You dont have javascript enabled! Please enable it!

শ্যামনগরের যুদ্ধ, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা জেলার ৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ২০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত শ্যামনগর একটি ছোট্ট শহর। এর পশ্চিমে বাদঘাটা, আটালিয়া, উত্তরে কাঁঠালবাড়ীয়া ও দক্ষিণে কাশিপুর। ১৯৭১ সালের ২০ আগস্ট এই শহরে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে এক অপারেশন পরিচালনা করে।
শ্যামনগর ওয়াপদা কলোনিতে পাকবাহিনীর এক প্লাটুন সৈন্যসহ সুদৃঢ় প্রতিরক্ষা ব্যূহ তৈরি করলে মুক্তিবাহিনীর ক্যাপ্টেন নূরুল হুদা শ্যামনগর মুক্ত করার পরিকল্পনা করেন। এ লক্ষ্যে ২০ আগস্ট তিনি দেড়-দুই শ’ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল নিয়ে শ্যামনগরের উদ্দেশ্যে উকসা থেকে রওয়ানা দেন। (মুক্তিযোদ্ধাদের ছিল ৮-টি এলএমজি, ১২-টি এসএমজি, ৩-টি ২ ইঞ্চি মর্টার এবং কয়েকটি এসএলআর।) ক্যাপ্টেন হুদা তাঁর দলসহ রাত ২-টায় শ্যামনগর শত্রু অবস্থানের কাছাকাছি পৌঁছে যান। এরপর তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের তিনটি গ্রুপে বিভক্ত করেন—যার একটির নেতৃত্ব তিনি নিজে এবং অন্য দু’টি গ্রুপের একটির নেতৃত্ব লেফটেন্যান্ট বেগ ও অন্যটির নেতৃত্ব নায়েব সুবেদার আব্দুল গফুরের ওপর অর্পণ করেন।
গ্রুপ তিনটি পরিকল্পনা মোতাবেক নির্দিষ্ট অবস্থানে পৌঁছার পর প্রথমে নায়েব সুবেদার গফুরের দল মর্টার দিয়ে শত্রুর অবস্থানে আঘাত হানতে শুরু করে। সঙ্গে সঙ্গে অপর দু’টি গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধারাও তাদের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের সাহায্যে আক্রমণ চালায়। উভয়পক্ষের মধ্যে শুরু হয় তুমুল সংঘর্ষ। এসময় মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে পাকবাহিনীর প্রতিরক্ষা ব্যূহ ভেদ করে অগ্রসর হওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। এরূপ পরিস্থিতিতে গোলাগুলির শব্দে ভোর প্রায় ৪-টার দিকে কালিগঞ্জ থেকে পাকবাহিনীর একটি প্লাটুন শ্যামনগরে তাদের সহযোগীদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসে। ফলে পাকসেনাদের ফায়ার বেড়ে যায়। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা সুবেদার ইলিয়াস ক্রলিং করে ওয়াপদা কলোনির ভেতর প্রবেশ করে অবস্থান গ্রহণ করে। তাঁকে অনুসরণ করে আরও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা কলোনির ভেতর প্রবেশ করে। প্রতিরক্ষা ব্যূহ ভেদ করার দরুন পাকবাহিনীর অবস্থান অত্যন্ত নাজুক হতে থাকে। কলোনির ভেতর ও বাইরে যুগপৎ আক্রমণে পাকসেনারা দিশেহারা হয়ে পালাতে শুরু করে। ফলে সকাল ৯-টার মধ্যে শ্যামনগর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। অবশ্য এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের চরম মূল্য দিতে হয়। সুবেদার ইলিয়াসসহ ৮ জন মুক্তিযোদ্ধা শাহাদতবরণ করেন এবং পাকসেনারা পালাবার সময় আরও ৬ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে নিয়ে যায়৷ অপরদিকে যুদ্ধের পর ৪ জন পাকসেনার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় এবং আহতাবস্থায় ৪ জন পাকসেনাকে বন্দি করা হয়। ২১ আগস্ট ২৫ জন রাজাকার আত্মসমর্পণ করে। ক্যাপ্টেন হুদা শ্যামনগর থানায় স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন।
[৫৯৪] ইকবাল জাফর খন্দকার

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!