You dont have javascript enabled! Please enable it!

শালমারা ব্রিজ ধ্বংস, পঞ্চগড়

পঞ্চগড় জেলা সদরের তালমা নদীর ওপর শালমারা ব্রিজটির অবস্থান। প্রশাসনিক ঘাঁটি অমরখানা থেকে এই ব্রিজের ওপর দিয়েই পাকিস্তানীরা ভেতরগড় হয়ে নতুন হাট ও টোকপাড়া পর্যন্ত যাতায়াত করে থাকে। শালমারা ব্রিজটি ধ্বংস করতে পারলে শত্রুর চলাচল বাধাগ্রস্ত হবে। মুক্তিযোদ্ধারা তালমা নদীর ওপর শালমারা ব্রিজটি ধ্বংস করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। অপারেশনে গমনের পূর্বে মেজর শংকর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রয়োজনীয় ব্রিফিং দেন। ২৮ জুন, ১৫ জন মুক্তিযোদ্ধার সাথে চল্লিশ পাউন্ড বিস্ফোরক, হলদে রঙের করডেক্স ১০০ ফুট, ৮টা ডেটোনেটর, সেফটি ফিউজ ও সেফটি ক্যাচ, সাথে ২টি স্টেনগান, ৪টা রাইফেল ও ৬টা গ্রেনেড। প্রতিটি স্টেনগানের জন্য দুটি করে ২০ রাউন্ড এবং রাইফেলের জন্য ১৫ রাউন্ড গুলি। কমান্ডারের দায়িত্ব নুরুল হকের ওপর। মাহাবুব আলম তার সহকারী। গাইড মকতু মিয়ার নির্দেশনায় রাত ১১টার সময় মুক্তিযোদ্ধারা ব্রিজের নিকট এসে পৌঁছে। ঘন কালো অন্ধকার রাত। চারদিকে নিঝুম থমথমে পরিবেশ। সন্ধ্যার দিকে বৃষ্টি ছিল। বৃষ্টিভেজা মাটি। নির্দিষ্ট জায়গায় সবাইকে পজিশনে রেখে মতিয়ার ও মাহাবুব ব্রিজের ওপর উঠে কাউকে ব্রিজ পাহারায় দেখতে পেল না। দুই সারিতে ১২টা কাঠের মজবুত মোটা খাম ব্রিজটাকে শক্ত করে দাঁড় করে রেখেছে। নরম ময়দার ঢেলার মতো গোলাকার চার-পাঁচ ইঞ্চি লম্বা এক একটা প্লাস্টিক এক্সপ্লোসিভ। ব্রিজের গোলাকৃতির কাঠের খামের গায়ে ওপর-নিচে করে দুই ধারে আটকে দেয়া হয় চাপ দিয়ে দিয়ে। মাথায় গিঁট দিয়ে কারটেক্সের একটা প্রান্ত আগেই ঢুকিয়ে দেয় হয় এক্সপ্লোসিভের ভেতরে। সার্কিটগুলো সম্পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর সেফটি ফিউজে আগুন লাগানোর পর মুহূর্তের মধ্যে বিকট আওয়াজ। ব্রিজের একাংশ ধসে পড়ল ব্রিজটা পুরো ধ্বংস করতে না পারার দুঃখ সকলের মনে। তবুও আশান্বিত যে, ব্রিজের ওপর দিয়ে পাকসেনারা আর যাতায়াত করতে সক্ষম হবে না।

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!