You dont have javascript enabled! Please enable it! মুক্তিযুদ্ধপূর্ব বাংলাদেশে সেনাবাহিনীতে বাঙালি সৈন্যের পরিসংখ্যান - সংগ্রামের নোটবুক

মুক্তিযুদ্ধপূর্ব বাংলাদেশে সেনাবাহিনীতে বাঙালি সৈন্যের পরিসংখ্যান

পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে বাঙালিদের প্রতিনিধিত্ব ছিল মাত্র শতকরা পাঁচভাগ সেকথা পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে। এরা সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট বা প্রতিষ্ঠানে ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় ছিল। পুরোপুরি বাঙালি সৈনিক দ্বারা গঠিত কোনো ইউনিট বা প্রতিষ্ঠান ছিল না। একমাত্র পদাতিক বহিনীর রেজিমেন্টগুলো আঞ্চলিক ভিত্তিতে এবং আঞ্চলিক সৈনিক সংগ্রহের (Recruitment) উপরই নির্ভর করে নামকরণ করা হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এরূপ চারটি পদাতিক রেজিমেন্ট ছিল-পাঞ্জাব রেজিমেন্ট, বেলুচ রেজিমেন্ট, ফ্রন্টিয়ার ফোর্স রেজিমেন্ট ও ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট। ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট ছিল বাঙালি সৈনিক দ্বারা গঠিত একমাত্র রেজিমেন্ট যার ছিল মাত্র ৮ ব্যাটালিয়ন সৈনিক। ব্যাটালিয়নগুলি ছিল ১ম ইস্টবেঙ্গল, ২য় ইস্টবেঙ্গল, ৩য় ইস্টবেঙ্গল, ৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮ম ইস্টবেঙ্গল ব্যাটালিয়ন। এই ৮টি ব্যাটালিয়নের মধ্যে ২৫ মার্চ ১৯৭১ পর্যন্ত ১ম ইস্টবেঙ্গল ছিল যশোরে, অধিনায়ক ছিলেন বাঙালি লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল জলিল। ২য় ইস্টবেঙ্গল ছিল জয়দেবপুর- অধিনায়ক বাঙালি লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাসুদুল হাসান খান। ৩য় ইস্টবেঙ্গল ছিল রংপুরে, অধিনায়ক অবাঙালি লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফজলুর রহমান এবং ৮ম ইস্টবেঙ্গল ছিল চট্টগ্রামে, অধিনায়ক অবাঙালি লেফটেন্যান্ট কর্নেল রশিদ জানজুয়া। তবে এই ৮ম ব্যাটালিয়ন ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে। ৮ম ইস্টবেঙ্গল ব্যাটালিয়নকেও পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠাবার জন্য পূর্বেই আদেশ জারি করা হয়েছিল এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাটালিয়নের এক কোম্পানী সৈন্য একজন পশ্চিম পাকিস্তানী অফিসারের নেতৃত্বে অগ্রিম দল (Advance Part) হিসেবে খারিয়ান সেনানিবাসে চলে গিয়েছিল। ব্যাটালিয়নের একটি কোম্পানিকে লেফটেন্যান্ট কর্নেল জানজুয়ার আদেশে জাহাজ থেকে গোলাবারুদ খালাস করবার জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়োজিত করে রাখা হয়েছিল। অবশিষ্টাংশ লেফটেন্যান্ট কর্নেল জানজুয়ার অধীনে ষোলশহর নামক স্থানে বলতে গেলে নিরস্ত্রবস্থায় পশ্চিমে পাড়ি দেবার জন্য দিন গুণছিল। নিরস্ত্রবস্থায় বলছি এ কারণে যে কোনো ব্যাটালিয়নকে দেশের এক উইং থেকে অন্য উইং-এ পাড়ি দেবার প্রাক্কালে গাড়ি, অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ ইত্যাদি জমা দিতে হয় যা বদলিস্থানে অবস্থান নেবার পর পুনঃ পূরণ করা (Replenish) হয়। ৮ম ইস্টবেঙ্গলও তা-ই করেছিল। শুধু দৈনন্দিন প্রশিক্ষণের জন্য ন্যূনতম গাড়ি ও হাতিয়ার সাথে ছিল। কাজেই ব্যাটালিয়নটি সে সময় পুরোপুরি যুদ্ধোপযোগী ছিল না। সব মিলে রেজিমেন্টের প্রায় ৩,০০০ বাঙালি সৈনিক পূর্ববাংলায় উপস্থিত ছিল। ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের রিক্রুট ট্রেনিং সেন্টারের অবস্থান ছিল চট্টগ্রাম সেনানিবাসে। এই সেন্টারের নাম ছিল ইস্টবেঙ্গল সেন্টার-সংক্ষেপে ই, বি, আর, সি। এই সেন্টারে সব মিলে সেদিন প্রায় ২,৫০০ সৈনিক ছিল। সেন্টার কমান্ড্যান্ট ছিলেন বাঙালি ব্রিগেডিয়ার মজুমদার এবং প্রধান প্রশিক্ষণ অফিসারও ছিলেন বাঙালি লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম, আর, চৌধুরী। এছাড়া সেন্টারে আরও বেশ কিছু বাঙালি অফিসার অবস্থান করছিল।

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত