উলিপুর বধ্যভূমি
কুড়িগ্রাম জেলার বড় বধ্যভূমির একটি উলিপুর বধ্যভূমি। এর অবস্থান উলিপুর ডাকবাংলা ও রেলস্টেশন ঘেঁষে। পাকিস্তান সৈন্যরা উলিপুরে স্থায়ীভাবে আসে চব্বিশে এপ্রিল। তারা এসেই উলিপুর ডাকবাংলো, রেলস্টেশন ও সার্কেল অফিসারের কার্যালয় সংলগ্ন এলাকায় তাণ্ডব চালিয়ে থানা সদরে ঘাঁটি স্থাপন করে। উলিপুরে ডাকবাংলো ছিল তাদের হত্যা ও নারী নির্যাতন কেন্দ্র। পাকিস্তানিদের সহযোগী রাজাকার শাহাবুদ্দিন তার সঙ্গী রাজাকারদের সহায়তায় গ্রাম-গঞ্জ থেকে সুন্দরী মেয়েদের ধরে এনে পাকিস্তান আর্মিদের হাতে তুলে দিত। পাকিস্তানিরা ঐ সকল নিরীহ নারীর উপর পাশবিক লালসা চরিতার্থ করে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করত। স্বাধীনতার পর ডাকবাংলো ও রেলস্টেশনের আশপাশে আবিস্কৃত হয় আট/দশটি গণকবর যার দু’টিতে মেয়েদের চুল, চুড়ি ও অন্যান্য দ্রব্যাদি পাওয়া যায়।
কুড়িগ্রাম মহকুমার লালমনিরহাট থানা শহর ও আশেপাশে এলাকায় পাকবাহিনী সমগ্র যুদ্ধের সময় ব্যাপক গণহত্যা, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ ও নারী নির্যাতন চালায়। এ নির্যাতন ও গণহত্যা ৪ এপ্রিল পাকিস্তানি ট্রুপ লালমনিরহাটে প্রবেশের পর থেকেই শুরু হয়। ২৫ মার্চের পর মাকসুদা বেগম রেলওয়ে কলোনিতেই ছিলেন। একদিন গভীর রাতে পাকবাহিনী ঘরের দরজা ভেঙে হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে তাঁর স্বামী ও ছেলেকে ঘরের বাইরে নিয়ে নৃশংসভাবে জবাই করে হত্যা করে। ওই সময় অসংখ্য মহিলা পাকিস্তানি হায়েনাদের পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
পাকসেনরা লালমনিরহাটে বিহারীদের কাছ থেকে মেয়েদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করত। সেখানে রহমান ডাক্তার ও তাঁর ছেলেকে হত্যার পর তাঁর স্ত্রী ও চার যুবতী মেয়েকে একটা ঘরে তাঁদের তিনমাস আটকে রেখে নির্মমভাবে অত্যাচার চালায়। হাফেজ কমরুদ্দীন নামে এক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির পরিবারের মহিলাদেরকেও আটকে রেখে ধর্ষণ করে পাকবাহিনী। সমুন্দর খান নামে এক পাকিস্তানি আর্মি লালমনিরহাটে বহু নারী নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
কুড়িগ্রামে পাকিস্তানিদের লালসার শিকার অনেকেই। কিন্তু লজ্জার ভয়ে সে ক্ষতের কথা কেউই প্রকাশ করতে চান না। ১৯৭১ সালে পাক হিংস্র পশুদের নির্যাতনের শিকার এ রকম হতভাগ্য ১৬ বীরাঙ্গনা যারা সাহসের সাথে নিজেদের বীরাঙ্গনা হিসেবে দাবি করেন। এঁরা হলেন—
ক্র. | নাম | পিতার নাম | স্বামীর নাম | ঠিকানা |
১ | তরু বালা রায় | বাবুরাম বানিয়া | নিশিকান্ত রায় | পলাশবাড়ী, কুড়িগ্রাম |
২ | মৃত মমেনা খাতুন (ময়না) | মনছের আলী (টসকু) | মোঃ আঃ হাই | মুক্তারাম, কুড়িগ্রাম |
৩ | মোছাঃ সুরুজ্জান বেওয়া | শুকুর মামুদ | হানিফ উদ্দিন | কালে, কুড়িগ্রাম |
৪ | মোছাঃ দোলে বেওয়া | বাটাল মামুদ | বকত উল্লা | কালে, কুড়িগ্রাম |
৫ | মোছাঃ রহিমা খাতুন | হুরকা মামুদ | মোঃ আঃ হাই | কালে, কুড়িগ্রাম |
৬ | মোছাঃ আবিরণ বিবি | আজিমুদ্দিন | অজ্ঞাত | কালে, কুড়িগ্রাম |
৭ | মোছাঃ হাজেরা বেগম | রমজান আলী | চিনু মিয়া | নীলকণ্ঠ, কুড়িগ্রাম |
৮ | মোছাঃ ময়না বেগম | জোনাব আলী | কফিল উদ্দিন | পলাশবাড়ী, কুড়িগ্রাম |
৯ | বছিরন বেগম | ববিকয়ত উল্লা | মোঃ উমর আলী | নীলকণ্ঠ, কুড়িগ্রাম |
১০ | মোছাঃ আয়শা বেগম | আন্দারু মামুদ | মৃত পনির | নীলকণ্ঠ, কুড়িগ্রাম |
১১ | মোছাঃ খোতেজা বেগম | তছলিম উদ্দিন | মোঃ খবির উদ্দিন | কালে, কুড়িগ্রাম |
১২ | মোছাঃ রাহেনা বেগম | হুরকা মামুদ | লিয়াকত আলী | কালে, কুড়িগ্রাম |
১৩ | মোছাঃ খুকি বেগম | দেবার | মোঃ আছর উদ্দিন পটল | কালে, কুড়িগ্রাম |
১৪ | মোছাঃ গেন্দি বেওয়া | মৃত টসকু মামুদ | মৃত আছর উদ্দিন | কালে, কুড়িগ্রাম |
১৫ | মোছাঃ মেহেরজান | মৃত ইউসুফ উদ্দিন | মোঃ আব্দুল কাদের | কালে, কুড়িগ্রাম |
১৬ | মোছাঃ আছমা বেগম | মৃত আবুল কাশেম | মোঃ এমদাদুল হক | কালে, কুড়িগ্রাম |
(পূর্ণাঙ্গ তালিকা নয়)
এখনো অনেকেই স্বীকৃতি পাবার অপেক্ষায় আছেন-
সূত্র: উত্তর রণাঙ্গনে সংখ্যালঘু গণহত্যা ও নারী নির্যাতন- এসএম আব্রাহাম