You dont have javascript enabled! Please enable it!

সোভিয়েত গণসংগঠনসমূহের প্রতিবাদ

সোভিয়েত ইউনিয়নের বিভিন্ন গণসংগঠন বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ বিবৃতি প্রচার করে। সোভিয়েত তথ্য বিভাগ এগুলি সংকলন করে কিন্তু কবে কোন বিবৃতি দেওয়া হয়েছিল সে তারিখটি উল্লেখ করেনি।
সোভিয়েত শান্তি কমিটি বঙ্গবন্ধুর বিচার ও মৃত্যুদণ্ড নিয়ে আশংকা প্রকাশ করেছে। পাকিস্তানি সরকারের নিপীড়নের ফলে মানুষজন ভারতে আশ্রয় নিচ্ছে সে কথা জানিয়ে বলেছে— “এশিয়ার শান্তিরক্ষার স্বার্থে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ইচ্ছা ও আইনসঙ্গত অধিকার ও স্বার্থকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে উদ্ভূত সমস্যাবলীর রাজনৈতিক সমাধান অর্জনের জন্য জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যাবশ্যক। লক্ষ লক্ষ সোভিয়েত জনগণের পক্ষ থেকে আমরা পূর্বপাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাই, তাঁরা যেন মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে এবং পূর্ব পাকিস্তানের অন্যান্য জননেতার বিরুদ্ধে হিংসাত্মক ব্যবস্থা বন্ধ করে এবং এমন অবস্থা পালন করে যা এই অঞ্চলে শান্তিকে শক্তিশালী করবে।
সোভিয়েত ট্রেড ইউনিয়নসমূহও বঙ্গবন্ধুর বিচারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি ছিলেন শ্রমজীবী মানুষের আইনসঙ্গতভাবে নির্বাচিত নেতা।
“পাকিস্তানের শ্রমজীবী জনগণের গুরুত্বপূর্ণ অধিকারসমূহের জন্য, উপনিবেশবাদীদের জোয়ালের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্রের বিকাশের জন্য এবং সমাজ প্রগতির জন্য তাদের সংগ্রামের আন্তর্জাতিক সংহতির প্রতি বিশ্বস্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের ট্রেড ইউনিয়ন সমূহ সর্বদাই পাকিস্তানের শ্রমজীবী জনগণের পক্ষ নিয়েছেন। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের এবং নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিহিংসামূলক উৎপীড়নের অবসান ঘটানোর এবং শরণার্থীদের তাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরিস্থিতি সৃষ্টির দাবি সোভিয়েত শ্রমজীবী জনগণ জানাচ্ছেন।”
সোভিয়েত আফ্রো-এশীয় সংহতি কমিটি তাদের বিবৃতিতে দাবি করেন—“বিশ্ব জনমতের প্রতি কর্ণপাত করার এবং পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ইচ্ছা, অধিকার ও আকাঙ্খার কথা বিবেচনায় নিয়ে রাজনৈতিক উপায়ে সমস্যাটির একটি ন্যায্য সমাধানের সম্ভাবনা খুঁজে বার করতে হবে। আর সেটাই হবে আফ্রো-এশীয় সংহতির উদ্দেশ্য ও নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।” বাংলাদেশের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে কমিটি বলে, “যেসব জাতি ঔপনিবেশিক জোয়াল ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে এবং শান্তি ও প্রগতির পরিস্থিতির মধ্যে উন্নততর জীবনযাত্রার জন্য সংগ্রাম করছে, সোভিয়েত জনগণ সর্বদাই তাদের বিশ্বস্ত বন্ধু ছিল ও থাকবে।”
সোভিয়েত সাংবাদিক ইউনিয়ন “ব্যাপক প্রতিহিংসামূলক উৎপীড়ন” ও বঙ্গবন্ধুর বিচার বন্ধের দাবি জানায়। সোভিয়েত রেডক্রস বরং খানিকটা কঠিন বিবৃতি প্রদান করে। রেডক্রস ঘোষণা করে, “প্রগতিশীল ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে উৎপীড়ন ও প্রতিহিংসা পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ বন্ধ করুন, রাষ্ট্র সংঘ কর্তৃক ঘোষিত মানবাধিকার ও আইনানুগতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করুন এবং পূর্ব পাকিস্তানের অসামরিক জনসমষ্টির কষ্ট লাঘব করুন।”
সোভিয়েত যুব ও ছাত্র সংগঠনগুলিও একই রকম বিবৃতি প্রদান করে ঘোষণা করে “পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ও যুবসমাজের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও হিংসার এইসব কাজ সম্পর্কে সোভিয়েত যুব ও ছাত্রসমাজ ক্রোধ প্রকাশ করছে।”
সোভিয়েত রাষ্ট্রসংঘ সমিতি বঙ্গবন্ধুর মুক্তি দাবি করে জানায় পাকিস্তান রাষ্ট্রসংঘের চার্টার ভঙ্গ করছে। “পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ইচ্ছা, অলংঘনীয় অধিকার ও আইনসম্মত স্বার্থগুলো বিবেচনার মধ্যে রেখে বিদ্যমান সমস্যাগুলোর রাজনৈতিক সমাধান বের করার জন্য এবং পূর্ব পাকিস্তানি শরণার্থীদের দ্রুত ও নিরাপদে স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের উপযোগী অবস্থা সুনিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা হোক।”

সূত্র: দলিলপত্র: খন্ড ১৩
একাত্তরের বন্ধু যাঁরা- মুনতাসীর মামুন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!