপেই ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা সৃষ্টি করে এবং তাদের মধ্যে এক সামরিক সংঘর্ষের প্রত্যক্ষ বিপদ উপস্থিত করে।
এ কথা প্রমাণ করার কোনা দরকার নেই যে, ভারত ও পাকিস্তানের জনগণ শান্তিলাভে আগ্রহী। একমাত্র শান্তিপূর্ণ বিকাশের অবস্থাতেই এই দু দেশের প্রধান প্রধান সামাজিক- অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো সমাধান করা সম্ভব— যেমন উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যবস্থা কার্যকর করা, জীবনমান উন্নয়ন, বেকারত্ব দূরীকরণ, সাংস্কৃতিক স্তর উন্নত করা, সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের গণতন্ত্রীকরণ প্রভৃতি। সশস্ত্র সংঘর্ষের পরিণতি হবে অবর্ণনীয় দুঃখকষ্ট, বৈষয়িক মূল্যমানের বিনাশ এবং মানুষের প্রাণহানি–যার পরিমাণ আজই অনুমান করা দুঃসাধ্য। একথা ভুলে গেলে চলবে না যে, আধুনিক সমরোপকরণের বিধ্বংসী ক্ষমতা এতদূর বেড়ে গেছে যে, রণক্ষেত্রের সম্মুখভাগ ও পশ্চাৎভাগের মধ্যকার প্রভেদ নিশ্চিহ্ন হয়েছে। এমতাবস্থায়, এই দেশগুলো এখন যেসব অসুবিধা ভোগ করছে, এক সশস্ত্র সংঘর্ষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ফল-পরিণতিগুলো তার চেয়ে গুরুতর হতে পারে।
এরূপ ঘটনাপ্রবাহের সমস্ত রাজনৈতিক ফল-পরিমাণ আগে থেকে প্রত্যক্ষ করা কঠিন। ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা এই ইঙ্গিতই দেয় যে, বর্ধিত সামরিক ভাবাবেগের আবহাওয়াকে সাধারণত দক্ষিণপন্থী প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিগুলো কাজে লাগায় শ্রমজীবী জনসাধারণের অর্জিত রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রাপ্তিগুলোর বিরুদ্ধে আক্রমণ চালাবার উদ্দেশ্য। এ বিষয়টিও আমাদের দৃষ্টি এড়ায়নি যে, ভারতীয় ও পাকিস্তানি জনগণের যেসব শত্রুদের কর্মনীতির বুনিয়াদ হলো এই দুটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যকার বিরোধের সদ্ব্যবহার করা, তারা ভারত উপমহাদেশে উত্তেজনা থেকে ফায়দা ওঠাবার চেষ্টা করছে।
এসবের জন্যই বিদ্যমান সংকটের এক রাজনৈতিক সমাধান একান্ত আবশ্যক। ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক সংঘর্ষ এড়াতে চায় এবং শরণার্থী সমস্যার এক শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধানই সে পছন্দ করে, এই মর্মে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বিবৃতি সোভিয়েত ইউনিয়নে সন্তোষের সঙ্গে গৃহীত হয়েছে। পাকিস্তানের কিছু রাজনীতিক ও রাষ্ট্রনীতিজ্ঞের পক্ষ থেকেও সম্প্রতি সুস্থ, অনুত্তেজিত কথা শোনা গেছে। তাতে আশা হয় যে, শেষ পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্কের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রনীতিগত বিচক্ষণতারই জয় হবে এবং উদ্ভূত সমস্যাবলির এক শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে পাওয়া যাবে।
শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর উপলক্ষে প্রচারিত সোভিয়েত-ভারত যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শান্তিকে সুরক্ষিত রাখার স্বার্থে পূর্ব পাকিস্তানের উদ্ভূত সমস্যাবলির রাজনৈতিক সমাধানে উপনীত হবার জন্য এবং সম্মান ও মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকবে এরকম অবস্থায় শরণার্থীদের যথাশীঘ্র সম্ভব নিরাপদে স্বগৃহে ফিরিয়া দেবার জন্য জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।
পাকিস্তানি নেতারা সম্প্রতি বারবার বলেছেন যে, তাঁরা সমস্ত ‘খাঁটি পাকিস্তানি নাগরিকদের’ ফিরে যেতে দিতে রাজি এবং যাঁরা ফিরে আসতে চান তাঁদের জন্য অভ্যর্থনা শিবির খোলা হয়েছে। কিন্তু সেইসঙ্গে এমন একটা ধারণা সৃষ্টি করার চেষ্টা হচ্ছে যে, শরণার্থী সমস্যা সমাধানের পথে বাধা সৃষ্টি করছেন ভারতীয় কর্তৃপক্ষ; তাঁরা দাবি করছেন, ভারতীয় কর্তৃপক্ষই পূর্ব পাকিস্তানিদের ফিরে যেতে দিচ্ছেন না।
কিন্তু প্রকৃত ঘটনায় দেখা যায়, পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যর্থনা শিবিরগুলো যেখানে বস্তুত ফাঁকা, সেখানে হাজার হাজার শরণার্থী প্রত্যহ সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে আসছেন। পূর্ব পাকিস্তান থেকে পাওয়া খবরে প্রকাশ পায়, সেখানে যে মার্জনা ঘোষণা করা হয়েছে, তার আওতায় পড়েন নিতান্ত সামান্য সংখ্যক কিছু মানুষ, আর দমন অভিযানের সময়ে গ্রেপ্তার করা অধিকাংশ রাজনৈতিক বন্দীই এখনও জেলখানায় দিন কাটাচ্ছেন। বিশ্ব জনমতকে উপেক্ষা করে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ মুজিবুর রহমানের বিচার প্রহসন চালিয়ে যাচ্ছেন।
অধিকন্তু পাকিস্তানি সংবাদপত্রগুলোরই খবরে পরিষ্কার জানা যায় যে, “ভারতের বিরুদ্ধে জেহাদ’ শুরু করা প্রভৃতি প্ররোচনামূলক স্লোগান নিয়ে শোভাযাত্রা-বিক্ষোভের আয়োজন পশ্চিম পাকিস্তানের কতকগুলো শহরে অতি সম্প্রতি করা হয়েছিল। কিছু রাষ্ট্রনীতিবিদ ও রাজনীতিক তাঁদের প্রকাশ্য বিবৃতিতে সোভিয়েত পররাষ্ট্র নীতির শান্তিপূর্ণ লক্ষ্যকে বিকৃত করার চেষ্টা করেন এবং সুস্পষ্ট তথ্য ও ঘটনার বিপরীতরূপে, ভারত উপমহাদেশে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার উদ্দেশ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নের অবস্থানকে বিকৃত করার চেষ্টা করেন।
এইভাবে প্রকৃত ঘটনাই দেখায় যে, শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনের সমস্যাসহ উদ্ভূত সমস্যাবলির এক রাজনৈতিক সমাধানের উপযোগী অবস্থা সৃষ্টির প্রশ্নটি এখনও অমীমাংসিত রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সম্মানে প্রদত্ত এক ভোজসভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের মন্ত্রীপরিষদের চেয়ারম্যান আলেক্সেই কসিগিন বলেন, ‘পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাবলি উপলক্ষে ভারত উপমহাদেশে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, তা সোভিয়েত সরকারের উদ্বেগ উদ্রেক করে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্কের ক্ষেত্রে এইসব ঘটনার ফলে উদ্ভূত প্রশ্নগুলোর জটিলতা আমরা সুস্পষ্টভাবে উপলব্ধি করি। যে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ লক্ষ লক্ষ মানুষকে নিজেদের দেশ, জমি ও সম্পত্তি পরিত্যাগ করে প্রতিবেশী ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছেন, তাঁদের কাজ সমর্থন করা অসম্ভব…
এখন কাজ হলো ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি রোধ করা।
পরিস্থিতি সহজ করার জন্য সর্বোপরি শরণার্থীদের স্বগৃহে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ করে দেওয়া দরকার, পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে সম্পূর্ণ নিশ্চিতি দেওয়া দরকার যে, তাঁদের নিগৃহীত করা হবে না এবং তাঁরা পূর্ব পাকিস্তানে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করার ও কাজ করার সুযোগ পাবেন। সকল দেশের শান্তিকামী জনসাধারণ, ভারত ও পাকিস্তানের সমস্ত বন্ধুরা পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পূর্ব পাকিস্তানে অবিলম্বে এমন এক রাজনৈতিক মীমাংসা প্রত্যাশা করেন, যাতে সেখানকার জনসমষ্টির বিধিসম্মত স্বার্থকে যথাযথভাবে গণ্য করা হবে, তার স্বাভাবিক বিকাশকে সুরক্ষিত করা হবে এবং পাক-ভারত সম্পর্কের অধিকতর অবনতির বিপদ দূর হবে। আমরা স্থিরনিশ্চিত যে, এরূপ এক দৃষ্টিভঙ্গি পাকিস্তানি জনগণের স্বার্থ ও উক্ত অঞ্চলে শান্তির আদর্শের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হবে।
এপিএন, ২৬ নভেম্বর, ১৯৭১

সূত্র: বাংলাদেশের সংগ্রাম ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা