বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্তর্জাতিক সংস্থা
পাকিস্তান সেনাবাহিনী পরিকল্পিতভাবে ২৫ ও ২৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, তাদের পরিবারবর্গ ও ছাত্রদের হত্যা করেছে। গণহত্যার একমাস পর বিবৃতি দিয়ে জানালো ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অন দি ইউনিভার্সিটি ইমার্জেন্সি।
১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের এই সংস্থা। যখন এটি গঠিত হয় তখন এর সদস্য সংখ্যা ছিল শ খানেকের মতো। ১৯৭১ সালে যখন সংস্থার পক্ষে বিবৃতি দেওয়া হয় তখন ১৩টি দেশের অনেকেই এর সদস্য ছিলেন। এ বিবৃতি দিয়েছিলেন ১০ জন গণ্যমান্য ব্যক্তি। তাঁরা বলেছিলেন “Having organised to defend the life of scholarship, we cannot remain silent when the very lives and minds of scholars are shattered in bloody massacre, and their distinctive culture threatened with obliteration.”
এর পটভূমি এরকম, ঢাকা থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এক অধ্যাপক পৌঁছেছিলেন আমেরিকা। সেখানে বার্কলের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. পল সিবারি ঢাকার সেই প্রফেসরের সাক্ষাৎকার নেন যিনি ছিলেন এসব হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী। নিরাপত্তার স্বার্থে তার নাম প্রকাশ করা হয়নি। এখন তাঁর নাম অনুমান করতে পারি। তিনি হলেন, অধ্যাপক জিল্লুর রহমান খান। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক।
ফ্রিডম হাউস ছিল আইসিইইউ-এর উদ্যোক্তা। অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি, জাপান, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, ব্রিটেন ও আমেরিকার একশ জন অ্যাকাডেমিশিয়ান এর সদস্য। অধ্যাপক খানের কাছ থেকে শুনে তাঁরা বিস্তারিত একটি বিবরণ দিয়েছিলেন। তবে, নিহত হয়েছেন বলে যাঁদের নাম দিয়েছিলেন কিন্তু হননি তাঁরা হলেন- ড. এস. কবির, মুজাফফর হোসাইন [আহমদ] ও কবীর চৌধুরী। তাঁরা পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, সামরিক বাহিনী যা করছে তা শুদ্ধ গণহত্যা- “This was genocide in its cruedest and most abject sense.”
১০০ জন স্বাক্ষরকারীর নাম আমি দিচ্ছি না। যাঁরা বিশ্বখ্যাত সে রকম কয়েকজনের নাম দিচ্ছি— সল বেলো, সমাজচিন্তা ও লেখক, পরবর্তীকালে সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়, ড্যানিয়েল বুরস্টিন, স্মিথাসোনিয়ানের পরিচালক, বিগনিউ ব্রেজনিস্কি, পরিচালক, রিসার্চ ইন্সটিটিউট অন কমিউনিস্ট অ্যাফেয়ার্স, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। উলফ ফিশ্চার, ইতিহাসবিদ, ফ্রি ইউনিভার্সিটি অব বার্লিন। মিল্টন ফ্রিডম্যান, অর্থনীতি, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়, পরবর্তীকালে নোবেল বিজয়ী। আরভিং ক্রিসটাল আরবান ভ্যালুজ, নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়।
সেইমুর মার্টিন লিপসেট, সরকার ও সমাজবিজ্ঞান, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, রিচার্ড লওয়েন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ফ্রি ইউনিভার্সিটি অব বার্লিন। রবার্ট এ লিসবেট, সমাজবিজ্ঞান, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। রবার্ট আর পামার, ইতিহাস, ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়, এডোয়ার্ড পিলস, সমাজ বিজ্ঞান, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়, ডেভিড এ উইলসন, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। তৎকালীন নোবল বিজয়ী যাঁরা স্বাক্ষর করেছিলেন তাঁরা হলেন— হ্যান্তা ও বেন [পদার্থ বিজ্ঞান, কর্নেল], ওয়ার্নার হেইসেনবার্গ [মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়], সুংডাওলি [কলম্বিয়া], ইসিডো আইজাক রাব্বি [পদার্থ বিদ্যা, কলম্বিয়া], চার্লস টাউনস [পদার্থ বিদ্যা, বার্কলি], হ্যারল্ড সি,উরে [রসায়ন, বার্কলি] এবং ইউজিন পি. উইগনার [পদার্থ বিদ্যা, প্রিন্সটন]।
সূত্র: A.M.A. Muhith, American Response
দলিলপত্র: খন্ড ১৩
একাত্তরের বন্ধু যাঁরা- মুনতাসীর মামুন