সাতগাঁও অপারেশন, মৌলভীবাজার
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল থেকে প্রায় ১০ কি. মি. দক্ষিণে সাতগাঁও অবস্থিত। হবিগঞ্জ জেলার রশিদপুর থেকে মৌলভীবাজার জেলা পর্যন্ত বিস্তৃত রেললাইনটি সাতগাঁও হয়ে কমলগঞ্জ গিয়েছে। অক্টোবর মাস। মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন দলে দেশের ভেতরে প্রবেশ করছে। ৪ নং সেক্টরের অধীন রাতাছড়া ক্যাম্প থেকে এ ধরনের দু’টি দল সাতগাঁও সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে। ২৪ জন যোদ্ধার প্রথম দলের দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন ছাত্রনেতা আবদুল ওহাব চৌধুরী ও রফিক উদ্দিন চৌধুরী (রানা)। প্রতিটি দল ক্যাম্প থেকে প্রায় ৩০ মাইল পথ পায়ে হেঁটে হেঁটে সাতগাঁও পৌঁছেন। এখানকার এক মুক্তিযোদ্ধা গঙ্গেশ বাবুর ছনখলায় আত্মগোপন করে দিন কাটায় তারা। উভয় গ্রুপেরই গন্তব্যস্থল আরো অভ্যন্তরে। প্রথম দলটি আরো ১৫ মাইল ভেতরে হাইল হাওর অতিক্রম করে দিনারপুর চলে আসে। কিন্তু ১ সপ্তাহ দিনারপুরে অতিবাহিত করেও তারা কোনো রকম অপারেশন করতে পারেনি। অন্যদিকে তাদের অবস্থানের খবরও কিছু কিছু প্রকাশ হয়ে পড়ে। এতে করে তাদের নিরাপত্তার প্রতিও হুমকি সৃষ্টি হয়। দেওয়ান আবদুল ওহাব চৌধুরীর বাড়ি এ এলাকাতেই। তার নিরাপত্তার কোনো সমস্যা নেই। তাই তিনি এখানে অবস্থান করতে চান। এদিকে আবদুল মুকিত ও রানু ফিরে এসে সাতগাঁও অপারেশন করার পক্ষপাতী। অবশেষে তাদের গ্রুপটি দুভাগে ভাগ হয়ে যায়। আবদুল ওহাব কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে নিজ বাড়িতে অবস্থান করতে থাকেন। মুকিত ও রানু বাকিদের নিয়ে আবার সাতগাঁও রওনা দেন। এর জন্য একটি নৌকা ভাড়া করে সবাই তাতে চড়ে বসেন। হাইল হাওরের বুক চিরে নৌকায় চেপে অগ্রসর হচ্ছে যোদ্ধারা। সেই সাথে পরিকল্পনা করছেন সাতগাঁওয়ে পাকিস্তানী বাহিনীর ক্যাম্প আক্রমণের। এদিকে পাকিস্তানী শত্রুরা যোদ্ধাদের নৌকাযোগে আগমনের সংবাদ অবগত হয়ে যায়। ফলে নৌকা থেকে নামার সাথে সাথেই তারা আক্রান্ত হন। কোনোরকম প্রতিরোধের সুযোগ পাননি তারা। ধরা পড়ে যান সবাই। এখান থেকে তাদের সবাইকে ধরে চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয় মাইলখানেক দূরে শত্রুর ক্যাম্পে। প্রত্যেকের ওপর অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন চালায় তারা। আঘাতে আঘাতে মুক্তিযোদ্ধাদের দেহ ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। তারপর সেই অবস্থাতেই এখান থেকে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় শ্রীমঙ্গলে। আবদুল মুকিত, রানু, আবদুস শহীদ, সুদর্শনসহ ৮ জন যোদ্ধা সেই ক্যাম্পে শহীদ হন। দ্বিতীয় দলটি এ ক্যাম্পে আক্রমণ পরিচালনার পরিকল্পনা করেও বারবার ব্যর্থ হন। অবশেষে তারও চলে যান আরো ভেতরে এবং ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েন।
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত