You dont have javascript enabled! Please enable it!

প্রান্তিক শহরে বাঙালির জন্য ভালোবাসা

করিমগঞ্জ সিলেট সীমান্তে। প্রান্তিক এ শহরের বাসিন্দারা মার্চ মাস থেকেই বাংলাদেশের ঘটনাবলি পর্যবেক্ষণ করছিলেন। সিলেটের সীমান্তবর্তী হওয়ায় খবরাখবর পেতে খুব অসুবিধা হচ্ছিল না। ১৯৭১ সালে সিলেট সংক্রান্ত ঘটনাবলি জানতে হলে গবেষকরা করিমগঞ্জ থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক সংবাদপত্রগুলো দেখতে পারেন।
২৫ মার্চের ঘটনার পর করিমগঞ্জের বাসিন্দারা সক্রিয় হয়ে উঠতে লাগলেন। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে একজন দু’জন করে শরণার্থী সীমান্ত অতিক্রম করতে লাগলেন। গণহত্যার খবর করিমগঞ্জে পৌঁছতে লাগল। ঐ সময়ই করিমগঞ্জের স্বাধীনতা সংগ্রামী সুরেশচন্দ্র দেবের সভাপতিত্বে ‘করিমগঞ্জ বাংলাদেশ ত্রাণ কমিটি’ গঠিত হয়। সুরেশচন্দ্র নির্বাচিত হন ত্রাণ কমিটির সভাপতি। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে [৫.৪.১৯৭১] তিনি আবেদন জানান করিমগঞ্জের অধিবাসীদের প্রতি ‘একটি নিবেদন’ শিরোনামে।
সুরেশচন্দ্র দেব জানান-“পূর্ব্ব বাঙলার জনগণ স্বাধীনতার এক দুৰ্দ্ধৰ্ষ সংগ্রামে লিপ্ত, আওয়ামী লীগের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের দৃঢ় নেতৃত্বে সেই সংগ্রাম পরিচালিত।” সুরেশচন্দ্র জানিয়েছেন, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা হস্তান্তরিত করেনি পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী। বরং “পশুবলের আশ্রয় লইয়া নিরস্ত্র জনগণের উপর সশস্ত্র আক্রমণ দ্বারা এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করিয়াছে। অকথ্য অত্যাচার চালাইয়া জনগণকে বিধ্বস্ত করিতেছে ও নির্মম হত্যাকাণ্ড চালাইয়াছে। এই পরিস্থিতিতে পূর্ব্ব বাঙলার জনগণ পাকিস্তান হইতে পৃথক স্বাধীন বাঙলা ঘোষণা করিয়া লড়াইয়ে অবতীর্ণ হইয়াছেন ও অসীম সাহসের সহিত আত্মাহুতি দিতেছেন।”
তিনি নিবেদন জানিয়েছেন, “আমরা নীরব দর্শকের ভূমিকা নিতে পারি না। আমাদের নিশ্চিত কৰ্ত্তব্য হইয়া পড়িয়াছে— তাহাদের এই অপরিসীম বিপদে যথাসাধ্য দান করা।”
কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তিনি আবেদন জানিয়েছেন স্বাধীন বাংলাকে স্বীকৃতি প্রদানের। উল্লেখ্য তখনও বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়নি। ভারত যেন বিভিন্ন দেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এই অত্যাচার অবসানে। “অন্যদিকে আমাদের এ দেশবাসীর নিকট বিনীত আবেদন তাহারা স্বতঃস্ফূর্ত হইয়া আমাদের ত্রাণ কমিটিতে অর্থ ও অন্যান্য সাহায্য প্রদান করিতে আগাইয়া আসুন।”
সবশেষে তিনি একটি ব্যক্তিগত আবেদন জানিয়েছেন— “ব্যক্তিগতভাবে একটি নিবেদন জানাইতেছি, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় একজন একনিষ্ঠ সৈনিক হিসাবে আত্মনিয়োগ করিবার আমার সুযোগ ঘটিয়াছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামে যে আত্মসংশয়, একাগ্রতা, দৃঢ়সঙ্কল্পতা, শৃঙ্খলাবোধ প্রদর্শন করা প্রয়োজন হয় তাহার প্রগাঢ় উপলব্ধি করিতে সক্ষম হইয়াছিলাম পূর্ববাঙলার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে এই গুণপণার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আমাদের কার্য্যে অগ্রসর হইবার আশা রাখি।”

সূত্র: দৃষ্টিপাত, করিমগঞ্জ, আসাম, ৭.৪.১৯৭১
একাত্তরের বন্ধু যাঁরা- মুনতাসীর মামুন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!