কী দেখেছিলেন ব্রিটিশ এম.পি.রা
রয়েল এয়ার ফোর্সের বিশেষ বিমানে ব্রিটিশ এমপিদের একটি দল লন্ডন থেকে ঢাকা তারপর কলকাতা এসে পৌঁছান। যাঁরা এসেছিলেন তাঁরা হলেন শ্রমিক দলীয় সদস্য আর্থার বটমলি ও রেগ প্রেন্টিস। এরা দু’জনই প্রাক্তন মন্ত্রী। রক্ষণশীল দলের জেমস র্যামসডেন ও টবি জেসল। তাঁরা ঢাকা থেকে কলকাতা পৌঁছান ২৮ জুন। কলকাতার দৈনিক স্টেটসম্যান তাঁদের সবার বক্তব্যের সংক্ষিপ্তসার তুলে ধরেছিল এভাবে-
“…..an atmosphere of terror is pervading, Army ruled East Bengal; people are still fighting in a ‘complex situation’; people with ‘hands chopped of with bullet wounds’ were seen; the university campuses bore ‘marks of a struggle and the situation in East Bengal is far from normal.”
টবি জেসেল বলেন, পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক হারে যে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে তার প্রমাণ তিনি পেয়েছেন। “ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করলে সে দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।”
রেগ প্রেন্টিস মনে করেন, পূর্ববঙ্গে যে ভয়ের অবস্থা সেখানে শরণার্থীদের ফিরে না যাওয়া উচিত।
পূর্ববঙ্গে চারদিন ছিলেন এ চারজন। সফর করেছেন, চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, ঢাকা এবং ময়মনসিংহ। বটমলি বলেন, “আমরা হেলিকপ্টারে খুব নিচু দিয়ে ভ্রমণ করেছি ফলে সবকিছু আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তাঁরা খুব কম লোককে দেখতে পেয়েছেন। ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িঘরে সামান্য কয়েকজনকে দেখা গেছে। জেসেল বলেন, একটি গ্রামে তাদের যাওয়ার কথা ছিল, ‘কিন্তু আমরা যেতে পারিনি কারণ পাকিস্তান বাহিনী গ্রামটি তছনছ করে দিয়েছে এবং আমরা যাতে ঐ গ্রামে যেতে না পারি সে জন্য বিভিন্ন রকম প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে।”
পূর্ববঙ্গে নির্যাতন হতে দেখেছেন কিনা—এ প্রশ্নের জবাবে মি. বটমলি বলেন— “I would not like to use the word ‘persecution’; the fact is that it happened and it must be stopped. We saw people with hands chopped off, with bullet wounds and still suffering.”
৪ জুলাই তাঁরা ফিরে যান লন্ডন। সেখানে সাংবাদিকরা বিভিন্ন প্রশ্ন করেন এবং সবাই খোলাখুলিভাবে তার উত্তর দেন। যেমন রক্ষণশীল দলে এম.পি. জেসেল বলেন, তিনি শরণার্থীদের জিজ্ঞেস করেন, তাঁরা কি দেশে ফিরতে ইচ্ছুক? তাঁরা বলেছেন, নিরাপদ হলেই ফিরব। কবে ফিরবেন আপনারা? তাঁরা জবাব দিচ্ছেন, যখন শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের ফিরে যেতে বলবেন। রেজিনাল্ড প্রেন্টিস-কে এক পাকিস্তানি সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেন, সহায়তা কে (aid) কি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা উচিত? ৯৯ ভাগ ক্ষেত্রে নয়। উত্তর দেন প্রেন্টিস কিন্তু পাকিস্তানের ক্ষেত্রে তা ব্যবহার করা যৌক্তিক।
আর্থার বটমলি বলেন, ঢাকায় টিক্কা খানের মতো ভুল ব্যক্তিকে বসানো হয়েছে যার অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয় সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। সেনাবাহিনী অত্যাচার শুধু করেনি, এখনও করছে।
মিসেস ইন্দিরা গান্ধী সম্পর্কে বটমলি বলেন, তিনি শুধু একজন সেরা প্রধানমন্ত্রীই নন, সেরা একজন স্টেটসম্যানও বটে। তিনি আরো বলেন— “This had been the most harrowing mission he had undertaken in his entire public life. He found president Yahyah Khan an honourable man who didnot seem to know what was happening in East Bengal.”
এই চার জনের সফর ও বক্তব্য ব্রিটিশ সরকারের ওপর চাপের সৃষ্টি করেছিল কারণ সেখানে সরকারদলীয় এম.পিও ছিলেন। এবং ব্রিটিশ নীতি নির্ধারণী মহলে এ ধারণার সৃষ্টি হয়েছিল পাকিস্তানকে সরাসরি সাহায্য ও সমর্থন না দেওয়ার।
সূত্র: The Statesman, Kolkata, 29.6.1971; 5.7.1971
একাত্তরের বন্ধু যাঁরা- মুনতাসীর মামুন