You dont have javascript enabled! Please enable it! ফ্রেন্ডস অব ইস্টবেঙ্গল সংগঠনের বাংলাদেশের অনুকূলে জনমত সৃষ্টি - সংগ্রামের নোটবুক

পূর্ববঙ্গের বন্ধু

এতদিন ধারণা ছিল ফিলাডেলফিয়ায় চার্লস কাহন যে সংগঠনটি গড়ে তুলেছিলেন তাই পরিচিত ছিল পূর্ববঙ্গের বন্ধু বা ফ্রেন্ডস অব ইস্টবেঙ্গল নামে। এখন দেখা যাচ্ছে ওহিয়ো, আরিজোনা, নিউ ইয়র্ক প্রভৃতি রাজ্যেও ‘ফ্রেন্ডস অব ইস্টবেঙ্গল’ গড়ে উঠেছিল। এরা নিজেদের কখনও ফিলাডেলফিয়ার সংগঠনের শাখা হিসেবে ঘোষণা করেনি। তাতে মনে হচ্ছে স্বাধীনভাবে এসব উদ্যোগ গড়ে উঠেছিল। তবে, চার্লস কাহনের সংগঠন হয়ত তাদের প্রণোদনা যুগিয়েছিল বা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। এমনও হতে পারে বাংলাদেশ ডিফেন্স লিগ ছিল এসব সংগঠন গড়ে তোলার উদ্যোক্তা।
ওহিয়োর কলম্বাসে ওহিয়ো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ২৯ জুলাই জনা পনের ছাত্র শিক্ষক এক বৈঠকে বসেন বাংলাদেশের দুর্দশা নিয়ে আলোচনার জন্য। ৫ আগস্ট সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষজনকে জড়ো করে আরেকটি বড় সভা আহ্বান করা হয়। প্রায় ৬০ জন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সভায় বক্তৃতা করেন অক্সফোর্ডের ড. জে. কে. ভট্টাচার্য যিনি বাংলাদেশের ব্যাপারে খুবই সক্রিয় | সভায় উপস্থিতজন সমর্থন করেন কমিটির উদ্দেশ্য অর্থাৎ বাংলাদেশকে সহায়তা করতে হবে।
প্রথমেই তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন স্থানীয় কংগ্রেস সদস্য ও প্রেসিডেন্টকে আবেদন জানানোর। তাদের অনুরোধ করা যেন তাঁরা পশ্চিম পাকিস্তানকে সামরিক বা অর্থনৈতিক সহায়তা না দেন। এক সপ্তাহে তাঁরা ১০০টি টেলিগ্রাম পাঠাতে সক্ষম হন।
আরিজোনার টেম্পে-তেও গঠন করা হয় ফ্রেন্ডস অব ইস্ট বেঙ্গল। তাঁরা এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের দুর্দশা তুলে ধরে সহায়তার আহ্বান জানান। রাজধানী ফিনিক্স-এ ফেডারেল অফিসের সামনে ধর্ণা দেন। এর উদ্দেশ্য ছিল, স্থানীয় জনসাধারণকে সচেতন করে তোলা কারণ তাঁরা এ বিষয়টি সম্পর্কে তেমন অবগত নন। স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় এ সম্পর্কিত কোনো খবরাখবরই নেই।
তাঁরা সরকারের কাছে আবেদন জানান, পশ্চিম পাকিস্তানকে সহায়তা বন্ধের। টেম্পে ও ফিনিক্সের শান্তিকেন্দ্র, ক্যাথলিক সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস, ইউনিসেফ এ গ্রুপের উদ্যোক্তা। এ পর্যন্ত তাঁরা ১০০ ডলার চাঁদা সংগ্রহ করে ইউনিসেফ তহবিলে জমা দিয়েছেন। সেপ্টেম্বরে তাঁরা ঠিক করেছিলেন বাংলাদেশের ওপর একটি আলোচনা সভা করবেন।
মিলওয়াউকী পিস অ্যাকশান কমিটিও বেশ কিছু মানুষজন নিয়ে সভা আহ্বান করে বাংলাদেশের দুর্দশায় সহায়তা দেওয়ার জন্য।
 ১৪ আগস্ট এক সমাবেশের আয়োজন করে। ইউএন প্লাজায় অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে প্রায় ৫০০ মানুষ যোগ দেন। সমাবেশে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ লীগের ড. আলমগীর, পশ্চিম পাকিস্তানের দু’জন প্রখ্যাত স্কলার ড. একবাল আহমদ ও এজাজ আহমদ এবং কোয়েকার প্রজেক্টের এস জে এভেরি। সমাবেশে ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশের উদ্যোগে মুদ্রিত বাংলাদেশ সম্পর্কিত ৮০ পৃষ্ঠার একটি পুস্তিকা বিতরণ করা হয়।
বাংলাদেশের অনুকূলে জনমত সৃষ্টি করতে হলে কী কী করতে হবে সে জন্যও তাঁরা সুদীর্ঘ একটি পরামর্শপত্র তৈরি করে বিলি করেছিল।

সূত্র: দলিলপত্র: খন্ড ১৩
একাত্তরের বন্ধু যাঁরা- মুনতাসীর মামুন