You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
ঢাকাঃ ৪ঠা সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার, ১৮ই ভাদ্র, ১৩৮০

জোট নিরপেক্ষ সম্মেলন

জোট নিরপেক্ষ দেশ সমূহের সম্মেলন শুরু হয়েছে আলজিয়ার্সে। গত রোববার এগারোটা থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন শুরু হয়েছে। সংবাদ প্রকাশের জন্য ব্যাপক জাতি-গোষ্ঠীর মোট সত্তরটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও তাদের প্রতিনিধিরা এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জোট নিরপেক্ষ দেশ সমূহের শীর্ষ সম্মেলনের প্রস্তুতি কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানা গেছে, এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ইথিওপিয়ার প্রতিনিধি দলের নেতা কর্তৃক উত্থাপিত এক প্রস্তাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানরাও এই সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে ইতিমধ্যেই রওনা হয়ে গেছেন। জানা গেছে, যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটো ইতিমধ্যেই আলজিরিয়ায় গিয়ে পৌঁছেছেন। আজ ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী আলজেরিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। আলজিরিয়ার প্রেসিডেন্ট মিঃ বুমেদীন উপমহাদেশের এই প্রখ্যাত নেতাকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানাবেন। সম্মেলন কক্ষের প্রবেশ পথে জোট-নিরপেক্ষ দেশের বিভিন্ন রাষ্ট্রনায়কদের সঙ্গে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিও স্থাপিত হয়েছে বলে সংবাদে প্রকাশ। জোট নিরপেক্ষ দেশ সমূহের এবারের এই সম্মেলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বিশ্ব রাজনীতির ক্ষেত্রে অর্থবহ। সম্মেলনের প্রস্তুতি কমিটির যেখানে প্রকাশিত হয়েছে তাতে আলজিরিয়ার অর্থনৈতিক প্রশ্নের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে এবং বিদেশি মনোপলি ব্যবস্থাকে রাষ্ট্রায়ত্ত করার অধিকারও দাবি করেছে। এছাড়া বিশ্বের বিরোধমূলক প্রশ্নগুলো জাতীয় সম্মেলনের স্তব্ধ গতি করতে না পারে তার জন্য বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য আলোচনা খসড়া তৈরি করেছেন। এবং এ ব্যাপারে তারা সারাক্ষণ ব্যস্ত ভাবে সময় অতিক্রম করেন। সভায় ১৯৭০ সালে লুকাসায় অনুষ্ঠিত জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনের পর হতে এপর্যন্ত সংঘটিত আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও অর্থনীতির পরিবর্তন, পর্যালোচনা এবং এই বৈঠকের জন্যে অনুমোদনকৃত খসড়া দলিলও চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে।
আলজেরিয়ায় অনুষ্ঠিত জোট নিরপেক্ষ দেশ সমূহের এ সম্মেলনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। জোট অন্তর্ভুক্ত রাজনীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি যখন ঘোষণা করেছে জোট নিরপেক্ষ নীতির কথা, এবং যখন সে আদর্শ সামনে রেখে বাংলাদেশ সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছে তখনই বিশ্বের জোট নিরপেক্ষ দেশ সমূহের এই মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বাংলাদেশের দাবি ছিল জোট নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে তাকে প্রথমে স্বীকার করে নেবার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও এই সম্মেলনে যোগদান করবেন তখনই যখন বাংলাদেশকে জোট নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হবে। আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে জোট নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে মেনে নেবার পরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই সম্মেলনে যোগদান করবেন। (অবশ্য এই সম্পাদকীয় লেখার সময় পর্যন্তও আলজেরিয়ার সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু যোগদান সম্পর্কে কোনো সরকারী সংবাদ পাওয়া যায়নি।) তবে বঙ্গবন্ধু না গেলেও তার মহান ভাবমূর্তি সমুন্নতই থাকবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। বস্তুতপক্ষে, এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য হলো সদস্যদেশসমূহের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার বিরোধের নিষ্পত্তি করে প্রগতির পথে জাতিকে এগিয়ে নেওয়া। এছাড়া সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহ যারা তাদের জোটভুক্ত দেশ সমূহের উপর বিভিন্ন উপায়ে নির্যাতন চালায় তাদের বিরুদ্ধে একটি প্রগতিশীল মানবতাবাদি আন্দোলন পরিচালনা করা। আমরা আশা করব বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উপরে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির উৎখাত করার আহ্বান জানিয়ে জোট নিরপেক্ষ দেশ সমূহ তাদের আন্দোলনের গতি আরো তীব্রতর করবেন। যে সকল নেতৃবৃন্দ সম্মেলনে যোগদান করেছেন তাদের মহান ব্যক্তিত্বে বিশ্বব্যাপী শান্তি ও সমঝোতার আন্দোলন পরিচালিত হবে বলেও আমাদের বিশ্বাস। অনুন্নত দেশগুলোর উন্নতি সাধন ও তাদের প্রতিকূল অবস্থার সময় কাটিয়ে ওঠার ব্যাপারে উন্নতিশীল দেশগুলো এই সম্মেলনের মাধ্যমে একটি সহযোগিতামূলক কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবেন বলে আমরা আশা রাখি।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!