You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলাদেশের সমর্থনে

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে সেপ্টেম্বর ১৩ ও ১৪ তারিখে শিক্ষক ছাত্রদের একটি কনভেনশন বা আলোচনা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের পক্ষে একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলে সাহায্য করা এবং তার জন্য দিল্লিতে সর্বভারতীয় একটি সমাবেশের আহ্বান। যেসব অঞ্চল থেকে প্রতিনিধিরা যোগ দিয়েছিলেন সেসব এলাকাগুলো হলো-উজ্জয়নী, অমৃতসর, আগ্রা, জব্বলপুর, বারানসী, কানপুর, গোরখপুর, আলীগড়, মাদুরাই, আগরতলা, চণ্ডিগড়, রাজস্থান এবং গৌহাটি। কলকাতাতো ছিলই। বাংলাদেশের প্রতিনিধিরাও যোগ দিয়েছিলেন। দিল্লির সমাবেশের জন্য একটি প্রস্তুতি কমিটি করা হয় দু’জনকে সভাপতি করে। তাঁরা হলেন আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ. আলিম এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য পি. দত্ত। কমিটির সম্পাদক নির্বাচিত হন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিময় রায়। কমিটির নাম দেওয়া হয় ‘অল ইন্ডিয়া কোঅর্ডিনেটিং কমিটি অব টিচার্স অ্যান্ড স্টুডেন্টস ইন ডিফেন্স অব বাংলাদেশ’। কমিটিতে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব ছিল। উদ্বোধনী ভাষণে শান্তিময় রায় বলেন, ভারতের ছাত্র-শিক্ষকদের একট মঞ্চ গড়ে তোলা হবে বাংলাদেশ বিষয়ে। এবং এমন একটি রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে যাতে বাংলাদেশের জন্য যাঁরা লড়াই করছেন তারা সবাই ঐক্যবদ্ধ হন। “The object of this meet is to bring about a sense of solidarity and involvement of the community of students and teachers all over India in the issue of Bangla Desh and to prepare the ground for developing the requisite political climate which may bring together the unity of all fighting forces for the liberation of Bangla Desh.”
বক্তারা বাংলাদেশ আন্দোলনের পটভূমি, সংগ্রামে সমস্যা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করেন। যাঁরা আলোচনা করেন তাঁরা হলেন, অধ্যাপক শান্তিময় রায়, অধ্যাপক গৌতম চট্টোপাধ্যায়, জনাব আমিরুল ইসলাম, আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুব হাসান, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুদ, উজ্জয়নী ও পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম. এল. গুপ্ত ও রিয়াজ আজিমবাদ, বাংলাদেশের স্থপতি মাজহারুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক অমিয় দাশগুপ্ত, আওয়ামী লীগের শাহ মোয়াজ্জেম ও নূরে আলম সিদ্দিকী, ন্যাপের মতিয়া চৌধুরী ও ছাত্র ইউনিয়নের মাহফুজ আনাম।
সমাবেশে প্রস্তাব নেওয়া স্পেনের গৃহযুদ্ধের সময় যে রকম একটি আন্তর্জাতিক ব্রিগেড গড়ে তোলা হয়, এখনও মুক্তিফৌজের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইয়ের জন্য একটি আন্তর্জাতিক ব্রিগেড গড়া হোক। এরা প্রথমে মেডিকেল ও ফার্স্ট-এইড ইউনিট হিসেবে কাজ করবে অন্তিমে যা লড়াকু ইউনিটে পরিণত হবে।
সমাবেশে শেখ মুজিবের মুক্তি দাবি করে প্রস্তাব পাস হয়। একই সঙ্গে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ভারত ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ সরকার যে সর্বদলীয় উপদেষ্টা কমিটি গঠন করেছে তার প্রশংসা করা হয় এবং আশা করা হয় এই পদক্ষেপ “will pave the way for the formation of a comprehensive struggle oriented united nation front in Bangla Desh.”

সূত্র: নিউ এজ, দিল্লি, 26.9.1971
একাত্তরের বন্ধু যাঁরা- মুনতাসীর মামুন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!