মিয়ার বাজার অ্যাম্বুশ, চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা
৩০ মে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আধা মাইল উত্তরে চৌদ্দগ্রাম-মিয়ারবাজার রোডের উপর ৪র্থ বেঙ্গলের বি কোম্পানির একটি দল হঠাৎ শত্রুদের ২৭ জনের একটি দলকে দূর থেকে আসতে দেখে তাড়াতাড়ি অ্যাম্বুশ পাতে। শত্রুরা যদিও এ অতর্কিত আক্রমণে হতচকিত হয়ে যায় কিন্তু তারা ত্বরিত গতিতে রাস্তার পশ্চিম পাশে সরে পড়ে৷ অ্যাম্বুশের দল শুধু তিনজন শত্রুসেনা নিহত করে। গেরিলারা লাকসাম বাংগোরা কাঁচা রাস্তার উপর দোলনা গ্রামের কাছে মাইন পুঁতে রাখে। শত্রুদের একটি তিন টনের গাড়ি এ মাইন বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়ে যায়। ৪র্থ বেঙ্গলের ‘বি’ কোম্পানির একটি প্লাটুন এবং ই, পি আর ও মুজাহিদদের নিয়ে গঠিত একটি সম্মিলিত দল মিয়ার বাজারে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উপর প্রতিরক্ষা অবস্থান গঠন করে ব্যুহকে আরো শক্তিশালী করে তোলে। এর ফলে পাকসেনাদের চট্টগ্রাম-ঢাকার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পাকসেনার মধ্যে এ অবস্থায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায় এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পুনরায় খোলার জন্য ৩০ মে সকাল ছটায় দু’কোম্পানি সৈন্য নিয়ে দক্ষিণের দিকে অগ্রসর হয়। বেলা ১১-টার সময় একটি অ্যাম্বুশ দল মিয়ার বাজারের উত্তরে এগিয়ে হামলা করে। এতে আগে এ ধরনের হামলার জন্য শত্রুপক্ষ প্রস্তুত ছিল না। ফলে তারা সম্পুর্ণ হতচকিত হয়ে যায়। তিন ঘণ্টা যুদ্ধের পর শত্রুসৈন্যরা ছত্রভঙ্গ হয়ে কুমিল্লার দিকে পালিয়ে যায়। এ যুদ্ধে শত্রুদের ৫০ জন হতাহত এবং মুক্তিযোদ্ধারা দু’টি তিন টনের গাড়ি গোলাবারুদ সহ ধ্বংস করে দেয় এবং একটি গাড়ি দখল করে নেয়। এতে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ এবং একজন আহত হয়। এরপর পাকবাহিনী কুমিল্লা বিমান বন্দর থেকে মিয়ার বাজার প্রতিরক্ষা অবস্থানের উপর ভারি কামানের সাহায্যে গোলাবর্ষণ করতে থাকে এবং সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের ওপর পুনরায় আক্রমণ করার চেষ্টা চালায়। শত্রুদের একটি শক্তিশালী পেট্রোল পার্টি চৌয়ারা হয়ে মিয়ার বাজারের পূর্ব দিক দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের ভিতর প্রবেশের চেষ্টা চালায়। কিন্তু লেঃ কবিরের নেতৃত্বে একটি ছোট গেরিলা দল পাকবাহিনীর পেট্রোল পার্টিকে অ্যাম্বুশ করে। এই অ্যাম্বুশে পাক বাহিনীর ১০ জন নিহত হয়। লেঃ কবির পাকবাহিনীকে ধাওয়া করে তাদেরকে তাড়িয়ে দেয়।
[১৮] আবুল কাশেম হৃদয়
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত