আলীগড়ের শিক্ষকদের প্রতিবাদ
কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সহায়ক সমিতি অধ্যাপক এ. আর. মল্লিক ও অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে পাঠিয়েছিলেন আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দিতে। আনিসুজ্জামান লিখেছেন— “আলীগড় ছিল মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী। সবকিছু ছিল অত্যন্ত কেতাদুরস্ত, সময়ানুবর্তী তবে হৃদয়ের উষ্ণতাহীন।… সেদিন মল্লিক সাহেব আমার শোনা তাঁর শ্রেষ্ঠ বক্তৃতা দিয়েছিলেন।
আলীগড়ের ঠান্ডা পরিবেশে তাঁর ভিতরের আগুনকে উসকে দিয়েছিল। দেখলাম, শ্রোতাদের অনেকে বক্তৃতা শুনতে শুনতে চোখ মুছছেন। প্রথম দিকে আনুষ্ঠানিক যে বেড়াটা ছিল, সেটা যেন উড়ে গেল।”১
এটি বোধ হয় পুরোপুরি ঠিক নয়। মে মাসেই দেখি আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫০ শিক্ষক গণহত্যার নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে একটি স্মারকলিপি পাঠান। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছিল—
পাকিস্তান সরকারের বিধিনিষেধের কারণে, বাংলাদেশ সম্পর্কে খবরাখবর তেমন জানা যাচ্ছে না, তবে, এটা স্পষ্ট যে, সেখানকার জনগণ আওয়ামী লীগের নীতি ও আদর্শে ঐকমত্য ঘোষণা করছে। তাদের দাবি ছিল পাকিস্তানের ভেতর স্বায়ত্বশাসন।
পশ্চিম পাকিস্তানের পুঁজিপতি ও জমিদারদের হাতিয়ার পাকিস্তানের সামরিক সরকার শুধু দরিদ্র বাঙালিদের প্রতি সমর্থন জানানো দূরে থাকুক, বোঝার চেষ্টা করেনি। “the inexorable urge of national pride and independence but it unleashed a reign of terror in order to suppress and completely enslave the people of Bangladesh.”২
তাঁরা আরো বলেন, সামরিক সরকারের কাছ থেকে তাঁরা কোনো ধরনের মানবিক আচরণ বা সৌজন্য আশা করেন না। কিন্তু যে ব্যাপক ধ্বংসলীলা ও গণহত্যা চালানো হয়েছে তা বিশ্বের যে কোনো মানুষকে মর্মাহত করবে।
শিক্ষক ও গবেষকরা এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধ্বংসযজ্ঞের বিবরণ দিয়ে লেখেন— “We are sure these rulers will stand condemned before the bar of history as barbarians. We are sure they will never be able to extinguish the popular urge to reconstruct the life of the people of Bangla Desh spritually and materially.”৩
তাঁরা সরকারকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে সর্বপ্রকার সহায়তা দেওয়ার অনুরোধ জানান। তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বাংলাদেশের শিক্ষা ও মুক্তচিন্তার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার সহায়তার ঘোষণা করেন।
সূত্র: ১. আনিসুজ্জামান, আমার একাত্তর, ঢাকা, ১৯৯৭
২. নিউ এজ, ৩.৫.১৯৭১
৩. ঐ
একাত্তরের বন্ধু যাঁরা- মুনতাসীর মামুন