শাহজীবাজারে মিনালাল খান নিধন অপারেশন, হবিগঞ্জ
হবিগঞ্জ জেলার শাহজীবাজার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে এখানে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। বর্তমানে সিলেট বিভাগের একটি বৃহৎ অংশে এখান থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। সেখানকার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের রেস্ট হাউজে অবস্থান করত মিনালাল খান। তিনি সম্পর্কে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানের ভাগ্নে। কি কাজে তিনি এখানে ছিলেন সাধারণ মানুষ তা জানতেন না। কিন্তু সুন্দরী তরুণীদের ওপর ছিল তার লোলুপ দৃষ্টি। যখন যাকে ইচ্ছা ধরে নিয়ে আসত রেস্ট হাউসে। হোলি খেলত লাজুক বাঙ্গালিদের ইজ্জত নিয়ে। নির্যাতন করত স্থানীয় লোকদের ওপর। এ সংবাদ পেয়ে ক্যাপ্টেন মতিন একটি অপারেশন পরিকল্পনা তৈরি করেন। যেভাবেই হোক মিনালালকে হত্যা করতে হবে। ইয়াহিয়া খান ব্যক্তিগত ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। মানসিক চাপ পড়বে তার ওপর। গঠিত হলো একটি অপারেশন গ্রুপ। এতে ছিলেন খুরশেদ আহমদ খান, নূরুল ইসলাম, রশিদ আলী, মতি মিয়া, ঝাড়ু মিয়া, নূরুউদ্দিন ও আসকির মিয়া প্রমুখ। জুলাইয়ের ৮ তারিখে এই অপারেশন পরিচালিত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা মাইল দূর থেকে পাহাড়ি পথে রওনা হয়ে রাতের আধারে শাহজীবাজার পৌঁছান। সাথে তাদের প্রচুর অ্যান্টিট্যংক মাইন। সেই সাথে স্টেনগানসহ আগ্নেয়াস্ত্রও। বাহননগর গ্রামেই মুক্তিযোদ্ধা আসকিরের বাড়ি। পাশেই আওয়ামী লীগের স্থানীয় ইউনিয়ন সম্পাদক মুরশেদদের বাড়ি। দুটি বাড়ি মিলিয়ে অবস্থান গ্রহণ করে তারা। এখানে মাত্র ৪ দিন অপেক্ষা করেন তারা। এ অপেক্ষার ফাঁকে শুরু হয় পাকবাহিনী সম্পর্কে বিভিন্ন খোজ খবর নেয়া। সংবাদ সংগ্রহ করা হয় নিজস্ব লোক দিয়ে। চতুর্থ দিন শুরু হয় প্রবল বৃষ্টিপাত। এ রকম দুর্যোগ আবহাওয়ার মধ্যেই মুক্তিসেনারা বের হলেন। শাহজীবাজার থেকে যে রাস্তা লালচান বাগানের ভেতর দিয়ে চলে গেছে, তাতেই তারা স্থাপন করে মাইন। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজেই চলে রাস্তায় মাইন বসানোর কাজ। পথঘাট তখন পুরোপুরি জনশূন্য। পরদিন ভোরে মিনালাল খান গাড়ি নিয়ে বের হলেন। বাগানের ভেতরে আসতেই প্রচণ্ড শব্দে বিষ্ফোরণ ঘটে। ধ্বংস হয় গাড়ি। পুড়ে সমস্ত শরীর ঝলসে যায় মিনালালের। পরে একটি হেলিকপ্টার এসে তাকে উদ্ধার করে। তবে মিনালাল খান আহত না নিহত হয়েছিলেন সে সম্পর্কে কোনো রকম হদিস পাওয়া যায়নি।
[৬৩] মাহফুজুর রহমান
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত