You dont have javascript enabled! Please enable it!

শ্যামপুর-কালুপুর যুদ্ধ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৬ অক্টোবর, বুধবার (১৯ আশ্বিন, ১৩৭৮) সকালে চাঁপাই নবাবগঞ্জ শ্যামপুর-কালুপুর যুদ্ধে ভোলাহাট গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা কামালউদ্দিন হেনা শাহাদৎ বরণ করেন। তাঁর পিতার নাম আঃ জব্বার। এই দিন যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর প্রধান কমান্ডার ছিলেন ক্যাপ্টেন আলতাফ। ডিফেন্স কমান্ডার ছিলেন জয়নাল আবেদীন (চাঁপাই নবাবগঞ্জ)। এছাড়া অন্যান্য ট্রুপস কমান্ডার ছিলেন তুরফান, সেরাজুল ইসলাম বুদ্ধ, আক্তার হোসেন খান কচি ও আঃ মান্নান। মুক্তিবাহিনীর প্রধান ডিফেন্স ছিল শ্যামপুর মহানন্দা নদীর তীর থেকে মনসুর ড্যাং পর্যন্ত। এই ডিফেন্সে প্রায় দেড় শ’জন যোদ্ধা অবস্থান করছিলেন। এদিকে নদীর ওপারে কাশিয়াবাড়ী ডিফেন্সকে বোয়ালিয়ায় অবস্থানরত পাকবাহিনী যেন মহানন্দা নদীর পানির কিনার দিয়ে এগিয়ে এসে ঘিরে অতর্কিত হামলা বা অপারেশন পরিচালনা করে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষতি সাধন করতে না পারে এ জন্য মুক্তিবাহিনীর শ্যামপুর ডিফেন্সকে সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশ দেয়া ছিল। ৩০ সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধা জিন্নাত হোসেন শহীদ হবার পর ওই দিন দিবাগত রাত প্রায় ৮টার দিকে হানাদার বাহিনীর বোয়ালিয়া ডিফেন্সে অতর্কিত হামলা চালিয়ে মুক্তিবাহিনী শত্রু পক্ষের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। মহানন্দার উত্তরপারে নদীর তীর থেকে শ্যামপুর-মনসুর ড্যাং ডিফেন্স থেকে জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে ২৭জন মুক্তিযোদ্ধাকে নদীর চরে অবস্থান নেয়ার জন্য পাঠানো হয়। সূর্যোদয়ের সময়ে মুক্তিযোদ্ধারা নদীর চরে পলি মাটির (বন্যার পানি বেশীর ভাগ নেমে যাবার পর) ওপরের বন্দুকের বেয়নেট দিয়ে মাটি খুঁড়ে আঁড় করে অবস্থান গ্রহণ করেন। এরপর প্রধান কমান্ডার ক্যাপ্টেন আলতাফ নদীর চরে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ভুল পজিশন থেকে উঠিয়ে পুনরায় তাঁদের নির্দেশনা দিয়ে সঠিকভাবে পজিশনে দেন। এক সময় মুক্তিযোদ্ধারা দেখতে পান নদীর এপারে কালুপুরের দিক থেকে নদীর তীর ঘেঁষে কার বাগানের মধ্যে দিয়ে “পা চলা রাস্তা” ধরে এক মহিলা কাশিয়াবাড়ী অভিমুখে হেঁটে যাচ্ছে। সন্দেহজনক মুহূর্তে মুক্তিবাহিনী ওই মহিলাকে পাকবাহিনীর উপস্থিতির সিগন্যাল আঁচ করে এবং হাড্ডা ২ইঞ্চি মর্টারের ২টি গোলা নিক্ষেপ করেন। পর মুহূর্তে জয়নাল আবেদীন এস,এল, আর-এর ১ ম্যাগজিন ব্রাশ ফায়ার করেন। মুহূর্তের মধ্যে কালুপুর আমবাগান থেকে পাক হানাদার বাহিনী এল,এম,জি ও মেসিনগানের গোলা শিলাবৃষ্টির মতো বর্ষণ শুরু করে। রহনপুর ঘাঁটি থেকেও হানাদার বাহিনী তাদের বাহিনীকে ৩ ইঞ্চি মর্টারের সেল নিক্ষেপ করে সাপোর্ট দেয়। দীর্ঘ সময় উভয় পক্ষের যুদ্ধ চলে। হাড্ডা নদীর কিনার থেকে ২ইঞ্চি মর্টারের গোলা নিক্ষেপ করে আর মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহ দিয়ে পাকফৌজকে হুমকি দেন, “জোয়ানেরা, ভয় নাই। পাকফৌজকে ওই দিকে কাশিয়াবাড়ী ডিফেন্স এবং এদিকে আলীনগর দিয়ে ঘিরে ফেলা হচ্ছে তোমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাও”। বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত গোলাগুলির পর পাকফৌজ গুলি ছোঁড়া বন্ধ করে দেয় এবং ডিফেন্স উইথড্র করে পিছু হটে যায়। এদিকে মুক্তিবাহিনী পাকফৌজদের কোন সাড়া না পেয়ে পৌনে ১২টার দিকে ডিফেন্স উইথড্র করে নদীর তীরের স্থানীয় ডিফেন্সে ফিরে আসে। এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের ফল-ইন করে দেখা যায় একজন যোদ্ধা কম। কে নেই তখনো তাঁরা বুঝতে সক্ষম হননি। স্থানীয় ডিফেন্সে খোঁজাখুঁজি করে কাউকে না পাওয়ায় আবার মুক্তিবাহিনী অগ্রসর হয় নদীর চরের যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা দেখতে পান, কামালউদ্দিন হেনা পশ্চিমে মাথা, পূর্বে পা আর দক্ষিণে মুখ রেখে নিথর হয়ে পড়ে আছেন। এলএমজি’র ১টি গুলি তার মাথার নীচের চিবুকে বাম দিক দিয়ে ঢুকে ডান দিক দিয়ে বেরিয়ে যায় আর অপর ১টি রাইফেলের গুলি ডান হাত ভেদ করে। মুক্তিযোদ্ধা জহির (পাবনা) শহীদ কামালউদ্দিন হেনার লাশ বহন করে নিয়ে আসেন এরপর মুক্তিযোদ্ধা আর্জেদকে দিয়ে নৌকায় করে লাশ ভোলাহাটে তাঁর পরিবারের কাছে পাঠানো হয়। ভোরাহাট গ্রামে সামরিক মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ কামালউদ্দিন হেনাকে দাফন করা হয়৷
[৫৭৪] মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!