মরিচপুর যুদ্ধ, হবিগঞ্জ
মাধবপুর থানা সদর থেকে পূর্বদিকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে মরিচপুর গ্রাম। এখানে ছিলেন কিছু মুক্তিযোদ্ধা। এবং প্রাক্তন মুজাহিদ, আনসার এবং ইপিআর প্রভৃতি বাহিনীর সদস্য। স্থানীয় কিছু ছাত্র-যুবক তখন তাদের সাথে যোগ দেন। তাদের নানাভাবে সাহায্য করবার জন্যে ক্যাপ্টেন নাসিম এবং লেফটেন্যান্ট হেলাল মোর্শেদও মাঝে মাঝে আসতেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার চান্দুরায় ছিল পাকবাহিনীর ক্যাম্প। মে মাসের ২৫ বা ২৬ তারিখে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের ওপর তারা মর্টার আক্রমণ শুরু করে। এক সাথে তারা ৬/৭ টি কামান থেকে গোলাবর্ষণ করতে থাকে। প্রচণ্ড সে আক্রমণের ধারা। প্রতিমুহূর্তে বিস্ফোরিত হচ্ছে মর্টার। মরিচপুরের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় মর্টার ও কামান হামলায় বেসামরিক জানমালের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। মরিয়া হয়ে চেষ্টা করেও মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর এ আক্রমণের মুখে টিকতে পারেননি। হালকা অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে কোনোক্রমেই মর্টার, কামানের মোকাবেলা করা সম্ভব ছিল না। তারা পিছু হটে অবস্থান নেন মনতলার দুর্গাপুর গ্রামে। এই গ্রামের আবদুস সাত্তার মুক্তিযোদ্ধাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। পরের দিন আবার আক্রমণ করেও বেশি সময় টিকতে পারেননি মুক্তিযোদ্ধারা। ততক্ষণে রাজাকারদের সহায়তায় পাকসেনারা শেওলিয়া খান অতিক্রম করে মিঠাপুকুর গ্রামে অবস্থান নিয়েছে। সম্মুখযুদ্ধে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সুবিধা করতে না পারায় মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। এদিনের যুদ্ধে হাবিলদার আবুল কাশেম গুলিবিদ্ধ হন। মরিচপুরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তাদের ভেতরে ছিলেন শাহ মোহাম্মদ মুসলিম, শফিকউদ্দিন, মোখলেসুর রহমান ও মোহাম্মদ আলী পাঠানসহ অনেকে।
[৬৩] মাহফুজুর রহমান
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত