সিডনি এইচ শ্যানবার্গের সাথে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির সাক্ষাৎকার | নিউ ইয়র্ক টাইমস | ১৯ অক্টোবর ১৯৭১
প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ঘোষণা করেছেন যে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্তে সামরিক পরিস্থিতি খুব খারাপ।
১ ঘন্টা দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা অবশ্যই যুদ্ধবিগ্রহ শুরু করতে চাইনা। কিন্তু আমরা আমাদের স্বার্থ রক্ষা করব এবং আমাদের নিরাপত্তা রক্ষা করব’।
“দুর্ভাগ্যবশত” তিনি আরো বলেন, “পাকিস্তান ঘৃণা এবং হতাশার রেকর্ড করেছে। সামরিক শাসক তার নিজের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে এবং জানিনা এর পরে তারা কি করবে। ”
প্রধানমন্ত্রীকে সচিবালয়ে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। তাকে পূর্ব পাকিস্তানে বাংলা বিদ্রোহীদের ভারত সামরিক সহায়তা প্রদান করছে বলে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বিরক্ত হন।
কিন্তু তিনি সুনিশ্চিতভাবে অস্বীকার করেন নি যে ভারত তাদের সাহায্য করছেনা। তিনি বলেন, “সম্ভবত আপনি জানেন, তাদের নিজেদের অনেক সাহায্যকারী আছে, বেশিরভাগ, সব বিশ্বজুড়ে। এছাড়াও, অনেক পথ তাদের জন্য খোলা আছে।
সাক্ষাত্কারে মিসেস গান্ধী বলেন, তাদের অস্ত্র থাক বা না থাক তাদের সংগ্রাম কেউ বন্ধ করতে পারবেনা।
তিনি বিশেষত সপ্তাহে আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের দেয়া বক্তব্যকে উল্লেখ করেন, যে বক্তৃতায় তিনি ভারতকে “উন্মাদের মত যুদ্ধপ্রস্তুতি” নেবার দায়ে অভিযুক্ত করেন এবং এই হুমকি মোকাবেলায় তার দেশের ১২০ কোটি মুজাহিদ বা ইসলাম প্রচারকদের, যাদের “হৃদয় মহানবী (স) এর প্রতি ভালবাসায় পূর্ণ” আহবান জানান।
তিপ্পান্ন বছর বয়সী প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়ভাবে বলেন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এই সময়ে কোনো শান্তি আলোচনা হবে না। আগে পাকিস্তানকে তার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি আপস বন্দোবস্ত করে পূর্ব পাকিস্তান সংকটের সমাধান করতে হবে।
প্রায় সাত মাস ধরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যে বাঙালি বিচ্ছিন্নতাবাদ আন্দোলন চলছে তা দমন করার চেষ্টা করছে। এই দল গত ডিসেম্বরে সাধারণ নির্বাচনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেও সামরিক শাসকদের দ্বারা নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছিল ২৫ মার্চ।
সামরিক দমনে পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে লাখ লাখ শরণার্থী পালিয়ে আসছে।
মিসেস গান্ধীকে জিজ্ঞেস করা হয় যদি শরণার্থীদের কারণে ভারতের অর্থনৈতিক ও সামাজিক চাপ ব্রেকিং পয়েন্টে চলে আসে তাহলে ভারত অন্তঃপ্রবাহ বন্ধে পাকিস্তানের বিপক্ষে সামরিক পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে কিনা।
“আসলে আমি বলব, আমরা ইতিমধ্যে সেই পয়েন্টে এসে পৌঁছেছি”, তিনি বললেন। “কিন্তু এর মানে এই নয় যে, আমরা এর কারণে ফাটল সৃষ্টি করতে যাচ্ছি”।
“আমরা অবশ্যই একটি দ্রুত সমাধান চাই, কিন্তু আমরা বড় কোন সমস্যার সৃষ্টি করতে চাই না”। “যেহেতু আপনারা জানেন, আমরা অত্যন্ত সংযত হয়ে আছি। আমি এই ব্যাপারে গভীর চিন্তা করছি। আপনারা একটি দেশের নাম বলুন যারা এতোটা সংযম ও ধৈর্য দেখাতে পারে। ’’
গত কয়েক সপ্তাহে, উভয় দেশ তাদের পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্তে তাদের সৈন্য সংখ্যা বাড়িয়েছে। উভয় দেশের প্রেসে অনেক লেখা হয়েছে। ১৯৬৫ সালে কাশ্মীর নিয়ে যুদ্ধ হয়।
তা সত্ত্বেও, মিসেস গান্ধী বলেন তার পরিকল্পনায় এখনো তিনি কোন পরিবর্তণ আনেননি যদিও পরিস্থিতি খুব ভয়াবহ। তার পরবর্তি ৩ সপ্তাহ বিদেশ সফর করার কথা আছে যা আগামী রবিবার থেকে শুরু হবে। তিনি লন্ডন এবং ওয়াশিংটন সহ ছয় টি পশ্চিমা রাজধানীতে যাবেন যার পরে তার পরিকল্পনা নির্দেশিত করবেন।
প্রধানমন্ত্রী বললেন যে আমেরিকার অবস্থান দেখে বোঝা যাচ্ছে তারা দুরদর্শী চিন্তা করছেন না পূর্ব পাকিস্তানের ব্যাপারে।
“বাংলাদেশে পাকিস্তানি সামরিক শাসন কোন ভাবেই পাকিস্তান শক্তিশালীকরণ করছেনা – বলেন তিনি।
মিসেস গান্ধী নিক্সন প্রশাসন থেকে কিছু অস্ত্র চালান পাকিস্তানে আসছে বলে উল্লেখ করেন। তারা পাকিস্তান সরকারকে নিয়ে সমালোচনায় আগ্রহী নন।
তবে আমাদের সাথে আমেরিকা এবং তার জনগণের সাথে বন্ধুত্ব বজায় আছে। তিনি বলেন, “কিন্তু যতদূর ভারতীয় জনগণ বুঝতে পারে যে তারা মূলত ভারত ও পাকিস্তানকে ব্যালেন্স করে চলছেন। ’’
পাকিস্তানে আমেরিকান অস্ত্র সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমি জানি না তারা আসলে কি চাচ্ছেন, কিন্তু অতীতে তারা বড় পরিমাণে সরবরাহ করেছেন। তারা শুধু ভারতের বিরুদ্ধে এগুলো ব্যাবহার করছে।
“এই ব্যাপারে”, তিনি বলেন, “আমরা অবশ্যই সোভিয়েত ইউনিয়ন এর কাছ থেকে অনেক বেশি বুঝতে পারছি। ’
মিসেস গান্ধী বলেন “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন সম্পর্ক আমাদের কাছে খুবই অদ্ভুত মনে হয়। আমরা সোভিয়েত ইউনিয়নকে আমেরিকার চেয়ে বেশী সমর্থন করি না, বরং আমরা উভয় কে সমানভাবে সমর্থন করি।
মূল বিষয় হল সোভিয়েত ইউনিয়ন আমাদের কিছু মৌলিক বিষয়ে আমাদের সমর্থন করে যার জন্য আমরা লড়াই করেছি। এবং এই সব নিয়ে আমরা জাতিসংঘেও তাদের সঙ্গে ছিলাম সন্দেহ নেই। একটু আগে, আপনি আমেরিকান সাহায্যের সম্পর্কে বললেন। আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে খুব কৃতজ্ঞ এবং তারা নানাভাবে আমাদের সাহায্য করেছেন। কিন্তু একটা সময় ছিল যখন আমরা রাষ্ট্র খাতের বিকাশ চেয়েছিলাম কিন্তু তখন তারা রাষ্ট্র খাতের সাহায্য করেনি যেটা কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন করেছিল”।
আমরা অবশ্যই ব্যক্তি হিসাবে আমেরিকানদের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রাখছি। ধরেন যদি আমরা রাশিয়ান বা অন্য কেউ হতাম তাহলে কি হত? ভাষাগত বিষয় অবশ্যই একটা ফ্যাক্টর। কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে আমি অ্যামেরিকার প্রযুক্তিগত ও বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিকে পছন্দ করি।
Translated by – Dr Razibul Bari