You dont have javascript enabled! Please enable it!

ভেলুরপাড়া যুদ্ধ, বগুড়া

বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার একটি ইউনিয়ন ভেলুরপাড়া। শুরু থেকেই পাকবাহিনী এলাকার গবাদিপশু লুট ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের ওপর অত্যাচার করে আসছিল। শান্তিপ্রিয় ভেলুরপাড়াবাসী সব কিছু মুখ বুজে সহ্য করে যাচ্ছিল। কিন্তু রেলস্টেশনে অবস্থানরত পাকবাহিনীর অত্যাচারের মাত্রা দিন দিন চরমে উঠতে লাগল। মুক্তিযোদ্ধা খাজা নাজিমুদ্দিনের বাবা কসিম উদ্দিন প্রামাণিককে তারা ধরে নিয়ে যায় এবং অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে প্রায় পঙ্গু অবস্থায় তাকে ফেরত দেয়। এরপর আজিজুল ইসলাম নামের এক মুক্তিযোদ্ধাকে তারা ধরে নিয়ে যায়। সেখান থেকেই এলাকাবাসী তেতে উঠতে থাকে। একদিন হঠাৎ করে পাকবাহিনী চড়াও হয় গ্রামে এবং নরপিশাচের মতো তুলে নিয়ে যায় এক তরুণীকে। অস্ত্রের মুখে কেউ এগিয়ে আসতে পারেনি। পারেনি কেউ সেই তরুণীকে উদ্ধার করতে। তরুণীর ভয়ার্ত আর্তচিৎকারে ভেলুরপাড়া গ্রামের আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। কেঁপে ওঠে প্রকৃতি। অসহায় প্রকৃতি আবার নিশ্চুপ হয়ে যায়। কষ্টের তীব্রতায় পাথর হয়ে থেমে যায় তরুণীটির কান্না। অনেক হয়েছে আর নয়। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া এলাকাবাসী ঘুরে দাঁড়ায়। আশপাশে লুকিয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা জড়ো হতে থাকে ভেলুরপাড়া গ্রামে। প্রতিটি মানুষের চোখে জ্বলতে থাকে প্রতিশোধের লেলিহান শিখা। অনিবার্য হয়ে ওঠে ভেলুরপাড়া (রেইড)। হটাও শত্রু, বাঁচাও দেশ এই ব্রত নিয়ে তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে শত্রুর ওপর। ক্ষিপ্ত ও মরিয়া মুক্তিযোদ্ধারা ৮ ডিসেম্বর গভীর রাতে কমান্ডার খাজা নাজিমউদ্দিনের নেতৃত্বে দীঘলকান্দি নামক স্থানে দানেশ মাস্টারের বাড়িতে রেইড পরিকল্পনার জন্য সমবেত হয়। সর্বসম্মতিক্রমে আক্রমণের রণকৌশলগত পরিকল্পনা এবং বিভিন্ন পার্টি কমান্ডারদের এই বৈঠকে নিযুক্ত করা হয়। পরিকল্পনামাফিক ১০ ডিসেম্বর আক্রমণকারী দল আনুমানিক রাত ২টায় নিমেরপাড়ায় সমবেত হয় এবং নিমেরপাড়াতে কভারিং পার্টি রেখে অ্যাকশন পার্টি দু দলে বিভক্ত হয়ে যথাক্রমে শিচারপাড়া গ্রামের দক্ষিণ-পশ্চিম ও পূর্ব দিকে অবস্থান নেয়। অপর দিকে কাট অব পার্টি-১, ২ ও রিজার্ভ পার্টি পর্যায়ক্রমে চকচকিয়া ব্রিজ, রোড বেন্ড এবং শিচারপাড়া গ্রামে অবস্থান নেয়। রাত আনুমানিক ২.৩০ মিনিটে শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ। শত শত গুলির শব্দে আকাশ-পাতাল কেঁপে ওঠে। পাকবাহিনীও পাল্টা গুলি চালায়। তাদের এলএমজি ফায়ারে চকচকিয়া ব্রিজ কাট অব পার্টি-১-এর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওয়াহেদ বুলেটবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং ঘটনাস্থলেই শহীদ হন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। আব্দুল ওয়াহেদ শহীদ হওয়ায় কাট অব পার্টি-১ তাদের স্থান ত্যাগ করে দোরগাছা ইউনিয়নে গিয়ে অবস্থান নেয়। এই সুযোগে পাকবাহিনী রেললাইন ধরে দক্ষিণ দিকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। স্টেশন দখল করার পর দেখা যায় শত্রুর একজন সৈনিক নিহত হয়েছে এবং একজন সৈনিককে জীবিত অবস্থায় পাকড়াও করা হয়। আটক মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল ইসলামকেও উদ্ধার করা হয়।

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!