পিটার শোরের লড়াই
ব্রিটিশ রাজনীতিবিদদের মধ্যে বাংলাদেশের পক্ষে লড়াইয়ে লেবার দলীয় নেতা পিটার শোর অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। এর একটি কারণও ছিল। বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা থেকে তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন। সুতরাং বাঙালিদের সুখ-দুঃখের সঙ্গে তাঁকে জড়িত হতে হয়েছিল। বাংলাদেশ আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই তাঁরা বাংলাদেশের পক্ষে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে আসছিলেন, সমাবেশ করছিলেন।
আগস্টের ৩১ তারিখ দিল্লিতে আসেন শোর। এসেই বলেন, পুরনো একটি দেশ মৃত্যু শয্যায়, আর নতুন একটি দেশ জন্মাবার অপেক্ষায়। তাঁর ভাষায়—
“The happenings in Bangladesh are the death thores of an old nation (Pakistan) and birth of a new nation (Bangladesh).”
বাংলাদেশ সমস্যার সমাধানকল্পে শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ সরকারের নেতারা জানিয়েছেন, স্বাধীনতা ছাড়া পূর্ববঙ্গে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরবে না। তিনি জানান, দেশে ফিরে সরকারের কাছে দাবি জানাবেন, পাকিস্তানে অবিলম্বে সহায়তা বন্ধ করতে। শুধু তাই নয় পাকিস্তানের সামরিক শাসকরা যতদিন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমন করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে ততদিন যুক্তরাজ্যের উচিত হবে না পাকিস্তানকে কোনো রকম সহায়তা করা।
লন্ডনে ফিরে এসে ২ সেপ্টেম্বর পিটার শোর একটি বড় ধরনের বিবৃতি দেন। স্টেপনি থেকে নির্বাচিত পিটার শোর বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানকে কোনোরকম সহায়তা করা ব্রিটেনের উচিত নয়। পিটার শোর দিল্লি ও পশ্চিম পাকিস্তানে এক সপ্তাহের সফর শেষে ফিরে এসে এই বিবৃতি দেন।
তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর এডোয়ার্ড কেনেডি ভারত সফর থেকে ফিরে এসে যা বলছেন তাতে বোঝা যাচ্ছে, মার্কিন রাজনীতিবিদদের মনোভঙ্গি বদলাচ্ছে। শুরু থেকেই শোর জানাচ্ছেন, দু’টি দেশের দূরত্ব ছিল ১০০০ মাইল। এখন রাজনৈতিক ও সংশ্লিষ্ট উদ্দেশ্য পূরণেও দু’পক্ষের দূরত্ব একই রকম। বন্ধন এখন ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন।
তাঁর ভাষায়— “From the start they were separated by 1,000 miles geographically. Now they are separated by an equal distance in terms of their political goals and their sense of common purpose. The bonds have been broken and shattered.” পিটার শোরের মতে, পাকিস্তান এখন ভেঙে গেছে।
সূত্র: দলিলপত্র: খন্ড ১৩
একাত্তরের বন্ধু যাঁরা- মুনতাসীর মামুন