শিলং-এ মিছিল, ত্রাণ ও শিবির
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে মেঘালয়ের কথা বলা হয় তবে অনুচ্চ স্বরে। সীমান্তবর্তী ছোট মেঘালয়ের মানুষজনও কিন্তু যতটা পেরেছেন বাঙালির সেবা করেছেন।
শিলং-এর পুলিশ বাজারের সামনে চত্বরে জুলফিকার আলী ভূট্টোর কুশপুত্তিলিকা দাহ করা হয়। এর আগে সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে অনলবর্ষী বক্তৃতা দেন বিরোধী দুই নেতা। একটি ভ্যানে লাউড স্পিকার রেখে দু’জন বক্তৃতা করেন। পাকিস্তানের গণহত্যার বর্ণনা দিয়ে তাঁরা ভারত সরকারের কাছে আবেদন জানান বাঙালিদের যথাযথভাবে সহায়তা করার জন্য। বিরোধী এই দুই নেতা হলেন দুলাল বড়ুয়া এবং ফনি বোরা। বক্তৃতার সময় ছাত্রদের এক বিরাট মিছিল পৌঁছে সমবেত জনতার সঙ্গে মিশে যায়। রিপেল কিনডিয়া তখন বক্তৃতা করেন। এরপর ছাত্ররা মিছিল বের করে। মিছিল শেষে তাঁরা বেশ কিছু প্রস্তাব গ্রহণ করে-
# স্বাধীন বাংলাদেশে নিরস্ত্র ভাইবোনদের ওপর পাকিস্তানি সৈন্যরা যে বর্বর অত্যাচার চালাচ্ছে তার নিন্দা।
# শিলং-এর ছাত্ররা চায় ভারত সরকার এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেক। শুধু সরকার নয় গণতন্ত্রের এই সংগ্রামের প্রতি যেন জাতিসংঘ ও অন্যান্য দেশ সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়।
# শিলং-এর ছাত্রদের দাবি ভারত ও জাতিসংঘ যেন দ্রুত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।
# শিলং-এর ছাত্রসমাজ মুক্তিযোদ্ধাদের সবরকমের সাহায্য করতে চায়।
যখন প্রতিবাদ সভা মিছিল চলছে তখন ডাউকি ও ভোলাগঞ্জ সীমান্তে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ চলছিল। শিলংয়ে চা বাগানেও সংঘাত চলছে এবং কয়েক’শ আদিবাসী আশ্রয়ের খোঁজে সীমান্ত পেরিয়েছে। রাজ্য সরকার ডাওকিতে উদ্বাস্তু শিবির খুলেছে। প্রয়োজনে আরো খুলবে। এর এক সপ্তাহ আগে অপেরা হলে বাংলাদেশ বিষয় নিয়ে আলোচনার পর একটি সহায়ক সমিতি গঠন করা হয়। এর সভাপতি ও সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন যথাক্রমে পি আর কিনডিয়া এমএল এ ও আশুতোষ ভট্টাচার্য।
অলপার্টি হিল লিডার্স কনফারেন্সের নির্বাহী কমিটির একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সভাপতিত্ব করেন চিফ মিনিস্টার ক্যাপ্টেন উইলিয়ামসন সাংমা। সীমান্তের ওপরে যে নির্মম অত্যাচার ও সম্পত্তির ধ্বংস তাতে দুঃখ প্রকাশ করা হয় ও স্বাধীনতাকামীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করা হয়। শরণার্থীদের সব রকমের সহায়তা করার ঘোষণাও দেওয়া হয়। বৃহত্তর গৌহাটি এবং রাজ্যের অনেক জায়গায় ছাত্ররা মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে এবং পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে ঘৃণা প্রকাশের প্রতীক হিসেবে ক্লাশ বর্জন করে।
সূত্র: হারুণ হাবিব বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ভারত: তথ্য ও দলিল: আসাম ও মেঘালয়, ঢাকা, ২০১৭
একাত্তরের বন্ধু যাঁরা- মুনতাসীর মামুন