মাদরা যুদ্ধ, সাতক্ষীরা
কলারোয়া থেকে ৯ মাইল দূরে মাদরা ক্যাম্প ছিল পাকবাহিনীর শক্ত ঘাঁটি। ৮ নং সেক্টরের মুক্তিবাহিনীর ক্যাপ্টেন মাহবুব, ক্যাপ্টেন শফিউল্লাহ ও তৌফিক এলাহী চৌধুরী এই শক্তিশালী ক্যাম্প আক্রমণ করে পাক মিলিটারিদের উৎখাত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।
৯ নভেম্বর ক্যাপ্টেন মাহবুব ও ক্যাপ্টেন শফিউল্লাহর নেতৃত্বে প্রায় ১০০ জন মুক্তিযোদ্ধা এক অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোসলেম উদ্দীনের নেতৃত্বে ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা বাঁগআচড়া থেকে যাতে পাক মিলিটারিরা মাদরা ক্যাম্পে যোগ দিতে না পারে সে জন্য সুবিধামত জায়গায় অবস্থান নেয়। কোটা গ্রামের মধ্য দিয়ে আসা আর একটা রাস্তা পাহারা দেয়ারও দায়িত্ব নেয় মোসলেম উদ্দীনের দল। অন্যদিকে কমান্ডার গফফারের নেতৃত্ব ৪০ জনের একটি শক্তিশালী দল কলারোয়া কোমরপুর রাস্তা বন্ধের দায়িত্ব গ্রহণ করে।
মূল আক্রমণকারী দলের নেতৃত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন মাহবুব ও ক্যাপ্টেন শফিউল্লাহ। অংশগ্রহণকারী মুক্তিফৌজের সংখ্যা ছিল ৬০ জনের মত। ইপিআর সুবেদার তবারক উল্লাহ, হাবিলদার ইলিয়াস পাটোয়ারী ও ইপিআর এর সাহসী যোদ্ধারা ছিলেন এই যুদ্ধের মূল শক্তি। মুক্তিবাহিনী আক্রমণ শুরু করলে বেঁধে যায় তুমুল যুদ্ধ। মাদরা ক্যাম্পে পাক আর্মীর হাতে ভারি কামানসহ অস্ত্রশস্ত্র ছিল প্রচুর। তাই এ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী খুব একটা সুবিধা করতে পারি নি। এ যুদ্ধে ক্যাপ্টেন মাহবুব ও ক্যাপ্টেন শফিউল্লাহ উভয়েই আহত হলে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে হতাশা নেমে আসে। তাদের মধ্যে কিছুটা বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে পাক বাহিনী তার পূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করে। এই যুদ্ধে জাকারিয়া, এমদাদুল ও শফিক চৌধুরীসহ ২৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এই হতাশা বেশীদিন স্থায়ী হয় নি। কিছুদিন বিশ্রামের পর তারা নতুন উৎসাহে অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
শেখ আমানুল্লাহ
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত