You dont have javascript enabled! Please enable it!

শালদা নদীর প্রথম যুদ্ধ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় যে কয়টি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ ছিল কসবা থানার শালদা নদীর যুদ্ধ। শালদা নদী ও রেলওয়ে স্টেশন পাকবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর উভয়ের জন্য রণকৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যেমন, সিলেট-কুমিল্লা ও কুমিল্লা-ঢাকা ইস্ট পাকিস্তান রেলপথ চলাচলের একমাত্র রাস্তা। আবার শালদা নদী রেলওয়ে স্টেশন ও বাজার ছিল একটা গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বুড়িচং, কসবা এলাকায় যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা ছিল শালদা নদীর পাশ দিয়ে গ্রামের ডিষ্ট্রিক বোর্ডের (বর্তমান স্থানীয় সরকার) কাঁচা জনপথ। ফলে শালদা নদী রেলওয়ে স্টেশন ও গ্রামের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এই জায়গার গুরুত্ব বিবেচনা করে ২নং সেক্টর কমাণ্ডার মেজর খালেদ মোশাররফ, মেজর সালেক চৌধুরী, ক্যাপ্টেন এইচ. এম. গাফ্ফার, ক্যাপ্টেন আবদুল আজিজ পাশা ও ক্যাপ্টেন আশরাফকে নিয়ে ৬ সেপ্টেম্বর বিকালে ২নং সেক্টরের সদর দপ্তর ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মেলাঘরে আলোচনা সভায় বসেন। এ আলোচনায় শালদা নদী রেলওয়ে স্টেশন এলাকা শত্রুমুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। কারণ, পার্শ্ববর্তী মন্দভাগ তখন শত্রুমুক্ত। মন্দভাগ ও শালদা নদী সাব সেক্টরের মধ্যে শালদা নদী রেলওয়ে স্টেশনে পাকবাহিনীর একটা শক্তিশালি ঘাঁটি ছিল। ধারণা করা হয় শালদা নদী রেলওয়ে স্টেশন শত্রুমুক্ত করতে পারলে শত্রুমুক্ত এলাকা বেড়ে যাবে এবং সামরিক ও অন্যান্য দিক থেকে এ এলাকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, এবং শত্রুর মনোবল ভেঙ্গে যাবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ক্যাপ্টেন এইচ. এম. গাফ্ফার ৭ই সেপ্টেম্বর এক কোম্পানি সৈন্য নিয়ে শালদা নদী রেলওয়ে স্টেশনের উত্তর দিকে বায়েক গ্রামে এবং ক্যাপ্টেন আশরাফ এক কোম্পানি সৈন্য নিয়ে মন্দভাগ গ্রাম থেকে এগিয়ে এসে নয়নপুর গ্রামে শত্রুঘাঁটির কিছু দূরে অবস্থান নেন। মেজর সালেক চৌধুরী শালদা নদী পার হয়ে এক কোম্পানি সৈন্য নিয়ে শালদা নদী রেলওয়ে স্টেশনের পশ্চিম দিকে একটি গোডাউনে এবং ক্যাপ্টেন পাশা বাংলাদেশের প্রথম আর্টিলারী বাহিনী নিয়ে মন্দভাগ রেলওয়ে স্টেশনে অবস্থান নেন। সুবেদার জব্বার তার মর্টার সেকশন নিয়ে ক্যাপ্টেন এইচ. এম. গাফ্ফার পিছনের দিকে অবস্থান নেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ৮ই সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৬ টার সময় গোলন্দাজ বাহিনীর ক্যাপ্টেন পাশা প্রথম পাকবাহিনীর অবস্থানের ওপর গোলা ছুঁড়তে থাকেন এবং মেজর সালেক চৌধুরী, ক্যাপ্টেন আশরাফ এবং ক্যাপ্টন গাফ্ফার নিজ নিজ বাহিনী নিয়ে শত্রুদের অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালান। পাকবাহিনীও তাদের গোলন্দাজ ঘাঁটি বুড়িচং, কসবা, কুটি, চানলা থেকে মুক্তিবাহিনীর ওপর অবিরাম গোলাবর্ষণ করে। ক্যাপ্টেন আশরাফের আক্রমণে নয়নপুর থেকে পাকবাহিনী পিছু হটে শালদা নদীর দক্ষিণ পাড়ে চলে যায়। নয়নপুর মুক্তিবাহিনীর দখলে চলে আসে। মেজর সালেক চৌধুরী শালদা নদী বাজার ও গোডাউন দখল করে নেন। এই যুদ্ধ চলে সকাল সাড়ে ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। এরপর পাকবাহিনী তাদের গোলন্দাজ ঘাঁটি বুড়িচং, কসবা, কুটি থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের মুক্ত এলাকা বায়েক, মন্দভাগ, নয়নপুরে অবিরাম গোলাবর্ষণ করতে থাকে। এদিকে মেজর সালেক চৌধুরীর গোলা বারুদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তিনি তাঁর অগ্রবর্তী অবস্থান তুলে নিয়ে মন্দভাগে চলে আসেন। ক্যাপ্টেন আশরাফ ও মেজর সালেক চৌধুরী তাদের বাহিনী ক্যাপ্টেন গাফ্ফার-এর নিকট রেখে ২নং সেক্টরের সদর দপ্তর মেলাঘরে চলে আসেন। এই যুদ্ধের ফলে মুক্তিবাহিনীর নামকরা সাঁতারু হাবিলদার সিরাজসহ ২ জন শহিদ ও ৪ জন আহত হন আর শত্রুদের হতাহতের সঠিক কোন খবর না পাওয়া গেলেও লোক মুখে জানা যায়, ট্রাকযোগে অনেক আহত এবং নিহত সৈনিকদের কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাওয়া হয়। এই যুদ্ধই উভয় পক্ষের প্রথম সম্মুখযুদ্ধ। এ যুদ্ধের পরই মুক্তি বাহিনীর সাহস বেড়ে যায়।
[৫৯৪] মোঃ আবু মুসা

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!