You dont have javascript enabled! Please enable it! শরণার্থী জরুরি তহবিল - সংগ্রামের নোটবুক

শরণার্থী জরুরি তহবিল

বাঙালি শরণার্থীদের সহায়তা করার জন্যে যুক্তরাষ্ট্রে অনেক সংস্থা গড়ে উঠেছিল। এর মধ্যে একটি হলো মিশিগানের ইস্ট ল্যানসিং-এ গড়ে ওঠা ইস্ট পাকিস্তান ইমারজেন্সি রিফিউজি ফান্ড। এটি ছিল বিধিবদ্ধ সংস্থা। এ সম্পর্কে তথ্য তেমন নেই। তবে, অনুমান করে নিতে পারি সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের দিকে তা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। এ উদ্যোগে ভারতীয়, মার্কিন ও বাংলাদেশিরা যুক্ত ছিলেন। সংস্থার সভাপতি ছিলেন শ্রীকুমার পোদ্দার। যোগাযোগের প্রধান ব্যক্তি ছিলেন কমলেশ পারেখ।
১ নভেম্বর এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাঁরা তাদের কর্মকাণ্ডের কথা জানিয়েছিলেন। তাদের মতে, ভারতে শরণার্থীদের যারা সহায়তা করছে তাদের অধিকাংশই এ উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত হবে। তিনটি প্রধান সংস্থা কেয়ার, ইউনিসেফ ও ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি ইতোমধ্যে বর্তমান সংস্থার জাতীয় উপদেষ্টা কমিটিতে তাদের প্রতিনিধির নাম ঘোষণা করেছে। উপদেষ্টার সংখ্যা হবে ১০০।
আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত সংস্থাগুলোর মাধ্যমে দান দেওয়া হবে। যেমন, আমেরিকান রেডক্রস, চার্চ ওয়ার্ল্ড সার্ভিস, ক্যাথলিক রিলিফ সার্ভিসেস এবং প্রাইম মিনিস্টারস (ইন্দিরা গান্ধী) রিলিফ ফান্ড।
ইতোমধ্যে যাঁরা সংস্থার উদ্যোক্তা হতে রাজি হয়েছেন তাঁরা হলেন—
১. চেস্টার বওলস, ভারতে নিযুক্ত প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।
২. কংগ্রেস সদস্য দ্রিনান, ম্যাসাচুসেটস।
৩. রেভারেন্ড হোমার জ্যাক, ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স অব রিলিজিয়ান ফর পিস
৪. হেনরী নাইলস, চেয়ারম্যান, বাল্টিমোর লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
৫. উইলিয়াম প্লাইমেট, চেয়ারম্যান, প্রেফারড রিস্ক ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, ডেস মইনস, আইওয়া।
৬. মরিস ডিস, অ্যাটর্নি, মন্টগোমারী, আলাবামা।
৭. ম্যাক্সওয়েল ডেন, ডয়েল ডেন বার্ণবাক, নিউ ইয়র্কের বিজ্ঞাপনী সংস্থা।
৮. প্রফেসর নোয়াম চমস্কি, এম আই টি।
ইতোমধ্যে সংস্থার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৩০০,০০০ ডলার জমা হয়েছে। প্রতিদিন কয়েক হাজার ডলার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হচ্ছে দান হিসেবে। ইতোমধ্যে শরণার্থীদের সহায়তা দেবার জন্য সাত সংস্থাকে অনুদান দেওয়া হয়েছে—
১. ইউনিসেফ ২০,০০০ ডলার
২. কেয়ার ২০,০০০ ডলার
৩. ইন্টারন্যাশনাল রেস্কিউ কমিটি ২০,০০০ ডলার
৪. আমেরিকান রেডক্রস ১০,০০০ ডলার
৫. চার্চ ওয়ার্ল্ড সার্ভিস ১০,০০০ ডলার
৬. ক্যাথলিক রিলিফ সার্ভিস ১০,০০০ ডলার
৭. প্রাইম মিনিস্টারস রিলিফ ফান্ড ১০,০০০ ডলার
সংস্থার আরো কিছু তথ্য পাই ১৫ নভেম্বরে। ১ ডিসেম্বর তাঁরা ইস্ট ল্যানসিং-এ বড় ধরনের একটি কনভেনশনের আয়োজন করেছিল। তাঁরা দ্বারে দ্বারে গিয়ে সাহায্য সংগ্রহ করার জন্য প্রচার চালাতে চাইছিল। সে জন্য ইস্ট ল্যানসিং-এ বড় ধরনের একটি কনভেনশনের আয়োজন করেছিল। উদ্দেশ্য ১০ মিলিয়ন বা এক কোটি মানুষ সংগ্রহ করা যাঁরা আগামী ছয়মাস প্রতিদিন মাত্র ৩৩ সেন্ট করে দান করবেন এ ফান্ডে। তাঁরা জানিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ২০ কোটি লোকের মধ্যে পাঁচ ভাগও সাড়া দেন তা হলে তাঁরা
“Could launch the greatest rescue operation in human history.”.
সংস্থা প্রচারপত্রে বলেছিল ৫ ভাগ মানুষের সাড়া তাঁরা পাবেন। তাঁরা আরেকটি পরিকল্পনা করেছিলেন যার নাম ছিল ‘বুধবারের মানুষ’। প্রতি বুধবার দুপুরের খাবার না খেয়ে খাবারের টাকাটা যাঁরা দান করবেন তাঁরা হবেন— “Wednesdays people the people of Bangladesh.” তাদের মতে এই উদ্যোগটা হচ্ছে ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করা বা অন্য কথায় বাঙালি জীবন ও সংস্কৃতি সম্বন্ধে অবহিত হওয়া। ডিসেম্বর ১ তারিখ বুধবার এই সম্মেলন আহ্বান করা হয়েছিল। অধিবেশনে সিনেটর কেনেডি থেকে আরো অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
এ উদ্যোগের সঙ্গে যাঁরা জড়িত ছিলেন তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের নাম পেয়েছি। তাঁরা হলেন—কেনেথ স্মিথ, সেইলা ডা, রন ইনডেন, ইসলাম তরফদার এবং শামসুল বারী। শেষোক্ত দু’জন ছিলেন বাংলাদেশি।
বাংলাদেশ ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন হয়ে গেলে স্বাভাবিকভাবে এই উদ্যোগ কার্যকর হয়নি।

সূত্র: স্বাধীনতার দলিলপত্র, খন্ড ১৩
একাত্তরের বন্ধু যাঁরা- মুনতাসীর মামুন