You dont have javascript enabled! Please enable it!

ময়নার যুদ্ধ, নাটোর

নাটোরে স্বাধীনতা সংগ্রামকালে সংঘটিত ওয়ারিয়ার ময়নার যুদ্ধ’ বাঙ্গালীর অবিনশ্বর বীরত্বগাথা হয়ে আছে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাত্রি বাঙালীর জীবনে নিয়ে আসে আরেক আলোর ভোর। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে আনসার, ভিডিপি, পুলিশ প্রত্যেকেই দৃঢ়বদ্ধ হয়ে ওঠেন স্বাধীনতার সঙ্কল্পে। ২৭ মার্চ সকাল ১০টায় জানা যায়, একদল পাকিস্তানী সৈন্য নগরবাড়ি ঘাট থেকে রাজশাহীর দিকে এগিয়ে আসছে। এই সৈন্যরা নিরাপদে রাজশাহী পৌঁছুতে পারলে অভিমুখে রওয়ানা হয় আনসাররা। মুলাডুলি নামক স্থানে প্রথম আনসাররা পকিস্তানী সৈন্যদের মুখোমুখি হয়। এই আচমকা আক্রমণ পাকিস্তানী বাহিনী আশা করেনি। তাই আনসারদের গুলির সামনে টিকতে না পেরে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয় এবং অন্যপথে রাজশাহীর দিকে এগোতে থাকে। এই সময় আনসার কমান্ডার মোঃ ইউসুফের নির্দেশে হানাদারদের প্রতিহত করার জন্য একটি সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান নেয়ার জন্য দ্রুত সকলে বনপাড়ার দিকে অগ্রসর হয়। রাত ১০টায় আনসার বাহিনী বনপাড়ায় পৌঁছে যায় এবং সাথে সাথেই খবর পাওয়া যায় যে, পাকবাহিনী গোপালপুর হয়ে রাজশাহীর দিকে এগোচ্ছে। আর কালক্ষেপণ না করে আনসারদের গোপালপুরের দিকে অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ৫/৬ মাইল যাওয়ার পরে ওয়ারিয়ায় আনসাররা পুনরায় দ্বিতীয় দফায় পাকনাহিনীর মুখোমুখি হয় এবং উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড গোলাগুলি শুরু হয়। সমস্ত রাত এবং পরের দিন এক নাগাড়ে যুদ্ধ চলে। সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ পাক বাহিনী কাভারিং ফায়ারের সাহায্যে পিছু হটতে থাকে। ঐ সময় কমান্ডার ইউনুস, মেহের আলী, জেহের আলী, মোজাম্মেল, সাত্তারের (প্রাক্তন সৈনিক) পরামর্শ অনুযায়ী দুই প্লাটুন আনসার ভিন্ন পথ ধরে দ্রুত গোপালপুরের দিকে রওনা হয়- যেন পাকবাহিনীর আগে গোপালপুর স্টেশনে পৌঁছানো যায়। পাক বাহিনী পৌঁছানোর আগেই গোপালপুর স্টেশনে পৌঁছে তারা অবস্থান নেন। স্থানীয় জনসাধারণের সাহায্যে রেলের ওয়াগন দিয়ে রাস্তায় ব্যারিকেড দেওয়া হয়। এই সংবাদ এবং আনসারদের অবস্থান নেওয়ার সংবাদ পাকবাহিনীর অজানা ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই পাকিস্তানী বাহিনী গোপালপুর স্টেশনের কাছে পৌঁছে যায়। রাস্তায় ব্যারিকেড দেখে সৈন্যদের নামিয়ে দেওয়া হয় ব্যারিকেড সরানোর জন্য। এই সুযোগে আনসার বাহিনী অকস্মাৎ পাকবাহিনীর ওপর গুলি চালানো শুরু করে। গোলাগুলির শব্দ পেয়ে স্থানীয় জনসাধারণ বিপুল উদ্দীপনায় যার যা আছে তাই নিয়ে আনসারদের সাথে যোগ দেয়। ঘণ্টাখানেক তুমুল যুদ্ধ চলার পরে ২২ জন পাকিস্তানী সৈন্য নিহত হয়। ঐ যুদ্ধে পাক অধিনায়ক মেজর আসলাম আহত অবস্থায় মুক্তিবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। এর কয়েকদিন পরে পাকবাহিনী পুনরায় গোপালপুরে আসে এবং প্রতিশোধ স্পৃহায় গোপালপুর চিনিকলের তৎকালীন ম্যানেজার লেঃ (অব.) আনোয়ারুল আজিমসহ মিলে কর্মরত ৩/৪ শত শ্রমিক-কর্মকর্তাকে নির্মমভাবে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে।
[৫৮২] শাহানা আকতার মহুয়া
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!