মঞ্জুর, মুহম্মদ আবুল মেজর জেনারেল, বীর উত্তম (১৯৪০-১৯৮১)
মুহম্মদ আবুল মঞ্জুর, সামরিক কর্মকর্তা ও বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৪০ সালে কুমিল্লা জেলার কসবা থানার গুপিনাথপুরে তাঁর জন্ম। তাঁর পৈতৃক নিবাস নোয়াখালী জেলার চাটখিল থানার অন্তর্গত কামালপুর গ্রামে। বাবা মো. নাজিবুল্লাহ ছিলেন চাকুরিজীবী, ওয়াপদাতে। মায়ের নাম সামসুন নাহার। তিনি পাঞ্জাবের সারগোদা পাবলিক স্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে সিনিয়র ক্যাম্ব্রিজ এবং ১৯৫৬ সালে আইএসসি পাস করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি কানাডার স্টাফ কলেজ থেকে পিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন এবং ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টে কমিশন্ড পদে যোগদান করেন।
শিয়ালকোটে ব্রিগেড মেজর হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ১৯৭১-এ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ আরম্ভ হলে তিনি পাকিস্তানে আটকা পড়েন। জুলাই মাসে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধে ৮ নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার হিসেবে তিনি কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী ও ফরিদপুর জেলায় সাফল্যের সঙ্গে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। সেক্টরের কমান্ডার মোহাম্মদ আবুল মঞ্জুর পাকিস্তানী সৈন্যও তাদের তাবেদার বাহিনী রাজাকার, আল-শামস, বদরবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিকল্পনা, নির্দেশনা ও যুদ্ধ পরিচালনায় দক্ষতা ও সাহসিকতার পরিচয় দেন।
১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ খুলনার শিরোমনিতে পাকিস্তানী ট্যাংক রেজিমেন্টের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে মেজর মঞ্জুরের দক্ষ নেতৃত্ব ও বীরত্বপূর্ণ সাহসিকতায় ট্যাংক রেজিমেন্ট সম্পূর্ণ পরাভূত হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে এত বড় ট্যাংক যুদ্ধ বাংলাদেশের আর কোথাও হয়নি। শিরোমনির স্মরণীয় ট্যাংক যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ সাহসিকতার জন্য মেজর মঞ্জুর বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত হন।
স্বাধীনতার পর যশোরে ৫৫ নং ব্রিগেডের কমান্ডার নিয়োগ করা হয়। ১৯৭৩ সালে তিনি নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে সামরিক উপদেষ্টা পদে যোগদান করেন। আবুল মঞ্জুর ১৯৭৫ সালের ১৩ নভেম্বর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চীফ অব জেনারেল স্টাফ পদে নিয়োগ লাভ করেন। ১৯৭৭ সালে তিনি চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর ২৪তম ডিভিশনের জিওসি নিযুক্ত হন। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর কতিপয় অফিসার কর্তৃক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হলে মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর নিজেকে সামরিক বাহিনী ও বেসামরিক প্রশাসনের প্রধান ঘোষণা করেন। তিনি সেই সময়ে চট্টগ্রামের জিওসি ছিলেন।
কিন্তু ঢাকা থেকে সময়োচিত হস্তক্ষেপের ফলে চট্টগ্রামের পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসে। আবুল মঞ্জুর আত্মগোপনের চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি হন। ঐ দিনই ২ জুন ১৯৮১ বন্দি অবস্থায় চট্টগ্রাম সেনা ছাউনিতে পৌঁছার পর অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির গুলিতে তিনি নিহত হন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য আবুল মঞ্জুর ‘বীর উত্তম’ রাষ্ট্রীয় খেতাবে ভূষিত হন।
[৭৩] রিয়াজ আহমেদ
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত