You dont have javascript enabled! Please enable it!

মার্কিন অ্যাকাডেমিশিয়ানদের আবেদন

নভেম্বর মাসের ১২ তারিখ যুক্তরাষ্ট্রের ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশো শিক্ষাবিদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী রজার্সের কাছে একটি আবেদন পাঠান। বিষয় পাকিস্তানের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন প্রত্যাহার। তাঁরা লিখেছিলেন পাকিস্তানের গৃহযুদ্ধ ও ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধের হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের কাঁধে ভারী একটি দায়িত্ব অর্পণ করেছে। পাকিস্তানের বর্বর আক্রমণের কারণে ৩০০,০০০ বাঙালি মারা গেছেন, ৯০ লক্ষ শরণার্থী দেশ ত্যাগ করেছেন। প্রতিদিন ৩০,০০০ মানুষ বস্তুভিটা ত্যাগ করেছেন। পাকিস্তান এই সংকট ভারতের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে এবংভারত এখনও চরম ধৈর্যের পরিচয় দিচ্ছে। পশ্চিম পাকিস্তানই এখন দক্ষিণ এশিয়ার জন্য হুমকিস্বরূপ। শুধু তাই নয় যুদ্ধ শুরু হলে এ যুদ্ধে চীন, রাশিয়া ও আমেরিকা জড়িয়ে পড়বে।
যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে সমর্থন করে আসছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিরুদ্ধে সামরিক কর্তৃত্ববাদী শাসনকে সমর্থন করা চরম ভুল যা জেতা যাবে না। ন্যায় বিচার, মানবিকতা, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্র যে তার নীতি বদলাতে পারে তা দেখানোর এটি একটি সুযোগ।
[It is utter folly to support an authoritarian military regime in a brutal and bitter struggle against the majority of its own people. A struggle it cannot win. Every consideration of justice, humanity, and national interest plainly calls in this care for another application of the demonstrated capacity of the United States Government to be flexible in the making of radical shifts in policy.]
তাঁরা পাঁচটি সুপারিশ করেন—
১. পাকিস্তান সরকারকে জানানো যে যুক্তরাষ্ট্র তাদের আর সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা দেবে না। সরবরাহের যা প্রতিশ্রুতি আছে সে ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য হবে। পাকিস্তানের ঋণের দায়ও অব্যাহত থাকবে যতক্ষণ না পাকিস্তান সরকার পূর্ববঙ্গের আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছবে।
২. যেসব সাহায্য পাকিস্তানে দেওয়ার কথা তা ভারতকে দেওয়া যতদিন শরণার্থীরা ফেরত না যেতে পারবে। ভারতকে শরণার্থী পোষণের জন্য সহায়তা বৃদ্ধি।
৩. জাতিসংঘের অধীনে পূর্ববঙ্গে মানুষকে সহায়তা করা।
৪. পাকিস্তানকে জানানো যে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ ঘটলে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে দেওয়া সহায়তা বন্ধ করবে না যা তাঁরা করেছিল ১৯৬৫ সালে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের সময়।
৫. মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশসমূহ বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালেয়েশিয়া ও তুরস্ককে জানানো হয় যে তাঁরা যেন পূর্ববঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের সঙ্গে পাকিস্তানের সমঝোতা আনয়ন প্রচেষ্টা চালায় যা যুক্তরাষ্ট্র স্বাগত জানাবে।
তাঁরা আরো জানিয়েছিলেন চীনের সঙ্গে সম্পর্কের এক ঐতিহাসিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সে পরিপ্রেক্ষিতে—
“Condition also demand that we re-examine and revise our current policies in South Asia where an immediate threat to peace now confronts us. ‘
এই আবেদনপত্রে উল্লেখযোগ্য যাঁরা স্বাক্ষর করেছিলেন তাঁরা হলেন—
পল স্যামুয়েলসন ও সালভাদর লুবিয়া (এম আই টি; নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত)। সায়মন কুজনেৎজ (হার্ভার্ড; নোবেল বিজয়ী), গ্যাব্রিয়েল আল মন্ড (স্টানফোর্ড), জেমস টোবিন (ইয়েল), ট্যালকট পার্সনস, ওয়াসলি লিওনটিয়েফ, ড্যানিয়েল বেল, সেইমুর লিপসেট (হার্ভাড), জর্জ রাথজেনস ফ্রাংকো মদেলিয়ানি ও রবার্ট সোলো (এম আই টি), হেনরি রসভস্কি, যান মন্টোগোমারী, বেঞ্জামিন স্কোয়াটজ (হার্ভার্ড), লুসিয়েন পাই, মাইরন ওয়েনার, হ্যারল্ড আইজাকস, পল রোসেনস্টেইন রোডান (এম আই টি), অ্যালেক্স হংকেলেস, জন ডব্লিউ লুইস, রবার্ট সি নর্থ (স্ট্যানফোড), রিচার্ড এল পার্ক (মিসিগান), ডেভিড ম্যান্ডেলবউম, লিউ রোজ, জেরাল্ড বেরিম্যান, র‍্যালফ রেটলফ (বার্কলি) প্ৰমুখ।

সূত্র: Bangladesh Documents
একাত্তরের বন্ধু যাঁরা- মুনতাসীর মামুন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!