You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.15 | বাঁশগাড়ী গণহত্যা, নীলফামারী - সংগ্রামের নোটবুক

বাঁশগাড়ী গণহত্যা নীলফামারী

এই গণহত্যাটি যেমন নৃশংস ছিল তেমনি পাকিস্তানিদের অকৃতজ্ঞতারও প্রকাশ ছিল। ১৯৭১ এর ১৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সৈয়দপুর শহরে কারফিউ দিয়ে পাকিস্তানিরা ব্যাপক গণহত্যা ও লুটতরাজ করে। ওইদিন শহিদ আব্দুল ওয়াদুদসহ সকলকে হত্যা করে। ওই পরিবারের মোট ১০ জন সদস্যকে পাকিস্তানিরা হত্যা করে। যুদ্ধ শুরু হওয়ায় পাকিস্তানিদের জন্য সৈয়দপুর বিমানবন্দর নির্মাণ করা জরুরি হয়ে ওঠে। তারা দিনরাত বাঙালি ছাত্র-যুবকদের ধরে নিয়ে এসে জোর করে কাজ করাতো। এই সকল শ্রমিক একপ্রকার বন্দির মতন ছিলেন। কড়া নজরদারীর মধ্যে তাঁদের থাকতে হতো। এরকম একটি পরিবার আব্দুল ওয়াদুদের। আব্দুল ওয়াদুদ বয়সে বৃদ্ধ হলেও নিস্তার ছিল না তাকে তার পুত্র সহিদসহ নিয়মিত সেখানে মাটিকাটার কাজ করতে হতো। ১৫ এপ্রিল আব্দুল ওয়াদুদ কাজে যেতে পারেনি। পাকিস্তানিদের সন্দেহ হয়। তারা ভিন্ন কিছু আঁচ করে ১৫ এপ্রিল রাতে পাকিস্তানি বাহিনী স্থানীয় তিনজন দালালসহ আব্দুল ওয়াদুদের বাড়িতে আক্রমণ করে। তারা প্রথমেই আব্দুল ওয়াদুদকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে পাশেই মাটি চাপা দেয়। এদিকে নতুন বিমানবন্দর নির্মাণে জোর করে ধরে নিয়ে যাওয়া ওয়াদুদের পুত্র মোহাম্মদ সহিত ও নাতি আবু সাকের রাতে বাড়িতে ফিরে শুনতে পারেন ওয়াদুদের শহিদ হবার কথা। এরপর আশপাশের লোকজন তাঁদেরকেও আত্মগোপনের পরামর্শ দিলে তারা নিকটেই গা ঢাকা দেন। কিন্তু ওইদিন মধ্যরাতে তাঁদের বাড়িতে হঠাৎ করে মহাকান্নার রোল পড়ে যায়। চিৎকার শুনে মোহাম্মদ সহিদ ও আবু সাকের বাড়িতে দৌড়ে এসে দেখেন ওয়াদুদের স্ত্রী সহিদা খাতুন, পুত্রবধূ আসমা খাতুন, নাতনী সখিনা, ফিরোজা এবং নাতী রাশেদকে আঘাত করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নরপশুরা মোহাম্মদ সহিদকে দেখে তাঁকে বল্লম ছুঁড়ে মারে। বল্লমের আঘাতে সহিত মাটিতে পড়ে গেলে নরপশুরা তাঁর হাত পা কেটে ফেলে। তাতেও ক্ষান্ত হনা হয়ে সহিদকে সেখানে জবাই করে হত্যা করে। শুধু তাই নয় সহিদের কনিষ্ঠ কন্যা ১ বছরের অবোধ শিশু হাসিনাকে মাটিতে আঁচড়ে ফেলে দিয়ে পায়ের চাপায় নৃশংসভাবে হত্যা করে। সহিদের বড় মেয়ে নুরজাহানকে নরপশুরা পাশবিক নির্যাতনের পর জবাই করে হত্যা করে। নুরজাহান ছিলেন নববিবাহিতা। যুদ্ধের আগে ‍খুলনা থেকে বাপের বাড়ি সৈয়দপুরে এসেছিল সে। ঐ পরিবারের একমাত্র জীবিত সদস্য আব্দুর রশীদ বেঁচে যায়। সেদিন পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসরদের হত্যার শিকার হয়েছিলেন শহিদ ওয়াদুদের পরিবারের ১০ জন সদস্য। যা বাঁশগাড়ী গণহত্যা নামে পরিচিত। শহিদ আব্দুল ওয়াদুদ ও তাঁর পরিবারের শহিদ নারী সদস্যরা হলেন—

ক্র. শহিদের নাম পিতা/স্বামী ঠিকানা
শহিদ সহিদা খাতুন শহিদ আব্দুল ওয়াদুদ বাঁশগাড়ী, সৈয়দপুর
শহিদ আছমা খাতুন শহিদ মোহাম্মদ সহিদ বাঁশগাড়ী, সৈয়দপুর
শহিদ নুরজাহান বেগম শহিদ মোহাম্মদ সহিদ বাঁশগাড়ী, সৈয়দপুর, নীলফামারী
শহিদ সখিনা বেগম শহিদ মোহাম্মদ সহিদ বাঁশগাড়ী, সৈয়দপুর
শহিদ ফিরোজা বেগম শহিদ মোহাম্মদ সহিদ বাঁশগাড়ী, সৈয়দপুর
শহিদ হাসিনা বেগম শহিদ মোহাম্মদ সহিদ বাঁশগাড়ী, সৈয়দপুর

(পূর্ণাঙ্গ তালিকা নয়)

সূত্র: উত্তর রণাঙ্গনে সংখ্যালঘু গণহত্যা ও নারী নির্যাতন– এসএম আব্রাহাম