You dont have javascript enabled! Please enable it!

শ্রীনগর থানা অভিযান, মুন্সিগঞ্জ

একাত্তরের মে মাসে পাকসেনাবাহিনী মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানায় ক্যাম্প স্থাপন করে। এ থানায় মুক্তিবাহিনীর নানামুখি কর্মতৎপরতার কারণে পাকসেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের কর্মকান্ড চালাবার সুযোগ ও সাহস পাচ্ছিল না। এমতাবস্থায় তারা থানা ছেড়ে চলে যাবার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এ সংবাদ গোপনে মুক্তিসেনাদের কাছে পৌছে যায়। ২৯ নভেম্বর সকালবেলা শ্রীনগর থানা পুলিশের মাধ্যমে কাজীর পাগলা ক্যাম্পে খবর আসে যে পাকবাহিনী ও রাজাকাররা শ্রীনগর থানা ত্যাগ করে লৌহজংয়ের দিকে পালিয়ে যাচ্ছে। এই সংবাদের ভিত্তিতে আশেপাশের সকল মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট সমূহকে গোয়ালীমান্দ্রা হাটে জরুরী ভিত্তিতে মিলিত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়, বেলা ১০:০০ মধ্যেই সব মুক্তিসেনা একত্রিত হয়ে পাকবাহিনীকে ধ্বংসের লক্ষ্যে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে শ্রীনগর লৌহজং খালের পার্শ্বে অবস্থিত দক্ষিণ পাইকসা গ্রামে উপস্থিত হয়। খালের পশ্চিম পাড়ে সোলায়মানের নেতৃত্বে একটি বড় দল, পূর্ব পাড়ে ঢালী মোয়াজ্জেম ইকবালের নেতৃত্বে অন্য একটি দল অবস্থান নেয়। আওলাদ হোসেন একটি ছোট দল নিয়ে খালের পশ্চিম দিকে অবস্থিত কামারখোলা গ্রামের পূর্ব দিকে অবস্থিত বাড়িটিতে অবস্থান গ্রহণ করে। অর্থাৎ পাক সেনাদের দক্ষিণ ও পশ্চিম দিক দিয়ে যাতায়াত বন্ধ করে দেয়া হয়। আনুমানিক বেলা ১১:০০ টার দিকে পাক সেনারা তিনভাগে বিভক্ত হয়ে শ্রীনগর থেকে লৌহজংয়ের দিকে দক্ষিণে যাত্রা করে। পাকসেনাদের একদল খালের পশ্চিম পাড় দিয়ে হেঁটে দক্ষিণ দিকে, আর একদল পূর্ব পাড় দিয়ে হেঁটে একই দিকে ও বাকী দলটি ১৪টি নৌকায় চড়ে খাল দিয়ে ত্রিভুজ আকারে অগ্রসর হয়। খালের দুই পাড়ে আগে থেকে অবস্থান নিয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের ২০০ গজের মাঝে পাকসেনারা এসে পড়লে অপেক্ষামান স্বাধীনতাকামীদের আগ্নেয়াস্ত্র গর্জে ওঠে। যুদ্ধে অংশ নেয়া এক মুক্তিযোদ্ধা এ প্রসঙ্গে লিখেছেন- হঠাৎ ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি পাকিস্তানী সৈন্যদের দিকে ছুটে যাওয়ায় হানাদাররা প্রাণের ভয়ে উদ্ভ্রান্ত হয়ে পূর্ব-পশ্চিম ও উত্তর দিকে দৌড়ে পালাতে থাকে। পশ্চিম দিক থেকে পলায়নপর হানাদারদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তেই পশ্চিমে শত্রু সৈন্যদের পলায়নের পথ বন্ধ হয়ে যায়। ইতিমধ্যেই হানাদার বাহিনীর অনেক সদস্যের শোচনীয় মৃত্যু ঘটে। বাকিরা পূর্ব ও উত্তর দিকে দৌড়ে পালাতে থাকে। পলায়নরত অবস্থায় হানাদারদের অনেকেই গ্রামবাসীদের হাতে ধরা পড়ে, এবং সঙ্গে সঙ্গে তাদের পরিনতি হয় শোচনীয় মৃত্যু। যুদ্ধ শুরু হবার পরপরই আতিক উল্লাহ খান মাসুদ আউয়াল মালেকের নেতৃত্বে আতিক গ্রুপ ও ভাগ্যকূল এর সহিদ গ্রুপ যোগদান করলে যুদ্ধের তীব্রতা আরো বৃদ্ধি পায়। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলেই পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী পরাজিত হলে শ্রীনগর থানা শত্রুমুক্ত
হয়।
[৬২৩] হাসিনা আহমেদ

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!