You dont have javascript enabled! Please enable it!

মাধবপুরের যুদ্ধ-১, হবিগঞ্জ

পাকিস্তানী সৈন্যরা ২৭ এপ্রিল ভোররাতে শাহবাজপুরে আক্রমণের শিকার হয়ে তাদের বহু সৈন্য হতাহত হওয়ায় তারা মুক্তিবাহিনীর উপর ভীষণ ক্ষেপে যায়। তারা বুঝতে পারে যে, মাধবপুর, তেলিয়াপাড়া এলাকা থেকে এসে মুক্তিফৌজ তাদের উপর হামলা করেছে। ফলে শত্রু সৈন্যরা প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে ২৮ এপ্রিল সকাল ৮টায় মাধবপুরে মুক্তিবাহিনীর অবস্থানে ব্যাপক হামলা চালায়। পাকিস্তানী গোলন্দাজ বাহিনীর গোলাবর্ষণ ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরকসহ আগুনবোমা হামলার ফলে মুক্তিফৌজদের প্রতিরক্ষার চারদিকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড শুরু হয়। এদিকে মাহবুব-ই-খোদা তার কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট মোরশেদের নির্দেশ অনুযায়ী নিজের সেকশনের সমস্ত ফৌজদের নিয়ে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। পাকিস্তানী সৈন্যরা তিন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে আক্রমণ অব্যাহত রাখে। তাদের এক গ্রুপ ডান পাশে ক্যাপ্টেন মতিনের কোম্পানিকে, আরেকটি গ্রুপ বাম পাশে ক্যাপ্টেন নাসিমের কোম্পানিকে সমান তালে আক্রমণ চালায়। তৃতীয় আরেকটি গ্রুপ দুই কোম্পানির মাঝামাঝি স্থান দিয়ে আক্রমণ চালিয়ে দুপুর ১২টা নাগাদ মুক্তিফৌজদের অবস্থানের সামনে এসে পৌঁছায়। বেলা ১১টার দিকে মাহবুব-ই-খোদা নিজ সেকশনের মুক্তিফৌজ নিয়ে লেফটেন্যান্ট মোরশেদের শত্রুদের ডানদিক থেকে আক্রমণের জন্য আলীনগর গ্রামে অবস্থান গ্রহণ করেন। এদিকে পাকিস্তানী এক ব্যাটালিয়ন সৈন্য মুক্তিফৌজদের উপর হামলা চালায়। এর পেছনেই তাদের সহায়ক হিসেবে আরও পাকিস্তানী ব্যাটালিয়ন অগ্রসর হচ্ছিল। পাকিস্তানী সৈন্যদের ব্যাপক হামলা মুক্তিফৌজেরা অসীম সাহসিকতার সাথে মোকাবেলা করে। তারা বিশেষভাবে তৈরি পরিখা থেকে এলএমজি, মর্টার এবং রাইফেল দিয়ে আক্রমণ প্রতিহত করেন। মুক্তিফৌজের পাল্টা আক্রমণ শত্রু সৈন্যদের আক্রমণ ক্ষমতা খর্ব করে দেয়। ব্যাপক ক্ষতির শিকার হওয়া সত্ত্বেও শত্রুদের মধ্যবর্তী গ্রুপটি অগ্রসরমান ক্যাপ্টেন নাসিম ও ক্যাপ্টেন মতিনের সম্মিলিত অবস্থানে ভাঙ্গন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। তারা ডানদিকে অগ্রসরমান ক্যাপ্টেন নাসিমের কোম্পানি ও বামদিকে এগিয়ে যাওয়া ক্যাপ্টেন মতিনের কোম্পানির মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে আংশিক ভেতরে ঢুকে পড়ে। বেলা ৩টায় শত্রু সেন্যদের ঐ গ্রুপটি আরো উত্তরদিকে অগ্রসর হয়ে ডান পাশের প্রধান সড়ক মোড়ের নিকট ক্যাপ্টেন নাসিমের অবস্থানে আঘাত হানলে মুক্তিফৌজের কোম্পানির পারস্পরিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। শত্রু সৈন্যদের প্রবল চাপের মুখে ক্যাপ্টেন মতিনের বামপাশের অবস্থান ভেঙ্গে অকেজো হয়ে পড়ে। শত্রু সৈন্যরা যখন ক্যাপ্টেন নাসিম ও ক্যাপ্টেন মতিনের এলাকায় ঢুকে পড়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে। তখন আলীনগর গ্রাম থেকে লেফটেন্যান্ট মোরশেদের কমান্ডে মাহবুব-ই-খোদা তার সহযোদ্ধাদের নিয়ে শত্রুদের ডানদিকের পেছনের পাশ থেকে আক্রমণ চালায়। তাদের প্রচণ্ড আক্রমণের ফলে শত্রু সৈন্যরা সম্মুখ আক্রমণ বন্ধ করে নিজেদের প্রাণ বাঁচানোর জন্য পেছনের দিকে হটে যেতে বাধ্য হয়। লেফটেন্যান্ট মোরশেদের নেতৃত্বে মাহবুব-ই-খোদা ও তার সহযোদ্ধাদের দ্বারা পরিচালিত এই মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অভিযানটি অত্যন্ত চমৎকারভাবে সম্পন্ন হয়। পলায়নপর পাকিস্তানী সৈন্যদের একটি দল ক্যাপ্টেন মতিনের প্রতিরক্ষা অবস্থানে ঢুকে পড়লে মুক্তিফৌজের হাতে তারা অনেকেই প্রাণ হারায়। এ যুদ্ধে অনেক পাকিস্তানী শত্রু সৈন্য হতাহত হয়।
[৫২] শাহজাহান আলম সাজু
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!