You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.28 | মুইড়াউক ব্যর্থ অপারেশন, হবিগঞ্জ - সংগ্রামের নোটবুক

মুইড়াউক ব্যর্থ অপারেশন, হবিগঞ্জ

৩ নম্বর সেক্টর হতে ইলিয়াছ কামাল (মুইড়াউক), আবুল কাশেম (চুনারুঘাট), ফরিদ (বাল্লা), সিরাজ (রশিদপুর) ও কয়েকজন মনিপুরীদের সাথে চুনারুঘাট এলাকার বিভিন্ন স্থানে গেরিলা তৎপরতা পরিচালনা করতেন। অক্টোবরের ২৮/২৯ তারিখ শফিকুল ইসলাম (মুইড়াউক), শফিকুল আলম চৌধুরী (সিংহগ্রাম), ছালেহ আহমদ (সিংহগ্রাম), শাহজাহান (মুইড়াউক) ও মফিজুর ইসলামকে (মুইড়াউক) নিয়ে ইলিয়াছ কামাল ছাহেব আলীর (কালিকাপুর) দিকনির্দেশনায় সুরমা চা বাগানের ঢাল বেয়ে শাহজিবাজারের পুড়াইকলা গ্রাম হয়ে লাখাই থানার মুইড়াউক গ্রামের নিজ বাড়িতে আসেন। মুইড়াউক বেশ বড় গ্রাম। বর্তমান খালাউক উপজেলা সদর হতে ১ কিলোমিটার দক্ষিণ দিকে অবস্থিত। এই গ্রামেই হবিগঞ্জ সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক ও মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট মোস্তফা আলী এমএনএ’র বাড়ি। মহিউদ্দিন আহমদ লাখাই থানা সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটির সভাপতি, আলাউদ্দিন ভূঁইয়া সংগ্রাম পরিষদের সদ্য প্রমুখের বাড়ি। অর্থাৎ ঐ সময় লাখাই থানার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এ গ্রাম থেকেই পরিচালিত হতো। একই গ্রামে আবার পাকিস্তানী দোসর ইসমাইল মাওলানাসহ কিছু সংখ্যক রাজাকার ও শান্তি কমিটি গঠনে সফলতার পরিচয় দিয়েছিল সাময়িকভাবেই। ইলিয়াছ কামালদের বাড়িতে আসার খরব গোপন থাকেনি। ছড়িয়ে পড়ে চতুর্দিকে, ইসমাইল মাওলানা আজমিরীগঞ্জে অবস্থানরত পাক বাহিনীকে খরব দেয়- উল্লিখিত মুক্তিযোদ্ধারা ১০০/১৫০ যুবকদের মুক্তিযুদ্ধে যাবার জন্য সংগঠিত করছে। খবর পেয়ে ৩১ অক্টোবর ব্রিগেড বাহিনীর ১০/১২ জন পাক সেনা, ২০/২৫ জন মিলিশিয়া ও সমসংখ্যক রাজাকারসহ মাদনা হয়ে বামৈ আসে। বামৈ থেকে অতি সন্তর্পণে ঝড়ের রাত্রিতে পায়ে হেঁটে মুইড়াউক এসে তিনটি বাহিনীতে বিভক্ত হয়ে তিনটি পাড়া ঘেরাও করে। একটি বাহিনী মোস্ত ফা আলী-এর বাড়ি, দ্বিতীয়টি ইলিয়াছ কামালের বাড়ি ও তৃতীয় বাহিনী শাহজাহানদের বাড়ি ঘেরাও করে। ইলিয়াছ কামালের পিতা ইদ্রিছ মিয়াকে শাহজাহানের পিতা আবদুল জাব্বারকে সহ গ্রামের আরো ৫/৬ নিরীহিত লোককে বন্দি করে। তাদের একটিই দোষ ছিল তাদের সন্তান ইলিয়াছ কামাল, শাহজাহানরা যুদ্ধে গিয়েছে। এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা পিতৃদ্বয়কে হত্যা করে। হত্যা করে গ্রামের আরো ৩/৪ জনকে। মাওলানা ইছমাইলের অপতৎপরতায় ও পাকিস্ত ানী বাহিনীর ভয়ে গ্রামবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা না করায় মুক্তিযোদ্ধারা সফল অপারেশন করতে পারেনি। ইলিয়াছ কামাল বলেন, আমাদের এই ব্যর্থতা কোনো পরিকল্পনাহীনতা বা অন্য কোনো কারণে নয় আমরা ছিলাম অবস্থার শিকার। আমরা চেয়েছিলাম আমাদের গুলিতে যেন একজন নিরীহ বাঙ্গালি প্রাণ না হারায়।
[৬৩] মাহফুজুর রহমান