You dont have javascript enabled! Please enable it!

ভোমরাবাঁধের যুদ্ধ, সাতক্ষীরা 

শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা ‘ভোমরা’ একটি বিওপি ও স্থলবন্দর। মুক্তিযুদ্ধের সময় এটি ছিল একটি সাবসেক্টর-যা কিনা শত্রু ও মিত্র উভয় বাহিনীর কাছেই নানাবিধ কারণে ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই গুরুত্বপূর্ণ হবার পেছনে একটি অন্যতম কারণ ভোমরার ইছামতি নদীপথ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র, গোলাবারুদ ও অন্যান্য সরঞ্জামাদী প্রবেশ করতো এবং এর মাইল তিনেক ভেতরে ভারতে মুক্তিবাহিনীর ছিল একটি শক্ত ঘাঁটি। এছাড়া ভোমরা এলাকার সীমান্তরেখা বরাবর নদী এবং রাস্তার আড়া-আড়ি একটি বন্যা প্রতিরোধ বাঁধ রয়েছে।
১৯৭১ সালের ২৭ মে রাত আনুমানিক সাড়ে ৩টায় পাকবাহিনী ভোমরাবাঁধ এলাকার নিকটবর্তী হয়ে মুক্তিবাহিনীর ওপর আক্রমণ চালায়। সে সময় পাকবাহিনী মুক্তিবাহিনীর প্রতিরক্ষা তিনদিক থেকে ঘিরে ফেলার পরিকল্পাবনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক তারা দক্ষিণ দিকে ইছামতি থাকায় বাকী তিনদিক দিয়ে অগ্রসর হয়। এদিকে মুক্তিযোদ্ধারা এই আক্রমণের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত ছিল। তাদের তিনটি মেশিনগান এমন সঠিক জায়গাতে ও যথার্থভাবে স্থাপন করা ছিল যে, মাত্র এই তিনটি অটোমেটিক মেশিনগানই শত্রুর আক্রমণ থামিয়ে দেয়। পাকবাহিনী এই তিন অটোমেটিক মেশিনগান নিষ্ক্রীয় করার জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। তিনটি মেশিনগান আক্রমণে সমগ্র শত্রুবাহিনীর ওপর ফায়ার সুইপিং করতে থাকে। মুক্তিসেনারা শত্রুর আক্রমণ রুখে দেয়ার পর তাদের ওপর ছোট আকারে কাউন্টার অ্যাটাক করে এবং পাকবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। অতঃপর সকাল আনুমানিক ৬ টায় পাকবাহিনী ফের আক্রমণ চালায় কিন্তু এবারও মুক্তিসেনারা শত্রু-আক্রমণ প্রতিহত করে দেয়। পাকবাহিনীর বিপুল পরিমাণ হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি হয়। ব্যাটালিয়ন কমান্ডার তার তিন কোম্পানি দিয়েই একের পর এক নানাভাবে আক্রমণে গেলেও কোনোভাবেই মুক্তিবাহিনীর প্রতিরক্ষা ভেদ করতে পারে নি। প্রায় সতের ঘণ্টা যাবৎ এই যুদ্ধ চলে।
এই যুদ্ধে পাকবাহিনীর ব্যাটালিয়ন কমান্ডার আহত এবং একজন কোম্পানি কমান্ডারসহ আরও ১৩০ জন সৈনিক নিহত হয়। এছাড়াও তাদের শতাধিক সৈন্য আহত হয়। অপরদিকে মুক্তিবাহিনীর দুইজন শহীদ হন এবং আটজন আহত হন।
উলেখ্য, এই যুদ্ধে পাকবাহিনীর প্রায় এক ব্যাটালিয়ন সৈন্য অংশ নিয়েছিল। অপরদিকে মুক্তিবাহিনী এক কোম্পানির অধিক জনবল অংশ নিয়েছিল যার নেতৃত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন সালাহ্উদ্দিন। মুক্তিবাহিনীর এই কোম্পানি ছিল মূলত ইপিআর কোম্পানি এবং সঙ্গে ছিল পুলিশ, আনসার ও এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা। এই মুক্তিবাহিনীতে মোঃ শাজাহান ওরফে ক্যাপ্টেন শাহাজাহান মাস্টারের একটা নিজস্ব বাহিনী ছিল। ‘মুজাহিদ পার্টি’ নামে পরিচিত ওই বাহিনীর ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে একই এলাকায় ভারতের বিরুদ্ধে অংশগ্রহণ করার অভিজ্ঞতা ছিল-যা তাঁরা পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে কাজে লাগায়।
[৫৭] ইকবাল জাফর খন্দকার
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!