You dont have javascript enabled! Please enable it! ভাঙ্গামোড় এ্যাম্বুশ, গাইবান্ধা - সংগ্রামের নোটবুক

ভাঙ্গামোড় এ্যাম্বুশ, গাইবান্ধা

গাইবান্ধা-ফুলছড়ি সড়ক দিয়ে প্রতিদিন পাকবাহিনীর কনভয় যাতায়াত করতো। শবেমেরাজের তিনদিন পূর্বে রোস্তম কোম্পানীতে খবর আসে যে, শবেমেরাজের দিন পাকিস্তানী গাড়ীবহর অস্ত্র ও রসদ সামগ্রী নিয়ে গাইবান্ধা থেকে ফুলছড়ি যাবে। এই খবর পেয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, পাকিস্তানী কনভয়টিকে আক্রমণ করা হবে। সেই মোতাবেক আগের রাত্রিতে মান্দুরা গ্রামের হাইড আউট থেকে এসে বদি সরকারের বাড়ীতে হাইড আউট করা হয়। পূর্বেই রেকী করে পজেশন নেয়ার জায়গা নির্ধারণ করা ছিল। এই অপারেশনে রুস্তম আলী খন্দকারসহ ২২জন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাদের সঙ্গে অস্ত্র ছিল: এলএমজি ১টি, এসএমজি ৩টি, এসএলআর ৪টি, ২ ইঞ্চি মর্টার ১টি, ৩০৩ রাইফেল ১৩টি এবং কয়েকটি হ্যান্ড গ্রেনেড। মুক্তিযোদ্ধা দল শেষরাত্রে এ্যামবুশ পাতানোর নির্ধারিত স্থানে যান। এ্যাকশন পার্টি ও রির্জাভ পার্টিকে সড়কের পশ্চিম পার্শ্বে খড়ের জমির দুই প্রান্তে এবং কাটআপ পার্টির ছয়জনকে রাস্তার পূর্বপার্শ্বে নীচু জমিতে পজিশন দেওয়া হয়। এ্যামবুশ পাতার পর থেকে প্রায় ৬/৭ ঘন্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এই দীর্ঘক্ষণ রাস্তা দিয়ে অনেক পথচারী আসা-যাওয়া করা সত্ত্বেও মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান কেউ টের পায়নি। বেলা ১১টার দিকে মটরগাড়ীর আওয়াজ কানে আসে। ২ মিনিটের মধ্যে আমাদের লক্ষ্যবস্তু একটি জীপ ও একটি পিক-আপ আমাদের এ্যামবুশ এলাকায় এসে যায় এবং সাথে সাথেই অধিনায়ক রোস্তম আলীর সংকেত ফায়ারের সাথে সাথে এ্যাকশন ও রিজার্ভ পার্টির এক সঙ্গে ১৭টি হাতিয়ার গর্জে উঠে। শত্রু কনভয় থেমে যায়। হানাদাররা দ্রুত গাড়ী থেকে নিচে নামারত অবস্থায় মেজর শের খান রাস্তায় ঢলে পড়ে। ২/৩ জন এসে তাকে উঠায় হানাদাররা সকলেই রাস্তার পশ্চিম দিকে আমাদের অবস্থানের উপর গুলি ছুঁড়তে শুরু করেছে ঠিক তখনই কাট-আপ-পার্টি হানাদারদের উপর পিছন থেকে গুলি চালাতে শুরু করে। দুইদিকের আক্রমণে হানাদাররা দিশেহারা হয়ে পড়ে। তারা নিরুপায় হয়ে গুলী ছুড়তে ছুড়তে গাড়ীতে উঠতে থাকে। সেসময় আমাদের গুলীর আঘাতে একজন হানাদার রাস্তায় ঢলে পড়ে। তাকে ২/৩ জন ধরে পিক আপে উঠায় এবং জীপ ও পিকআপ ফুলছড়ির দিকে যেতে শুরু করে। নিহত হানাদারের চীনা অটোমেটিক রাইফেল রাস্তায় পড়ে যায়।”
[৮০] ড. মোঃ মাহবুবর রহমান

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত