You dont have javascript enabled! Please enable it!

পশ্চিম বাংলা-বাংলাদেশ সম্প্রীতি সমিতি

বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। তখন পূর্ববঙ্গ বা বাংলাদেশের অনেকে রয়ে গেছেন কলকাতা। কলকাতায় যেসব শিল্পী সাহিত্যিক ছিলেন বাংলাদেশের প্রতি আবেগ তখনও বর্তমান। এ সময় ১৯ ডিসেম্বর কলকাতার ‘ভারত সভা হল’-এ পশ্চিমবাংলা-বাংলাদেশ সম্প্রীতির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। খুব সম্ভব সেদিন বা তার আগে সমিতিটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
সভায় বক্তৃতা দেন অন্নদাশঙ্কর রায়, মনোজ বসু, প্রবোধকুমার স্যান্নাল, ড. মযহারুল ইসলাম প্রমুখ।
মনোজ বসু আবেগাপ্লুত গলায় বলেন, বাঙালিরাই আবার “বিশ্ব সভায় আসন লাভের পথ উন্মুক্ত করে দিলেন।” তিনি বলেন, বাংলাদেশ সংগ্রাম মূলত সাংস্কৃতিক সংগ্রাম। “সাংস্কৃতিক শক্তিই বাংলাদেশের বিপ্লবের সর্বপ্রথম এবং সবচেয়ে কার্যকরী ছিল।”
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মযহারুল ইসলাম বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামের পটভূমিকা বিশ্লেষণ করেন, তাঁর মতে, “বাংলার মুসলমান পাকিস্তান সৃষ্টির পরেই বুঝতে পারলেন যে ধর্ম সংস্কৃতির সবকিছু নয়, এটা অঙ্গ মাত্র। সংস্কৃতি মানুষের প্রাণ স্বরূপ, ধর্মান্তরের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ তার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় না।”
প্রবোধ স্যান্নাল, “বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে গিয়ে সেখানকার আত্মীয়-বিরহ ব্যথায় কাতরদের সান্ত্বনা যোগাবার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।” বাংলাদেশ জাতীয় কংগ্রেসের নেতা, মনোরঞ্জন ধর বলেন, বাংলাদেশে আর সংখ্যালঘু বলে কিছু থাকবে না।
সভায় প্রস্তাব করা হয় বাংলাদেশের জন্য স্বল্প মেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী দুটি কার্যক্রম গ্রহণ করার।
স্বল্পমেয়াদী কার্যক্রম হলো— শরণার্থীদের বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন ও সুষ্ঠু পুনর্বাসনে সহায়তা করা।
দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা ছিল— “উভয় দেশের কিশোর ও বয়স্কদের ভাব বিনিময়ের জন্য পত্র-পত্রিকা প্রকাশ, সাহিত্য ও সংস্কৃতিমূলক গবেষণা, বুদ্ধিজীবীদের জন্য আলোচনা সভা, বিতর্ক, সম্মেলন ইত্যাদি আহ্বান এবং জনগণের মধ্যে দুই দেশের মৈত্রী দৃঢ় করার ভাবনা সৃষ্টির প্রয়াস।”

সূত্র: বাংলা রেনেসাঁর পথে, কলকাতা, ১৯৭১/১
একাত্তরের বন্ধু যাঁরা- মুনতাসীর মামুন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!