মনোহরদী ডাকবাংলো রেইড, নরসিংদী
মনোহরদী ডাকবাংলো এবং মনোহরদী উচ্চ বিদ্যালয় এলাকায় সেপ্টেম্বর মাসে পাকিস্তানীরা ক্যাম্প স্থাপন করেন। এই ক্যাম্পে তাদের সদস্য সংখ্যা ছিল ৩৫- ৪০ জন। এই ক্যাম্পে অবস্থান করেই তারা রাজাকারদের সহায়তায় আশেপাশের এলাকাসমূহে বর্বর অপরেশন পরিচালনা করতো। আপারেশনে কোনো পাকসেনা আহত হলে কিংবা অন্য কোনো অসুস্থতায় তারা চিকিৎসার জন্য মনোহরদী বাজারের ডা. সামসুল ইসলাম সাহেবকে ক্যাম্পে খবর দিয়ে তাদের চিকিৎসা করাত। এই সুবাদে ডা. সামসুল ইসলামকে প্রায়ই শত্রুর ক্যাম্পে যেতে হত। ডা. সামসুল ইসলাম নিজ ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও তাদের চিকিৎসা করতেন। তবে তার মধ্যে ছিল অগাধ দেশপ্রেম। তাই বিভিন্ন সময় ক্যাম্পে আসা যাওয়ার সময় ক্যাম্পের ভেতরে পাকসেনারা কখন কী করে তাদের অস্ত্র ও গোলাবারুদে অবস্থান,পরিমাণ ইত্যাদি বিষয় সুকৌশলে লক্ষ করতেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের এসব তথ্য সরবরাহ করতেন। এভাবে কয়েকদিন ড. সামসুল ইসলামের নিকট হতে পর্যাপ্ত তথ্যাদি পাওয়ার পর মুক্তিবাহিনীর সাহসী যোদ্ধাগণ পাকসেনাদের ক্যাম্পে রেইড করার পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী মুক্তিবাহিনী ১৯ সেপ্টেম্বর রাত দশটায় ডাক বাংলোতে রেইড করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ রেইডে ২৫-৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেয় যাদের মধ্যে হারুন অর রশীদ এবং মোঃ ওসমান ছিল স্থানীয় নেতৃত্বে। পক্ষান্তরে স্থানীয় সূত্রে পাকসেনাদের সংখ্যা ছিল ৩৫-৪০ জন, যাদের কমান্ডার ছিল জুলফিকার আলী শাহ। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাত দশটার পূর্বে মুক্তিযোদ্ধারা যার যার অবস্থান গ্রহণ করে। নির্দিষ্ট সময়ে গর্জে উঠে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রগুলি। চারদিক থেকে সংঘবদ্ধ অতর্কিত আক্রমণে ক্যাম্পে অবস্থিত পাকসেনারা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে এবং এলোপাথাড়ি গুলিবর্ষণ শুরু করে। এভাবে উভয়পক্ষের প্রচণ্ড গোলাগুলির পর শত্রুর ক্যাম্প সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হয়।
মনোহরদী ডাকবাংলোর এই রেইডে কয়েকজন পাকসেনা মারা যায় এবং বাকিরা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। মৃত পাকসেনাদের মনোহরদী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পার্শ্বে এবং ডি ভি রোডের দক্ষিণ পার্শ্বে কবর দেয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। শুধুমাত্র কয়েকজন আঘাতপ্ৰাপ্ত হয়েছিলেন যারা চিকিৎসার পর সুস্থ্য হয়ে উঠেছিল।
[৫৯৪] রিয়াজ আহমেদ
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত