You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.04 | লালমনিরহাট ৪ ও ৫ এপ্রিল গণহত্যা - সংগ্রামের নোটবুক

লালমনিরহাট ৪ ও ৫ এপ্রিল গণহত্যা

যেহেতু তিস্তা ব্রিজের উপর দিয়ে বাঁধার মুখোমুখি হয়েছিল পাক আর্মি সেহেতু তারা তাদের কৌশল পরিবর্তন করে কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট দখল নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। লালমনিরহাটে বিপুল সংখ্যক পাকিস্তানির বসবাস, সে সকল পাকিস্তানিদের রক্ষা করা যেমন প্রয়োজন, তেমনি স্থানীয়ভাবে বসবাসকৃত ঐ সকল অবাঙালিরা তাদের জন্য সহায়ক হবে ভেবেই পাকিস্তানপন্থী এদেশীয় দালালদের সহযোগিতায় হারাগাছের মধ্য  দিয়ে তিস্তা ও নিকটস্থ ত্রিমোহনী নদী পার হয়ে লালমনিরহাট দখল নেয় খান সেনারা। হারাগাছ হয়ে লালমনিরহাট দখল তাদের জন্য বেশ সহজ ছিল কারণ সে সময় হারাগাছের মুসলিম লীগ নেতা রইছ উদ্দিন তাদের সহযোগিতা করে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী প্রথমেই লালমনিরহাট শহর ও বিমানবন্দর তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। পাকিস্তানিরা ঐদিন এয়ারপোর্টের নিকটস্থ মহেন্দ্রনগরের অধিকারী লালমনিরহাট কলেজের ছাত্র আবুল কাশেম মণ্ডলকে পাকা রানওয়েতে আছাড় মেরে আহত করার পর তাঁর দু’দিকে দু’পা টেনে ছিঁড়ে ফেলে হত্যা করে। ৪ এপ্রিল লালমনিরহাটে ব্যাপক গণহত্যা হয়, ঐদিন পাকিস্তানি বাহিনী লালমনিরহাট রেলওয়ে শহরে ঢুকেই প্রথমে লালমনিরহাট রেলওয়ে হাসপাতাল, রেলস্টেশন, রেলওয়ে অফিস সমূহে আক্রমণ করে। তারা লালমনিরহাট রেলওয়ে হাসপাতালে ঢুকে ঐ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত পুলিশ অফিসার ওসি মীর মোশারফ হোসেন ও রেলওয়ে ইন্টেলিজেন্স অফিসার তথা পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুর রহমান চৌধুরীসহ ৩৭ জন চিকিৎসাধীন রোগীকে হত্যা করে। আহত হন শত শত বাঙালি। পরদিন পাক হানাদারদের গুলি খাওয়ার পরও বেঁচে যান রেল কর্মচারি আবুল মনসুর। লালমনিরহাট শহর ও আশপাশে অসংখ্য ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয় তারা। লালমনিরহাট শহর জুড়ে ৪ ও ৫ এপ্রিল ব্যাপক গণহত্যা হয়। কয়েক শত বাঙালি তাদের খুনের শিকার হন। লালমনিরহাট গণহত্যার সূচনা মূলতঃ ২৭ মার্চ শহিদ শাজাহানের আত্মদানের মাধ্যমে। ৪ ও ৫ এপ্রিল সেটি নৃশংসতার সর্বোচ্চ রূপ ধারণ করে।

একাত্তরের নয় মাস জুড়েই তাদের নৃশংসতা ছিল। তারা প্রায় প্রতিদিন হত্যা সংঘটিত করেছে। লালমনিরহাটের রেল কর্মচারিরাও এ হত্যা গণহত্যার শিকার ছিলেন। রেল কর্মচারিদের তালিকা থেকে যে সকল সংখ্যালঘু শহিদের নাম পাওয়া গেছে তাঁরা হলেন—

ক্র. নাম ও পিতা/স্বামীর নাম পিতা ঠিকানা
শহিদ রাজকুমার রবি দাস অজ্ঞাত লালমনিরহাট রেলওয়ে
শহিদ মণি মণ্ডল অজ্ঞাত লালমনিরহাট রেলওয়ে
শহিদ আনন্দ অজ্ঞাত লালমনিরহাট রেলওয়ে
শহিদ গোরী অজ্ঞাত লালমনিরহাট রেলওয়ে
শহিদ উমেশ চন্দ্র দাস অজ্ঞাত লালমনিরহাট রেলওয়ে
শহিদ রাজকুমার অজ্ঞাত লালমনিরহাট রেলওয়ে

(পূর্ণাঙ্গ তালিকা নয়)

সূত্র: উত্তর রণাঙ্গনে সংখ্যালঘু গণহত্যা ও নারী নির্যাতন- এসএম আব্রাহাম