You dont have javascript enabled! Please enable it! তারামন বিবি, বীরপ্রতীক - সংগ্রামের নোটবুক

তারামন বিবি বীরপ্রতীক

সোনাভরি নদীর জলে স্নাত কিশোরী তারামন বিবির বাড়ি ছিল রাজিবপুরের নদীবেষ্টিত শংকরমাধবপুর গ্রামে। সংসারে এতই দারিদ্র ছিল যে তাঁর বাবা বিয়ের বয়স হওয়ার আগেই পাশের গ্রামের মেছের আলী নামক এক পাগলের সাথে তাঁর বিয়ে দেন। এতে করে তিনি হাত বদল হয়ে পিতার কাছ থেকে স্বামীর হাতে পড়েন কিন্তু দারিদ্যের বদল হয় নাই। সেখানেও একই রকম দারিদ্র্যের কষাঘাত ছিল। এক সময় সেই পাগল স্বামীও নিরুদ্দেশ হলে তারামন বিবি আবার পিতার অভাবের সংসারে বোঝা হয়ে ফিরে আসেন। যুদ্ধ শুরু হলে সোনাভরি নদীর পূর্বপাড়ে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান গ্রহণ করেন। সেখানে ক্যাম্পের রান্নাবান্নার জন্য ঝি হিসেবে কাজ করেন তারামন বিবি। বরেণ্যযোদ্ধা মুহিব ছিলেন ঐ ক্যাম্পের কমান্ডার। তিনি তারামন বিবির ‍বুদ্ধিমত্তা দেখে রান্না ফাঁকে ফাঁকে তাঁকে অস্ত্র চালনা শেখান। তিনি বিভিন্ন সময়ে ভিক্ষুক, পাগলীর বেশ নিয়ে কখনোবা বাক ও শারীরিক প্রতিবন্ধির অভিনয় পাকিস্তানিদের ক্যাম্পের ভেতর থেকে শক্তি ও রসদের খবর আনতেন। যে তথ্যের উপর ভর করে মুক্তিযোদ্ধারা কোদালকাটি যুদ্ধে পাকিস্তানিদের পরাজিত করতে পেরেছিলেন। কোদালকাটি থেকে পাকিস্তানি সৈন্যরা যতবার নদী অতিক্রমের চেষ্টা করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা গুলির জবাব দিয়ে ততবার ‍পিছুতে বাধ্য করেছে তাদের। ঐ সকল প্রতিরোধ অপারেশন তারামন বিবিও অংশ নেন। কোদালকাটির যুদ্ধেও তিনি সশস্ত্র অংশগ্রহণ করেন। তাঁর অবদান ও সাহসিকতায় ‍মুগ্ধ হযে মুহিব কমান্ডার তাঁর বীরত্বের বর্ণনা দিয়ে উচ্চ মহলে সুপারিশ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সরকার বীরত্ব বিবেচনায় তাঁকে বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত করেন। তিনি খেতাব পেলেও বিষয়টি বহু বছর অগোচরেই ছিল। মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ও শিক্ষাবিদ বিমলকান্তি দে, বীরমুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আব্দুস সবুর ফারুকীর সহযোগিতায় তাঁকে খুঁজে বের করেন। তণ তিনি রোগ ও খাদ্যাভাবে প্রায় মরণাপন্ন ছিলেন। তারামন বিবির খবর পেয়ে জাতীয়ভাবে বিষয়টি তুলে ধরেন প্রখ্যাত সাংবাদিক পরিমল মজুমদার। এরপর দেশজুড়ে হৈচৈ পড়ে যায়। সরকার অবশেষে তাঁর হাতে তাঁর প্রাপ্য পদকটি হস্তান্তর করেন। তারামন বিবি বীরপ্রতীক একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা যিনি মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে রান্নাবান্না, গোয়েন্দাগিরি ও সম্মুখ সমরে বহুমুখী অবদান রেখেছিলেন।

সূত্র: উত্তর রণাঙ্গনে সংখ্যালঘু গণহত্যা ও নারী নির্যাতন- এসএম আব্রাহাম