সাপাহারের যুদ্ধ, নওগাঁ
সাপাহার যুদ্ধের স্থানটি বাজার এলাকা হওয়ায় স্থানটি পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে ছিল উঁচু। এই এলাকায় কিছু মাটির ঘর। তাছাড়া সাপাহার-পত্নীতলা-মহাদেবপুর প্রধান সড়কটি উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত। এই রাস্তার উত্তর পাশে আমবাগান, দক্ষিণে সিএনবি রেস্ট হাউস এবং পশ্চিম পাশে পুকুর দিয়ে ঘেরা। পাকবাহিনীর মূল শক্ত ঘাঁটি ছিল সাপাহার পাইলট স্কুল। সেখান থেকে তারা খঞ্জনপুর, নতপুর, আইহাই, আগ্রাদিগুন এবং হাপুনিয়ার দিকে টহলের মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তার করে এবং খঞ্জনপুর, নতপুর এলাকায় ছোট ছোট ক্যাম্প গঠন করে। মুক্তিযোদ্ধারা এই খবর পেয়ে তাদের টহল দলের ওপর আক্রমণ করে তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং খঞ্জনপুর ব্রিজ ধ্বংস করে। এরপর থেকেই উভয় পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হয়। সাপাহারের যুদ্ধের বিবরণ নিম্নরূপঃ
ক. পাক প্রতিরক্ষা পরিকল্পনাঃ পাকবাহিনীর একটি করে কোম্পানি যথাক্রমে এলাকা আমবাগান, পুকুর পাড়, পাইলট স্কুল এবং সিএনবি রেস্ট হাউসে অবস্থান গ্রহণ করে এবং চতুর্মুখী প্রতিরক্ষা অবস্থান নেয়।
খ. মুক্তিযীদ্ধাদের আক্রমণ পরিকল্পনা ঃ ক্যাপ্টেন ইদ্রিসের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হয়ে ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে সাপাহারকে শত্রুমুক্ত করার লক্ষ্যে আক্রমণ পরিকল্পনা করে। মুক্তিবাহিনীর ৩টি প্লাটিনকে পাক হানাদারদের ৩টি অবস্থানের ওপর আক্রমণ রচনা করার দায়িত্ব প্রদান করা হয়। (১) ক্যাপ্টেন ইদ্রিসের প্লাটুন এলাকা আমবাগান (২) হাবিলদার আলী আহম্মেদের প্লাটুন এলাকা পুকুর পাড় (৩) হাবিলদার আলী আকবরের প্লাটুন এলাকা সিএনবি রেস্ট হাউস। গ. ক্যাপ্টেন ইদ্রিস তার প্লাটুন নিয়ে পোরশা-পত্নীতলা সড়কের পৃর্ব পাশে আমবাগানে অবস্থিত শত্রুর অবস্থান থেকে আনুমানিক ৩০০-৪০০ গজ দৃরে অবস্থান গ্রহণ করে এবং হাবিলদার আলী আহম্মেদের প্লাটুন পুকুরপাড় থেকে উত্তরে সাপাহার-নওগাঁ রাস্তার অপর পাড়ে অবস্থান নেয়। ঘ. ১৩ সেপ্টেম্বর রাত ৩টায় মুক্তিবাহিনী শত্রু অবস্থানের ওপর প্রচণ্ড গুলিবর্ষণ শুরু করে। এই গুলিবর্ষণ থেমে থেমে ভোর ৫টায় পর্যন্ত স্থায়ী হয়। তারপর মুক্তিবাহিনী ত্রিমুখী আক্রমণ রচনা করে। যুদ্ধের পরিসমাপ্তিঃ দিনের আলোর সাথে সাথে পাকবাহিনী তাদের অবস্থান থেকে প্রতিয়াক্রমণ রচনা করলে মুক্তিবাহিনী অল্প সময়ের জন্য তাদের অবস্থানে থামতে বাধ্য হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের এই ত্রিমুখী আক্রমণের খবর পেয়ে পত্নীতলাইয় অবস্থানরত পাবাহিনী সাপাহারে অবস্থানরত তাদের সঙ্গীদের শক্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে সকাল ৬টায় পত্নীতলা-সাপাহার পথ ধরে সাপাহারে চলে আসে। এভাবেই অসমাপ্ত থেকে যায় সাপাহারের যুদ্ধ।
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত