You dont have javascript enabled! Please enable it!

সোনাইমুড়ী প্রতিরোধ, নোয়াখালী

পাক হানাদারবাহিনীর লোকজন আসছে, বিভিন্ন দিক থেকে তাদের প্রতিরোধ করা হচ্ছে। বেশির ভাগ সময়ই তাদের মেশিনগানের মুখে নোয়াখালির মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ টিকতে পারছে না। তারা আস্তানা গাড়ছে, পুরো নোয়াখালি দখল করে ফেলছে। এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত সুবেদার লুৎফুর রহমানের বাহিনীই লড়ে যাচ্ছেন, প্রতিরোধ করছেন, বাধা দিচ্ছেন। আওয়ামীলীগ সংগঠকরা তাঁদের সঙ্গে ছিলেন। বিভিন্ন জায়গায় অ্যামবুশ করে সাবার করার চেষ্টা করেছেন সুবেদার লুৎফর রহমানের দল। মে মাসের ২৬ তারিখে এ জোন কমান্ডার লুৎফুর রহমান এর নির্দেশে সুবেদার অলিউল্লাহ, সুবেদার শামছুল হক, মামুনল ইসলাম বাকেরের নেতৃত্বে সোনাইমুড়ীর দক্ষিণে দেওয়ানজীর হাট রেলওয়ে পুল-এর দক্ষিণে মুজিববাহিনীর ট্রুপ নিয়ে ওঁৎ পেতে বসে থাকে। পূর্বেই তারা জানত পাকবাহিনীর গাড়ির বহর এই রাস্তা দিয়ে আসা-যাওয়া করে। তারা সংখ্যায় ছিল ১০/১২ জন। সকাল ঠিক দশটা বেজে সামান্য। বেশী তারা লক্ষ্য করলো পাকবাহিনী একটি বহর এগিয়ে আসছে। কুমিল্লার দিকে থেকে গাড়ির বহর আসছে। সুবেদার লুৎফুর রহমানের বাহিনীও প্রস্তুত। গাড়ির বহর তাদের সামনে পৌঁছলে গাড়িকে লক্ষ্য করে শুরু হয় গোলাগুলি। এই আক্রমণে পাকবাহিনীর ১ জন মেজর, ১ জন ক্যাপ্টেন ও ৪ জন সিপাহী নিহত হয়। লাশ নিয়ে পাক হানাদারবাহিনী তাড়াতাড়ি টেকনিক্যালে আসে। তারা সেখানে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করেনি। কেননা তারা ভেবেছিল আরও অপেক্ষা করলে আরও কয়েকজনের লাশ পড়তে পারে। লাশ নিয়ে যখন টেকনিক্যালে পৌঁছে তখন টেকনিক্যালে অবস্থানরত হাজার হাজার পাকসৈন্য ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে প্রতিশোধের আগুনে। মিনিট কয়েকের মধ্যে শত শত পাকসৈন্য সে জায়গায় পৌঁছে যায় এবং নাওতোলা কাড়ারপাড়, সোনাইমুড়ী ও বাট্টাগ্রাম আক্রমণ করে। এবং ১২৬ জন নিরীহ মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়। শুধুমাত্র নিরীহ জনগণকে হত্যা করেই তারা ক্ষান্ত থাকেনি। জ্বালিয়ে দেয় প্রায় সব বাড়ি ঘর। ভেঙে যেতে থাকল বিভিন্ন স্থানে তৈরি হওয়া কন্ট্রোলরুম। মুক্তিযোদ্ধারা বিচ্ছিন্নভাবে তাদের মোকাবেলা করতে থাকে। পুরা নোয়াখালীর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় পাকবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকাররা।
[88] জোবাইদা নাসরীন

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!