সাগরদিঘী যুদ্ধ, টাঙ্গাইল
সাগরদিঘী টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর থানায় অবস্থিত। ৭ ই আগস্ট টাঙ্গাইল ময়মনসিং সড়কে অবস্থিত মধুপুর থানাধীনে জলছত্র রসুলপুরের দিক থেকে সাগরদীঘির দিকে হানাদাররা এগুতে থাকে। ঐ পথে রাঙ্গামাটিতে ঘাঁটি গেড়ে বসেছিল কাদেরিয়া বাহিনীর ১১ নম্বর কোম্পানি। তারা সংবাদ পায়, এক কোম্পানি হানাদার ও শতাধিক রাজাকার রাস্তার আশপাশে ঘরবাড়ি জ্বালাতে জ্বালাতে এগিয়ে আসছে। শত্রুর হামলার সম্ভাব্য ধরন দেখে কোম্পানি কমান্ডার মনির আরও মুক্তিযোদ্ধা চেয়ে পাঠায়। দক্ষ কমান্ডার আবদুল হাকিমকে তার কোম্পানি দিয়ে মনিরের সাহায্যে এগিয়ে যেতে নির্দেশ দেন কাদের সিদ্দিকী। সিনিয়র কমান্ডার আবদুল হাকিম মনিরের কাছ থেকে মূল নেতৃত্বভার নিয়ে শত্রু হামলা প্রতিহত করতে সচেষ্ট হন। তিনি স্থান ঘাঁটি থেকে এগিয়ে রাস্তার নানাস্থানে অ্যামবুশ করেন।
আছিমের কোম্পানি কমান্ডার লালটুকেও নির্দেশ পাঠানো হয়, সে যেন ঘাঁটির দায়িত্ব কমান্ডার ইদ্রিসের হাতে তুলে দিয়ে কোম্পানির অর্ধেক যোদ্ধা নিয়ে হাকিমকে সাহায্য করতে রাঙ্গামাটির দিকে এগিয়ে যায়। মনিরের নেতৃত্বধীন তিন’শ ও হাকিমের নেতৃত্বধীন দুশ মুক্তিযোদ্ধার কাছে গিয়ে সে তার উদ্দেশ্যের কথা জানায়। রাঙ্গামাটিতে সহযোদ্ধাদের মনোবল দেখে অভিজ্ঞ কমান্ডার হাকিম আনন্দিত হন। কিন্তু শত্রুর অস্ত্রবল মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে উন্নত ও বেশি হওয়ার কারণে তিনি সম্মুখ যুদ্ধে প্রাধান্য না দিয়ে চোরাগুপ্তা আক্রমণের পরিকল্পনা নেন। মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কয়েকটি দলে বিভক্ত করে আশেপাশের প্রায় দু’তিনমাইল জায়গা জুড়ে গ্রামের ভিতর রাখা হয়।
হানাদাররা তাণ্ডব চালাতে চালাতে এগিয়ে আসছিল। রাঙ্গামাটির তিন মাইল উত্তরে হানাদাররা প্রথম মুক্তিবাহিনীর আক্রমণের মুখে পড়ে। হঠাৎ আক্রান্ত হয়ে শত্রুরা জ্বালাও পোড়াও বন্ধ করে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র থেকে অগ্নিবৃষ্টি শুরু করে। এতে আশেপাশের ১০/১২ মাইল এলাকা থরথর করে কেঁপে উঠে। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম আঘাতেই ২/৩ জন হানাদার নিহত ও ৭/৮ জন গুরুতর আহত হয়। শত্রুদের অস্ত্রশস্ত্র বহনকারী চারটি মহিষের গাড়ি গুলির সাথে সাথে মহিষের বিদ্যুবেগের কারণে রাস্তার পাশে গাছে লেগে উল্টে পড়ে যায়। এমন বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে শত্রু আরও মাইল-দুই এগিয়ে আসে। এরপর শুরু হয় তাদের পিছু হটার পালা।
কমান্ডার হাকিমের কোম্পানির অত্যন্ত সাহসী যোদ্ধা পুলিশের সাইদুর খুব কাছে থেকে হানাদারদের আঘাত হানে। মুক্তিযোদ্ধাদের আঘাতে শত্রুবাহিনীর নেতা একজন ক্যাপ্টেন ও তার সহকারী একজন সুবেদার নিহত হওয়ায় শত্রুরা নেতৃত্বহীন হয়ে পিছু হঠতে শুরু করে। রাস্তার দু’পাশ থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে শত্রুর চারটি মৃতদেহ, তিনজন আহত যোদ্ধাসহ ১৬/১৭টি রাইফেলও এস এমজি এবং হাজার দশেক গুলি ফেলে পালিয়ে যায়।
[৫৯৫] ফিরোজ খায়রুদ্দিন
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত