সামাদ মেম্বারের চরের নির্যাতিত নারীদের কথা
১৯৭১ সালে সামাদ মেম্বারের চরে মুক্তিযোদ্ধারা প্রায়শই শক্ত অবস্থান নিতেন। চরটির মাঝ দিয়ে একটি নালা প্রবাহিত ছিল যা চরটিকে দু’ভাগে বিভক্ত করে। একদিকে ছিল বসতি অন্যদিকে শুধুই কাশবন। বসতিপূর্ণ এলাকাটি ছিল ব্যাপারী পাড়া। সেখানে থেকে বিপুল সংখ্যক বাঙালি যুবক মুক্তিবাহিনীর সাথে যুক্ত হয়ে রৌমারীসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন। সেখান থেকে চিলমারীতে পাকিস্তানিদের আক্রমণের জন্য সামাদ মেম্বারের চরে এসে প্রথমে অবস্থান নিতেন তাঁরা। পরে সেখান থেকে ব্রহ্মপুত্র পাড়ি দিয়ে চিলমারীর পাকিস্তানিদের বিভিন্ন অবস্থানে হামলা করে আবার ফিরে আসতেন। সুবেদার আফতাব বীরউত্তম ও বীরপ্রতীকসহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে সামাদ মেম্বারের চরটি যে কারণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আগস্ট এর দ্বিতীয়ার্ধে একদিন গানবোট নিয়ে পাকিস্তানিরা আকস্মিক সামাদ মেম্বারের চরে প্রবেশ করে সমগ্র চরটির ঘরবাড়িতে আগুন দেয়। তাদের ভয়ে নারী-পুরুষ-শিশুরা নালা পার হয়ে গহীন কাশবনে লুকিয়ে থাকেন। পাকিস্তানিরা নালা পার হয়ে কাশবনে প্রবেশ করার সাহস পায়নি। তবে তারা ব্যাপারী পাড়া থেকেই কাশবন লক্ষ্য করে বেপরোয়া গুলিবর্ষণ করে। সেই গুলিতে অনেকেই শহিদ হন। গুলির সময় দেড় বছরের শিশু সন্তান আবু তালেবকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছিলেন ঐ চরের মান্নার স্ত্রী মালেকা বেগম। পাকিস্তানিদের নিক্ষেপিত গুলি তাঁর বুকের কিছুটা মাংস ভেদ করে বুকে লেপ্টে থাকা শিশুপুত্র তালেবের বুক বিদীর্ণ করে। ফলে দুগ্ধপানরত আবু তালেব (দেড় বছর) মায়ের কোলেই শহিদ হন। ঐদিন আরও শহিদ হন নিঃসন্তান বৃদ্ধা জহিরন বেগম ওরফে ঘেগি বুড়িসহ অনেকেই। সেদিন পাকিস্তানিদের বুলেটে আহত হন দেলবর হোসেনের স্ত্রী প্রয়াত মহিরন বেওয়া, হোতা ব্যাপারীর স্ত্রী প্রয়াত খোতেজা বুড়ি, মাদবের স্ত্রী প্রয়াত হালিমা এবং মতলেব মিয়ার স্ত্রী আছফুল বেগম প্রমুখ। পরে তাঁদেরকে রমনা ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা পরে নির্বাচিত চেয়ারম্যান আলম মিয়া মানকার চরে নিয়ে যান। সে সময় এমএনএ সাদাকত হোসেন ছক্কু মিয়া আহতদের চিকিৎসা ছাড়াও খাদ্য ও পথ্যের ব্যবস্থা করে দেন। একাত্তরের সেই ক্ষত নিয়ে এখনো বেঁচে আছেন শহিদ আবু তালেবের মা মালেকা এবং আছফুল বেগম। এখনো কষ্টের জীবন মালেকাদের। না স্বীকৃতি পেয়েছেন শহিদ সন্তানের না দূর হয়েছে তাঁর নিজের দারিদ্রতা।
সূত্র: উত্তর রণাঙ্গনে সংখ্যালঘু গণহত্যা ও নারী নির্যাতন- এসএম আব্রাহাম