আইরখামার হত্যাকাণ্ড
আইরখামার এলাকাটি লালমনিরহাট থানার অন্তর্গত বড়বাড়ী হাটের পূর্বদিকের একটি এলাকা। পাকিস্তানি বাহিনী এখানেই ৯ নভেম্বর ব্যাপক গণহত্যা সংঘটিত করে। নভেম্বরের শুরুতেই ৬ নং সেক্টর কমান্ডার খাদেমুল বাসারের কাছে খবর ছিল কর্ণেল এরশাদ রংপুরে অবস্থান করছে। তাকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আনা যায় কিনা বা তাকে ভারতে আনা যায় কিনা সে সংক্রান্তে কিছু আলোচনা হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় এরশাদের সাথে যোগাযোগের। এরশাদের সাথে যোগাযোগের জন্য দায়িত্ব পান উত্তরবঙ্গের সেরা বিদ্যাপীঠ রংপুর কারমাইকেল কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি (ভিপি) ও মুজিব বাহিনী (বিএলএফ) এর লিডার খন্দকার মুখতার ইলাহী। তিনি রংপুরেরই সন্তান, এরশাদের আত্মীয় শ্রেণিভুক্ত এবং একইসাথে দায়িত্বশীল ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি সতর্কতার সাথে ফুলবাড়ির বালাহাট সীমান্ত পাড়ি দিয়ে লালমনিরহাটের খুনিয়াগাছ হয়ে রংপুরে প্রবেশ করেন। এরশাদের সাথে সাক্ষাৎ এর চেষ্টা করেন কিন্তু চতুর এরশাদ সাক্ষাৎ দিতে রাজি না হওয়ায় মুখতার ইলাহী হতাশ হয়ে রংপুর ত্যাগ করেন। ফেরার সময়ে তিনি মহেন্দ্রনগর ও তিস্তা রেলস্টেশনের মধ্যবর্তী পথ ধরে পূর্বদিকে বড়বাড়রি আইরখামারে পৌঁছান। তাঁর সাথে দু’জন সহযোদ্ধা ছিলেন। ফেরার পথে রাত্রি হয়ে গেলে তিনি আইরখামারে সাময়িক অবস্থান নেন। যেভাবেই হোক তার অবস্থানের কথা দালালদের মাধ্যমে বড়বাড়ীর আশপাশের পাকিস্তানি ক্যাম্পগুলোতে পৌঁছে যায়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঐ খবরের ভিত্তিতে ৯ নভেম্বর ভোর বেলা আইরখামারসহ সমগ্র বড়বাড়ীর এলাকাটি ঘিরে ফেলে। সেদিন মুখতার ইলাহীর সহযোদ্ধা দু’জন পালিয়ে প্রাণে রক্ষা পেলেও মুখতার ইলাহী পাকিস্তানিদের হাতে ধৃত হয়ে শহিদ হন। তাঁকে আশ্রয় দেয়ার অপরাধে সেদিন সমগ্র এলাকার ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। ব্যাপক গণহত্যা করে পাকিস্তানিরা। ঐদিন পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণে পাঙ্গা লক্ষীপ্রিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বড়বাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কাশেমসহ ১১৯ জন নিরীহ বাঙালি শহিদ হন।
ঐদিনের আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে কুড়িগ্রাম মহকুমা শান্তি কমিটির সভাপতি পনির উদ্দিন আহমেদের পুত্র তাজুল ইসলাম চৌধুরীর সম্পৃক্ততা ছিল। তিনি পাক আর্মিকে খবর দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ আছে।
আইরখামার গণহত্যার শিকার কয়েকজন হিন্দু সম্প্রদায় ব্যক্তি শহিদ হন—
ক্র. | নাম | পিতা/স্বামীর নাম | ঠিকানা |
১ | শহিদ ধনঞ্জয় কুমার সিংহ | অজ্ঞাত | আইরখামার গণহত্যায় শহিদ |
২ | শহিদ উমেশ চন্দ্র দাস | অজ্ঞাত | আইরখামার গণহত্যায় শহিদ |
৩ | শহিদ দানিয়েল দাস | অজ্ঞাত খ্রিস্টান সম্প্রদায় | আইরখামার গণহত্যায় শহিদ |
৪ | শহিদ বনমালী রায় | অজ্ঞাত | আইরখামার গণহত্যায় শহিদ |
৫ | শহিদ নরহরি শীল | অজ্ঞাত | আইরখামার গণহত্যায় শহিদ |
৬ | শহিদ যজ্ঞেশ্বর | অজ্ঞাত | আইরখামার গণহত্যায় শহিদ |
৭ | শহিদ খোকা রায় | অজ্ঞাত | আইরখামার গণহত্যায় শহিদ |
৮ | শহিদ বিষ্ণু চরণ মোহন্ত | অজ্ঞাত | আইরখামার গণহত্যায় শহিদ |
(পূর্ণাঙ্গ তালিকা নয়)
সূত্র: উত্তর রণাঙ্গনে সংখ্যালঘু গণহত্যা ও নারী নির্যাতন– এসএম আব্রাহাম