You dont have javascript enabled! Please enable it!

শাহবাজপুর ক্যাম্প আক্রমণ, সিলেট

ঘাঁটি আক্রমণের জন্য ১২ নং সাবসেক্টরে একটি পরিকল্পনা তৈরি করে সেক্টর কমান্ডার মেজর চিত্তরঞ্জন দত্তকে দেখানো হলে তিনি খতিয়ে দেখে অনুমোদন দেন। এখানে মুক্তাঞ্চল গঠনের জন্য শাহবাজপুর ক্যাম্পের মর্টার পোস্ট ধ্বংস করে পাশে একটি ক্যাম্প স্থাপন করতে হবে। ফলে ১০ আগস্ট অপারেশনের দিন ধার্য করা হয়। ক্যাপ্টেন আব্দুল রব ৫ কোম্পানি মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে অগ্রসর হন। পরিকল্পনা মোতাবেক একটি কোম্পানি শাহবাজপুর পাকবাহিনীর উপর আক্রমণ করে পিছু হটতে বাধ্য করবে। তবে বিয়ানীবাজার থেকে যাতে সাহায্য না আসতে পারে সেদিকের পথ একদল গিয়ে বন্ধ করতে হবে। অন্যদল থাকবে বড়লেখা- শাহাবাজপুর সড়কের নান্দুয়ায়। পরিকল্পনামতো প্রস্তুতের পর ১০মিনিটের মধ্যে ব্যাটারি এম,জি দিয়ে শত্রুসেনাদের উপর আঘাত হানা হবে। ১০ আগস্ট ভোর ৫ টায় মুক্তিবাহিনী অবস্থান নেয়। যথাসময়ে সাবসেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন রবের নির্দেশ আসে। সাথে সাথেই শুরু হয় প্রচণ্ড আক্রমণ। প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে ১৫ মিনিটের মধ্যে পাকসেনা হটতে শুরু করে। ২ ঘণ্টা যুদ্ধের পর শাহাবাজপুর রেল স্টেশনসহ বিরাট এলাকা মুক্তিবাহিনীর দখলে চলে আসে এবং স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়ানো হয়। মুক্তিসেনারা সামনে এগুতে থাকে। যখন সফল হবে সে বিজয় অর্জনের মুহূর্তে অকস্মাৎ পাকসেনাদের গোলাবর্ষণ শুরু হয়। বৃষ্টির মতো গোলাবর্ষণ করে বড়লেখা থেকে পাকসেনারা অগ্রসর হতে থাকে। ক্যাপ্টেন রব মেজর সিআর দত্তের সাথে যোগাযোগ করে পরামর্শ চান। কিন্তু দখলকৃত এলাকাতে টিকে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। প্রথমদিকে পাকসৈন্যরা পিছু হটলে প্রচুর গোলাবারুদ মুক্তিবাহিনী লাভ করে। ক্যাপ্টেন রব সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে পিছু সরে আসেন। এ যুদ্ধে ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ইপিআর হাবিলদার ও কৃতি খেলোয়াড় কুতুবউদ্দিন, নায়েক আব্দুল মান্নান, নায়েক মোজাহিদ আলী, হাবিলদার মোহাম্মদ ফয়েজ ও সিগন্যালম্যান মোস্তাফা কামাল এ যুদ্ধে শহীদ হন। আটগ্রাম বিওপির কাছে মোস্তাফার কবর রয়েছে। নান্দুয়ার সেতুর দায়িত্বপ্রাপ্ত কোম্পানি যথারিতি এগুলে সেতুর উপর পাহারারত রাজাকারদের দেখতে পায়। রাজাকারদের দৃষ্টি ফাঁকি দিয়ে একটি গ্রুপ সেতুর নিচে প্রবেশ করে ঝটপট বিষ্ফোরক দ্রব্য স্থাপন করতে গিয়ে অত্যধিক তাড়াহুড়োর ফলে বিষ্ফোরক সংযোগের কাজ সম্পন্ন করার আগেই বিষ্ফোরণ ঘটলে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল শহীদ চৌধুরী খুশির দু’হাত উড়ে যায়। বিষ্ফোরণের ফলে পাকবাহিনী চলে আসে নান্দুয়ার সেতুর দিকে। ফলে মুক্তিবাহিনী দলটি আক্রান্ত হয়। তাই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে আহত আবদুস শহীদ চৌধুরী খুশিকে নিয়ে পিছু হটতে বাধ্য হয় মুক্তিযোদ্ধা দল। আহত খুশিসহ মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদে ক্যাম্পে ফিরে যায়।

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!