You dont have javascript enabled! Please enable it!

উলিপুরের হাতিয়া গণহত্যা

১৩ নভেম্বর কুড়িগ্রামের উলিপুর থানার হাতিয়ায় পাকবাহিনী সবচেয়ে ভয়াবহ ও পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে। পাকসেনারা স্থানীয় দালাল গোলাম মাহবুব চৌধুরীর সহযোগিতায়, রাজাকার, আলবদর ও আলশামসদের দেওয়া তথ্য মোতাবেক তিন দিক থেকে নিরীহ নিরস্ত্র অধিবাসীদেরকে আক্রমণ করে। মন্ডলের হাট দিয়ে অগ্রসরমান পাকবাহিনীকে প্রতিহত করতে গিয়ে শহিদ হন মুক্তিযোদ্ধা নওয়াব, আবুল কাশেম, মোন্তাজ আরী, হীতেন্দ্রনাথ ও গোলজার হোসেন। পাকবাহিনী সকল প্রতিরোধ ভেঙে দিয়ে হাতিয়ায় প্রবেশ করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোঁড়ে এবং বাড়ি-ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। সেদিন নির্দয় পাকবাহিনী হাতিয়ার দাগারকুটিতে ৭শ ৬৪ জন সাধারণ মানুষকে হত্যা করে। রাজাকার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধা সাহেব আলীকে ধরে পাক বাহিনীর হাতে তুলে দেয়। পাকবাহিনী তাঁকে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। এদিন মোগলবাসার নুরসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা ও নিরীহ বাঙালি শহিদ হন। বেসরকারি সাহায্য সংস্থা প্রশিকা মাঠ পর্যায়ে হাতিয়া গণহত্যার শিকার বাঙালিদের একটি তালিকা প্রণয়ন করে। সে তালিকায় প্রাপ্ত শহিদের নাম উদ্ধৃত করা হলো।

ক্র. শহিদের নাম পিতা/স্বামী ঠিকানা
শহিদ জমিলা খাতুন বাবর উদ্দীন বকসীপুর, উলিপুর
শহিদ ফজরন বিবি ফয়েজ উদ্দিন বকসীপুর, উলিপুর
শহিদ শান্ত রবিদাস ভবেশ রবি দাস বকসীপুর, উলিপুর
শহিদ মমেনা খাতুন অজ্ঞাত বকসীপুর, উলিপুর
শহিদ বিসাময়ী দাস অজ্ঞাত বকসীপুর, উলিপুর
শহিদ জোমা দাস অজ্ঞাত বকসীপুর, উলিপুর
শহিদ  শামুক বর্মণ মাধাই বর্মণ মাঝিপাড়া, উলিপুর
শহিদ মঙ্গল ঠাকুর অজ্ঞাত অনন্তপুর, উলিপুর
শহিদ কল্পনা বাসপো অজ্ঞাত অনন্তপুর, উলিপুর
১০ শহিদ ভবেশ বাসপো অজ্ঞাত অনন্তপুর, উলিপুর
১১ শহিদ মেরে বিবি ছমত সেখ অনন্তপুর, উলিপুর
১২ শহিদ নছিমন আজুদ্দি নীলকণ্ঠ, উলিপুর
১৩ শহিদ টেপরী বেগম মতি শেখ রামখানা, উলিপুর
১৪ শহিদ মোছাঃ মোনামাল করিম উল্যা হাতিয়া, উলিপুর
১৫ শহিদ শরফেন বেওয়া মৃত ধনাই মাঝের চর, উলিপুর
১৬ শহিদ মঙ্গল ঠাকুর দেবেন ঠাকুর বোনারপাড়া, গাইবান্ধা
১৭ শহিদ সালেয়া শেখ জলাদি শেখ হাতিয়া, উলিপুর
১৮ শহিদ মনিরা আবুল কাশেম চর বাগুয়া, উলিপুর
১৯ মেহেরজান এয়াজ উদ্দিন হাতিয়া, উলিপুর
২০ শরফেন বেওয়া অহদ্দি শেখ হাতিয়া, উলিপুর

(পূর্ণাঙ্গ তালিকা নয়)

স্বাধীনতা অব্যবহিত পর, ২ মে ১৯৭২ তারিখে উলিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ এম কমি ১৩ নভেম্বরের হাতিয়া গণহত্যার অভিযোগে অজ্ঞাতনামা পাকিস্তানি আর্মি ও দালালদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২ ও ৪৩৬ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। যা উলিপুর থানার ১ নং মামলা তারিখ ২/৫/১৯৭২ এবং জি আর ২৩৯/১৯৭২ হিসেবে ৮ মে ১৯৭২ তারিখে আদালতের তালিকুাভূক্ত হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৬ সালে মালাটিতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ কাশেম আলী মনগড়াভাবে চূড়ান্ত রিপোর্ট (ফাইনাল রিপোর্ট) দাখিল করেন। যার ‍চূড়ান্ত রিপোর্ট নং ৩৯ তারিখ ২০/৯/১৮৭৬। মামলাটি পুনঃতদন্ত না দিয়ে সে সময়ের মহকুমা প্রশাসক ও সাব-ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট মিঃ সাহাব উদ্দিন আহাম্মদ ৩০/১১/১৯৭৬ তারিখে চূড়ান্ত রিপোর্টটি গ্রহণ করেন। এই রিপোর্ট গ্রহণের মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক নিরীহ বাঙালি নারী, পুরুষ ও শিশু, হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষের হত্যার বিচারের দ্বারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে রুদ্ধ করার চেষ্টা হয়েছে। এটি বুঝতে অসুবিধে হয় না রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার হাত বদলের সাথে সাথে প্রভাবশালীদের প্রভাবে এই মামলার যবনিকা টানা হয়েছে।

পরের পাতায় ঐ মামলার জি আর রেজিস্টারের ছায়া কপি যুক্ত করা হয়েছে। ছায়া কপি গ্রহণে সহযোগিতা দিয়েছেন—কুড়িগ্রাম কোর্টের সাবেক কোট ইন্সপেক্টর অবসরপ্রাপ্ত এএসপি বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ।

সূত্র: উত্তর রণাঙ্গনে সংখ্যালঘু গণহত্যা ও নারী নির্যাতন– এসএম আব্রাহাম

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!