You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
ঢাকাঃ ১৭ই মে, শুক্রবার, ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৩৮১

বেতকাই হোক সর্বশেষ লঞ্চ দুর্ঘটনা

বেতকা লঞ্চ দুর্ঘটনার কথা সহজে ভুলবার নয়। এ মর্মান্তিক স্মৃতি রীতিমতো পীড়াদায়ক। বেতকা লঞ্চ দুর্ঘটনা ঘটেছিল পহেলা মে। এই বৃহত্তম লঞ্চ দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ছিল দুইশত। তবে লঞ্চযাত্রীদের মতে ১২৫ জন যাত্রী বহনযোগ্য লঞ্চে ছিল ৫০০ যাত্রী।
সর্বশেষ বেতকা লঞ্চ দুর্ঘটনাই নয়, এর আগেও দুর্ঘটনা ঘটেছে। মানুষ মরেছে। যথাযথ তদন্তের ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। তারপর আর কিছুই হয়নি।
বেতকা দুর্ঘটনাই এক দুর্ঘটনা নয়-১৯৭২ শালা দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬৫টি। ১৯৭৩ সালে দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ২৯টি। একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেছে তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চৈতন্যদয় হয়নি। নির্বিকার ছিলেন সবাই। অবশেষে বেতকা লঞ্চ দুর্ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চোখ, কান যে খুলেছেন এটাই আশার কথা। এটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, একটা কিছু করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এগিয়ে এসেছেন।
সম্প্রতি জাহাজ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে লঞ্চ দুর্ঘটনা ও লঞ্চ পরিবহনের ক্ষেত্রে অবস্থার কারণ অনুসন্ধানের জন্য জরিপ চালানো হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে ৪০০০ লঞ্চের জন্য রয়েছে মাত্র ১ হাজার ২শ’ সারেং। এদের মধ্যে আবার প্রায় ৪০০ জন চাকরির বয়স সীমা অতিক্রম করেছে।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নিয়োজিত তথ্যানুসন্ধানী দল লক্ষ্য করেছেন যে, বয়সের ভারে নুয়ে পড়া সারেংদের মধ্যে অনেকেই চোখে কম দেখেন এবং কানেও কম শোনেন। অথচ সর্ব মোট ৪০০০ লঞ্চের জন্য প্রয়োজন কমপক্ষে ৬ হাজার সুদক্ষ সারেং ।
দেশের সর্বত্র যে ৪০০০ লঞ্চ রয়েছে তার মধ্যে আবার ২০০০ লঞ্চের কোন সার্ভে সার্টিফিকেট নেই। এবং এই লঞ্চগুলো যেসব সারেঙরা চালান তাদের নৌ-পরিবহনের জন্য কোনো প্রশিক্ষণ নেই। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের রেজিস্টার্ড লঞ্চের সংখ্যা হল মাত্র ১ হাজার ৪শ’।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, আভ্যন্তরীণ পরিবহন ১৯১৭ আইনের একটি ধারায় রয়েছে যে, ২৯ ফুট দীর্ঘ লঞ্চগুলো রেজিস্ট্রেশনে চলতে পারে। ১৯১৭ সালের আইনের পরিবর্তন এখনও হয়নি। সুতরাং এই আইনের সুযোগ নিয়ে লঞ্চ মালিকরা রেজিস্ট্রেশন এর কোনো তোয়াক্কা না করেই চুটিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছেন। অথচ অন্য একটি ধারায় রয়েছে যে যাত্রী বহনকারী প্রতিটি লঞ্চকেই সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট নিতে হবে।
স্থানীয় একটি ইংরেজি দৈনিকের এতদসম্পর্কিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, লঞ্চ দুর্ঘটনা সম্পর্কিত বিভিন্ন কারণে ও লঞ্চ চলাচলের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা দূর করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে নিয়োজিত তথ্য অনুসন্ধানী দল সরকারের কাছে একটি রিপোর্ট পেশ করেছেন। তথ্যানুসন্ধানী দল রিপোর্টে বলেছেন যে, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করার জন্য গঠিত মেরিন কোর্টকে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করার সঙ্গে সঙ্গে দোষী ব্যক্তির বিচার করার ক্ষমতা দেওয়া উচিত। যে এলাকায় দুর্ঘটনা ঘটবে সেই এলাকার থানার ওসিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুর্ঘটনা সম্পর্কে মহকুমা হাকিমকে জানাতে হবে। তিনি প্রাথমিক তদন্তের কাজ শেষ করে আবার এক সপ্তাহের মধ্যে তার রিপোর্ট পেশ করবেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে।
তথ্য অনুসন্ধানে দল রিপোর্টে আরও উল্লেখ করেছেন যে, যাত্রীবাহী লঞ্চ এর চালকদের সাধারণ শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই বললেই চলে। সুতরাং চালক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রচলিত আইনের পরিবর্তন প্রয়োজন। যাদের চাকুরীর বয়সসীমা উত্তীর্ণ হয়েছে এবং যারা চোখে কম দেখেন ও কানে কম শোনেন তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া উচিত। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জেই যে ডেক পার্সোনেল ট্রেনিং সেন্টার রয়েছে তাতে বছরে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ জন শিক্ষা লাভ করতে পারেন। সুতরাং এ সেন্টারে বছরে কমপক্ষে ২০০ জনকে শিক্ষা দেবার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। যারা শিক্ষা গ্রহণ করবেন তাদের জন্য আবাসিক হোস্টেলের ব্যবস্থা থাকতে হবে। এবং ট্রেনিং সেন্টারকে চালাবার আনুষঙ্গিক ব্যয় ভার বহন করার জন্য বছরে লঞ্চ মালিকের কাছ থেকে ৩৫ টাকা করে চাঁদা আদায় করা প্রয়োজন।
সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তথ্যানুসন্ধানী দল যে রিপোর্ট পেশ করেছেন তা যে সময় উপযোগী হয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই। স্বাধীনতা লাভের পর পরেই যদি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বিষয়ে দৃষ্টিপাত করতেন তাহলে হয়তো অনেক দুর্ঘটনাই ঘটতো না। তবু কথায় বলে যার শেষ ভালো তার সব ভালো। সেই কথার সূত্র ধরেই যা হয়েছে, যা ঘটে গেছে তার প্রতিবিধান করার ক্ষমতা এখন না থাকলেও ভবিষ্যতে যাতে দুর্ঘটনা না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রাখিলেই দেশবাসি আনন্দিত হবেন। পরিশেষে আমরা সংশ্লিষ্ট দফতরের উদ্যোগে অভিনন্দন জানিয়ে বলবো বেতকাই হোক বাংলাদেশের সর্বশেষ লঞ্চ দুর্ঘটনা। এমন মর্মান্তিক ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়।

রেশন দোকানে মাল সরবরাহে অনিয়ম

রেশন দোকানে নিয়মিত মাল পাওয়া যাচ্ছেনা। রেশন কার্ডধারীরা রেশন দোকানে ধর্ণা দিচ্ছেন। কিন্তু চাল নাকি একেবারেই পাওয়া যাচ্ছে না। গম, তেল, চিনি জাওবা পাওয়া যাচ্ছে, তাও নিয়মিত নয়। ফলে রেশন কার্ড ধারীদের দুর্ভোগ বেড়েছে। গত তিন সপ্তাহ ধরেই নাকি ঢাকার রেশন দোকান গুলোর এই অবস্থা। বর্তমান মাসের প্রথম সপ্তাহে ঢাকার রেশন দোকান গুলোতে নির্ধারিত চালের শতকরা ৮০ ভাগ সরবরাহ করা হয়েছে। দ্বিতীয় সপ্তাহে সরবরাহ করা হয়েছে শতকরা ৭০ ভাগ চাল। কিন্তু চলতি সপ্তাহে কি চাল সরবরাহের পরিমাণ আরো কমবে? শুধু চাল না, তেল সরবরাহের ক্ষেত্রেও এই অসুবিধা কিছুদিন ধরে জাঁকিয়ে বসেছে। সরবরাহের ঘাটতি, ভুয়া রেশন কার্ডের ছড়াছড়ি এবং একশ্রেনীর রেশন দোকানীদের কারচুপির ফলে গোটা রেশনিং ব্যবস্থায় নিদারুন অচলাবস্থার উদ্রেক হয়েছে। কতৃপক্ষ বলছেন, কোনো বড় রকমের সঙ্কট দেখা দেবে না। দোকানিরা বলছেন, সরবরাহ পর্যাপ্ত নয়। এদিকে দুর্ভোগ রেশন কার্ডধারীদের দিন দিন কেবল বাড়ছেই। ঢাকা আটটি রেশনিং উপ-এলাকার যা হাল-হকিকত, তাতে মনে হয়, জনসাধারণের জীবন থেকে দুর্ভোগকে ঝেটিয়ে বিদেয় করা যাবে না। যারা চাল পাননি, তাদের সংসারে টানাটানি দেখা দিয়েছে। চালের অভাবে হতে হচ্ছে বাজারের শরণাপন্ন চালের জন্য কিউ পড়ছে রেশন দোকানের সামনে। অন্যান্য জিনিসের অভাবেও জনগণ প্রমাদ গুনছেন। রেশন দোকানের মালিকরা অভিযোগ তুলছেন যে, সিএসডি নাকি তাদেরকে হয়রানি করছে। মাল সরবরাহে গড়িমসি করছে। ফলে রেশন দোকানগুলোতে ভিড় বাড়ছে। জনসাধারণ ধৈর্যের পরীক্ষা দিচ্ছেন। জানাগেছে নিয়মমাফিক একেকটি রেশন দোকানের অধীনে ৩ হাজার রেশন কার্ডধারীকে মাল দেওয়া হবে। কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে নাকি এ নিয়ম অচল। কোন কোন রেশন দোকানের অধীনে ১২ হাজার রেশন কার্ডধারীর প্রমাণও লভ্য। এর ফলেও রেশন সরবরাহে প্রতিকূলতা দেখা দিয়েছে। কাজের সরবরাহের অপ্রতুলতার দোহাই দিয়ে জনগণকে আর বেশিদিন ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। যাদের রেশন কার্ড ধারীরা মাল তুলতে গিয়ে ভোগান্তির কবলে না পারেন, অবিলম্বে সে ব্যবস্থা সম্পন্ন করা দরকার বলেই আমরা মনে করি।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!